শান্তি আসবে আফগানিস্তানে?
আবদুল্লাহ ও গনি - সংগৃহীত
আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি ও তার প্রতিদ্বন্দ্বী আবদুল্লাহ আবদুল্লাহ কয়েক মাস ধরে চলা রাজনৈতিক সঙ্কট অবসানের লক্ষ্যে ক্ষমতার ভাগাভাগির একটি চুক্তিতে সই করেছেন। এর ফলে শান্তিপ্রক্রিয়া এগিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে গেল।
নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে নিজেকে প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেছিলেন আবদুল্লাহ। তাকে তালেবানের সাথে আলোচনার জন্য গঠিত হাই কাউন্সিল ফর ন্যাশনাল রিকনসিলিয়েশনের (এইচসিএনআর) চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ করা হয়েছে।
তালেবানের সাথে ১৯ বছরের যুদ্ধ অবসানের জন্য ২৯ ফেব্রুয়ারি সই করা চুক্তি সইয়ের পর তথাকথিত আন্তঃআফগান আলোচনা শুরু করতে ও আফগান নেতৃত্বে বিরাজমান বিভক্তি অবসান করতে চাপ দিয়ে আসছিল যুক্তরাষ্ট্র।
সমঝোতা অনুযায়ী আবদুল্লাহর গ্রুপ মন্ত্রিসভা ও অন্যান্য প্রাদেশিক গভর্নর পদে ৫০ ভাগ আসন পাবে।
গনি ও আবদুল্লাহ আপস করতে অস্বীকার করার পর যুক্তরাষ্ট্র এক বিলিয়ন ডলার সাহায্য হ্রাস করেছিলেন আফগানিস্তানে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেইও চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছেন। পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র মর্গ্যান ওরতাগাস এক বিবৃতিতে বলেন, মন্ত্রী পম্পেইও উল্লেখ করেছেন যে তিনি রাজনৈতিক অচলাবস্থার সময় সময় নষ্ট হওয়ায় দুঃখিত হয়েছেন।
২০১৪ সালের মতো এবারের নির্বাচনেও কারচুপির অভিযোগ ওঠেছিল। পরে উভয়েই নিজেকে বিজয়ী ঘোষণা করে ফেব্রুয়ারিতে একই দিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। ৫ বছর আগের নির্বাচনের পরও সমঝোতা হয়েছিল এবং তার জের ধরে আবদুল্লাহকে আফগানিস্তানের প্রধান নির্বাহী করা হয়েছিল।
রোববার গনি বলেন, আজ আফগানিস্তানের জন্য একটি ঐতিহাসিক দিন। কোনো আন্তর্জাতিক মধ্যস্ততাকারী ছাড়াই চুক্তি হয়েছে। উল্লেখ্য ২০১৪ সালে সমঝোতা হয়েছিল মার্কিন মধ্যস্ততায়।
আবদুল্লাহ বলেন, চুক্তিতে আরো অন্তর্ভুক্তমূলক, জবাবদিহিতামূলক ও যোগ্য প্রশাসন গঠনের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করা হয়েছে।
এইচসিএনআরের প্রধান হিসেবে আবদুল্লাহর সামনে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে। বিশেষ করে সহিংসতা বাড়ার প্রেক্ষাপটে প্রেসিডেন্ট আশরাফ তালেবান ও অন্যান্য সশস্ত্র গ্রুপের বিরুদ্দে সামরিক অভিযানের কথা ঘোষণা করেছেন।
আন্তঃআফগান শান্তি আলোচনায় তালেবানের সাথে মুখোমুখি হওয়ার সময় কাবুলে সমঝোতা থাকাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন আফগান সাংবাদিক সামি ইউসুফজাই।
তিনি আল জাজিরাকে বলেন, তালেবান এখনো সরকারি বাহিনী ও বেসামরিক লোকজনের ওপর হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।
আবদুল্লাহর দল মনে করছেন, ক্ষমতার ভাগাভাগির ফলে শান্তির সম্ভাবনা তৈরী হয়েছে। তারা এখন আলোচনার জন্য প্রয়োজনীয় বিষয়গুলোর দিকে নজর দিতে পারবেন।
তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, আবদুল্লাহর জন্য কাজটি সহজ হবে না। কারণ তাকে আফগানিস্তানের বিভক্ত রাজনৈতিক গ্রুপগুলোর মধ্যে সমঝোতা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তালেবানের সাথে মিলিত হওয়ার আগে নিজেদের মধ্যেই আগে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে করা শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের পথে আরেকটি সমস্যা হলো বন্দী বিনিময়। তালেবান চায়, আন্তঃআফগান আলোচনা শুরুর আগেই তাদের ৫,০০০ বন্দীর মুক্তি। গনি সরকার তাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
এখন পর্যন্ত আফগান সরকার ১,৫০০ তালেবান যোদ্ধাকে মুক্তি দিয়েছে, আর তালেবান ১০০ সরকারি বন্দীকে ছেড়েছে।
এই বিলম্বের কারণে তালেবান হতাশ হয়ে পড়েছে। তালেবানের মুখপাত্র সোহাইল শাহিন ধাপে ধাপে বন্দী মুক্তির গনির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন।
আল জাজিরা