আমফানের প্রথম আঘাত বাংলাদেশে হবে না!

হামিম উল কবির | May 20, 2020 03:41 am
আমফান

আমফান - সংগৃহীত

 

প্রবল ধ্বংসাত্মক ক্ষমতাসম্পন্ন ঘূর্ণিঝড় আমফানের গতি কিছুটা কমে গেছে। তবে এখনো যে গতিতে এগিয়ে আসছে তাতে এর ধ্বংসাত্মক ক্ষমতা মোটেও কমেনি। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৯টায় আমফানের কেন্দ্রের ৯০ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২২৫ কিলোমিটার। এটা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ২৪৫ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছিল কিন্তু বেলা ৩টায় ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্রের ৮৫ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২০০ কিলোমিটার যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ২২০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছিল। গতি যাই হোক এটা আজ বুধবার বিকেল থেকে সন্ধ্যার মধ্যে উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে খুলনা ও চট্টগ্রামের মধ্যবর্তী অঞ্চল দিয়ে বিকেল অথবা সন্ধ্যার মধ্যে উপকূল অতিক্রম করতে পারে।

গতকাল সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ আমফান চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৩০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৬০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ৬৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল।
এ দিকে কানাডা থেকে আবহাওয়া গবেষক মোস্তফা কামাল জানিয়েছেন, শক্তি উল্লেখযোগ্য হারে কমে আমফান ক্যাটেগরি ৩ মানের ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে। এর কেন্দ্রে বাতাসের একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ২০৫ কিলোমিটারে নেমে এসেছে। সর্বশেষ পূর্বাভাস অনুসারে আমফানের কেন্দ্র পশ্চিমবঙ্গের ওপর দিয়ে প্রবেশ করে ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশের দিকে ধাবিত হতে পারে।

স্থলভাগে প্রবেশের সময় আমফানের কেন্দ্রে বাতাসের গতিবেগ আরো কমে ক্যাটেগরি ২ মানের ঘূর্ণিঝড় হিসেবে উপকূলীয় এলাকায় আঘাত করবে বলে পূর্বাভাস মডেল নির্দেশ করছে। তখন হয়তো কেন্দ্রে বাতাসের একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ১৬০ থেকে ১৭০ কিলোমিটার থাকবে। আমফান যখন রাজশাহী জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হবে তখন এটি ক্যাটেগরি ১ মানের ঘূর্ণিঝড় হিসেবে থাকবে। তখন ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রে বাতাসের একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ১২০ থেকে ১৩০ কিলোমিটার থাকবে বলে আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল নির্দেশ করছে।

মংলা-পায়রায় ৭, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরে ৬ নম্বর বিপদ সঙ্কেত : মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৭ (সাত) নম্বর বিপদ সঙ্কেতে দেখিেেয় যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগরেহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৭ নম্বর বিপদ সঙ্কেতের আওতায় থাকবে।

চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৬ (ছয়) নম্বর বিপদ সঙ্কেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং তাদরে অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৬ (ছয়) নম্বর বিপদ সঙ্কেতের আওতায় থাকবে।
জলোচ্ছ্বাসের সতর্কতা : ঘূর্ণিঝড় এবং অমাবস্যার প্রভাবে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী ও চট্টগ্রাম এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর নি¤œাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫ থেকে ১০ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।

ঝড়ো হাওয়ার সতর্কতা : ঘূর্ণিঝড় অতিক্রম কালে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী ও চট্টগ্রাম জেলা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর উপর থেকে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণসহ ঘণ্টায় ১৪০ থেকে ১৬০ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।

জেলেদের জন্য সতর্কতা : উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যার পর থেকে দক্ষিণাঞ্চলের জেলা, মধ্যরাতের পর থেকে বৃহত্তর ফরিদপুর-মাদারীপুর জেলা এবং আজ ভোর হতে ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগের জেলাগুলোতে বৃষ্টি শুরু হতে পারে এবং তা পরবর্তী ২৪ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে। ঘূর্ণিঝড়ের ফলে সারা দেশে বৃষ্টিপাত হবে। তবে খুলনা, বরিশাল, রাজশাহী, রংপুর, ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগে ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

কক্সবাজারে সাগর উত্তাল : রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সেনা ও ১০ হাজার স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত

কক্সবাজার (দক্ষিণ) সংবাদদাতা জানান, উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় আমফান। কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৬ নম্বর বিপদ সঙ্কেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদফতর। আমফানের প্রভাবে সাগর উত্তাল রয়েছে। আমফানে ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় সাগরে অবস্থানরত ফিশিং ট্রলারগুলো উপকূলে ফিরে আসতে শুরু করেছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে। কক্সবাজার জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে চালু করা হয়েছে কন্ট্রোল রুম। সিপিপির ভলান্টিয়ার, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, স্বেচ্ছাসেবকরা প্রস্তুত রয়েছে। পর্যাপ্ত ত্রাণের ব্যবস্থার পাশাপাশি সব ধরনের প্রস্তুতি রাখা হয়েছে।

উপকূলের মানুষদের নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৫৭৩টি আশ্রয়কেন্দ্রের পাশাপাশি উপকূলের স্কুল-কলেজ। সিভিল সার্জনের নেতৃত্বে প্রয়োজনীয় ওষুধসহ মেডিক্যাল টিম প্রস্তুত রয়েছে। প্রস্তুত রয়েছে প্রয়োজনীয় যানবাহন। অপর দিকে উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় রামু ১০ পদাতিক ডিভিশনের সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ১০ হাজার ভলান্টিয়ার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে দুর্যোগ মোকাবেলার লক্ষ্যে সেনাবাহিনী ও ভলান্টিয়ারদের যৌথ মহড়া অনুষ্ঠিত হয়েছে।


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us