যেভাবে ধাপে ধাপে তৈরী হলো সুপার সাইক্লোন আমফান
ঘূর্ণিঝড় - সংগৃহীত
১৬ মে সকাল ৬টায় ঘুর্ণিঝড় আমফানের গতিবেগ ছিল ঘন্টায় ৩৫ কিলোমিটার মাত্র। এরপর ক্রমান্বযে এর গতি বেড়ে যায়। তবে উল্লেখ করার মতো তেমন কিছু ছিল না। সেদিন দুপুর ১২টায় গতি ছিল ঘন্টায় ৪০ কিলোমিটার, সন্ধ্যায় ছিল ৪৫ কিলোমিটার, সেদিন রাত ১২টায় ছিল গতি বেড়ে ৬০ কিলোমিটারে উঠে। ১৭ মে সকাল ৬টায় গতি উঠে ঘন্টায় ৬৫ কিলোমিটার, ওই দিন দুপুর ১২টায় গতি ছিল ঘন্টায় ৭৫ কিলোমিটার, সন্ধ্যা ৬টায় গতিছিল ১১৫ কিলোমিটার, ১৭ মে রাত ১২টায় গতিছিল ঘন্টায় ১৩০ কিলোমিটার। ১৮ মে সকাল ৬টায় গতি ছিল ঘন্টায় ১৪০ কিলোমিটার। ওইদিন দুপুর ১২টায় গতিবেগ ছিল ঘন্টায় ২১০ কিলোমিটার। তখনই এটি সুপার সাইক্লোনে রূপ নেয় এবং এটি তখন ২২০ পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছিল। ১৮ মে সন্ধ্যা ৬টায় গতি বেড়ে দাঁড়ায় ঘন্টায় ২২৫ থেকে ২৪৫ কিলোমিটারের মধ্যে উঠানামা করছিল।
এদিকে কানাডা থেকে আবহাওয়া গবেষক মোস্তফা কামাল জানিয়েছেন, ১৯৯১ সালের পরে বঙ্গোপাসাগরে এত শক্তিশালি ঘুর্নিঝড় আর সৃষ্টি হয়ান। সিডর ও আইলার গতিও এতো ছিল না। সিডরের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘন্টায ২২০ কিলোমিটার।
আমেরিকার ইউনিভার্সিটি অব উইসকিনসন-ম্যাডিসন কর্তৃক পরিচালিত কো-অপারেটিভ ইনস্টিটিউট অব ম্যাটেরিওলজিকেল স্যাটেলাইট স্টাডিজের সর্বশেষ পূর্বাভাস অনুসারে ঘূর্ণিঝড় ‘আমফানকে ক্যাটাগরি ৫ মানের গতিবেগ সম্পন্ন ঘূর্ণিঝড় বলে অভিহিত করেছে। আগামী ১২ ঘণ্টায় গতিবেগ কিছুটা কমে ২৫০ কিলোমিটার হবার পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। তবে স্থল ভাগে আঘাত করার পূর্বে ঘূর্ণিঝড়টির বাতাসের গতিবেগ কিছুটা কমে ক্যাটেগরি ৩ মানের ঝড় হিসাবে উপকূলীয় এলাকায় আঘাত করতে পারে ওই একই পূর্বাভাসে বলা হয়েছে।
তবে কিছুটা সুসংবাদও রয়েছে। ঘুর্নিঝড়টি গতকাল রাত ৮টা পর্যন্ত যে অবস্থানে ছিল সেখান থেকে সামান্য দিক পরিবর্তন করে ভারতের দিকে কিছুটা সরে গেছে। তবে এখনই আশান্বিত হবার কিছু নাই কারণ এখনও তা স্থলভাগে আঘাত হানার আগে প্রায় ২ দিন অবশিষ্ট রয়েছে। ফলে যে কোনো সময় আবারও বাংলাদেশের দিকে ঘুরে আসতে পারে।
ঘুর্ণিঝড়টি বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১১টায় সুপার সাইক্লোন অর্থাৎ প্রবল গতি অর্জন করে। এটা আগামী বুধবার বাংলাদেশের সুন্দরবন ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দিঘা উপকূলের মাঝখান দিয়ে স্থলভাগে উঠতে পারে।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, গতকাল সোমবার সন্ধ্যা ৩টায় পশ্চিম মধ্যবঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণ বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থান করছিল। এটি বিকাল ৩ টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে এক হাজার ৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে এক হাজার ১৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৮৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ৯৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরো ঘণীভূত হয়ে উত্তর দিকে অগ্রসর হতে পারে এবং পরবর্তীতে দিক পরিবর্তন করে উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে খুলনা ও চট্টগ্রামের মধ্যবর্তী অঞ্চল দিয়ে মঙ্গলবার শেষরাত হতে বুধবার বিকাল থেকে সন্ধ্যার মধ্যে বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করতে পারে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৮৫ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘন্টায় ২১০ কিলোমিটার যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ২২০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটে সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে।