সুপারসনিক অস্ত্র তৈরীর প্রতিযোগিতা

জি. মুনীর | May 18, 2020 09:30 pm
সুপারসনিক অস্ত্র

সুপারসনিক অস্ত্র - সংগৃহীত

 

বর্তমানে পেন্টাগনের প্রায় এক ডজন কর্মসূচি রয়েছে, যেগুলোর আওতায় চলছে এমন সব পারমাণবিক সুপারসোনিক অস্ত্র উদ্ভাবন ও তৈরির কাজ, যেন চীন ও রাশিয়ার নতুন নতুন ধরনের অস্ত্রের মোকাবেলা করা যায়। ২০১৯ সালে ‘লকহিড মার্টিন’-এর সাথে পেন্টাগন স্বাক্ষর করেছে বহুশত কোটি ডলারের দুটি হাইপারসোনিক ওয়েপন কন্ট্রাক্ট।
সংবাদ সংস্থা তাস জানিয়েছে, মস্কো নিজের যুদ্ধজাহাজগুলোকে হাইপারসোনিক অস্ত্রসমৃদ্ধ এবং সেইসাথে এগুলোতে ক্ষেপণাস্ত্র সংযোজন করতে পারে। যদি এই পরিকল্পনা যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হয়, তবে রাশিয়ার জন্য এই পদক্ষেপ হয়ে উঠতে পারে বৈশ্বিক অস্ত্র প্রতিযোগিতায় একটি ‘গেম চেঞ্জার’। ভবিষ্যৎ যুক্তরাষ্ট্রের শৌর্যবীর্য মোকাবেলায়, বিশেষ করে এর আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র গুলি করে ভূপাতিত করায় এটি রাশিয়ার জন্য একটি সুযোগ সৃষ্টি করবে।

যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির ‘স্যাম নান স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স’ সহযোগী অধ্যাপক মার্গারেট কোসালের রয়েছে ভিন্নমত। সম্প্রতি এই মহিলা বলেছেন : ‘হাইপারসোনিক টেকনোলজি ‘গেম চেঞ্জার’ হবে না। কারণ, সাক্ষ্যপ্রমাণ নির্দেশ করে, এই প্রযুক্তি সবচেয়ে কার্যকর কৌশলগত নিরুৎসাহিতকরণ যন্ত্র হিসেবে পারমাণবিক অস্ত্রকে বিতাড়িত করবে না।’ এর অর্থ হচ্ছে, হাইপারসোনিক ওয়েপন যুদ্ধের খরচ বাড়িয়ে তুলতে পারে। কিন্তু প্রধান তিনটি পরাশক্তির একটিও এই অস্ত্রকে ব্যবহার করবে না প্রিয়েম্পটিভ স্ট্রাইকিং টুল বা আগে থেকেই আক্রমণের অস্ত্র হিসেবে। তবে তা তাদের পারমাণবিক প্রযুক্তি জোরদার করা অব্যাহত রাখবে। এসব দেশ হাইপারসোনিক ওয়েপন তৈরির সাথে জড়িত। এ দেশগুলো তাদের পারমাণবিক অস্ত্র সমৃদ্ধ না করার ব্যাপারে সম্মতি জানিয়ে একটি সঙ্কটকে পাল্টে দেয়ার কাজও করতে পারে।

আইএনএফ ট্রিটির ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, রাশিয়া তা ভঙ্গ করেছে এক দশক আগেই, যখন দেশটি বিভিন্ন স্থানে মোতায়েন করে ক্রুজ মিসাইল এবং এগুলো ইউরোপের গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যস্থলে আঘাত হানতে সক্ষম। অপর দিকে রাশিয়া বলেছে, এই ট্রিটি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাহার পারমাণবিক অস্ত্রসম্পর্কিত নিয়মনীতি ভঙ্গের বৃহত্তর ষড়যন্ত্রেরই অংশ। ২০১৯ সালের আগস্টে যুক্তরাষ্ট্র আইএনএফ-ট্রিটি-উত্তর সময়ে দেশটির প্রথম ‘বিজিএম-১০৯ টমাহক’ ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালায়। এটি বিজিএম-১০৯জি গ্রাইফর-এর একটি ভিন্ন সংস্করণ। বিষয়টি চীন ও রাশিয়ার ক্ষোভের কারণ ঘটায়। দেশ দু’টিই যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক শক্তিধর শত্রু দেশ। তখন দেশ দু’টি বলে, যুক্তরাষ্ট্র পরাশক্তিগুলোর মধ্যে অস্ত্র প্রতিযোগিতা উসকে দিচ্ছে।

এই আইএনএফ ট্রিটির মেয়াদ পার হওয়ার দুই সপ্তাহ আগে যুক্তরাষ্ট্র প্রচলিত ভূমিভিত্তিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালায়, যা এই ট্রিটিতে নিষিদ্ধ ছিল। আইএনএফ ট্রিটির কথা ছিল- ভূমিভিত্তিক পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র অপসারণ করা। সেই সাথে ইউরোপ থেকে ৫০০ কিলোমিটার থেকে সাড়ে পাঁচ হাজার কিলোমিটার পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র অপসারণ করা। এই ট্রিটির মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র এখন অবাধে এর ভূমিভিত্তিক মাঝারি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করা অব্যাহত রাখতে পারবে।

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ, পরীক্ষণ ও সাযুজ্যকরণ বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফ্র্যাঙ্ক রোজ বলেছেন, ‘আইএনএফ ট্রিটির অবসান হচ্ছে বৃহত্তর কাহিনীর সর্বশেষ ধাপ। এর অর্থ হচ্ছে, এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় কৌশলগত স্থিতিশীলতা অবকাঠামোর বিনাশ ঘটেছে।’

এর অর্থ হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়াকে উন্মুক্ত আবেদন জানাল একটি ভয়াবহ অস্ত্র প্রতিযোগিতার জন্য। এভাবে এক-এক করে বিদায় নিচ্ছে অস্ত্রনিরোধ কিংবা অস্ত্র নিয়ন্ত্রণবিষয়ক চুক্তিগুলো। আর চীন, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র নামছে উন্মুক্ত অস্ত্র প্রতিযোগিতায়। এর জন্য অনেকেই দায়ী করছেন ট্রাম্প প্রশাসনকে। ইরানের সাথে পারমাণবিক চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেয়ার মধ্য দিয়ে ট্রাম্প প্রশাসন শুরু করেছিল এই বিনাশী কাজটি। এরপর এক-এক করে বিভিন্ন চুক্তি অকার্যকর করে দিয়েছে। এরপর ট্রাম্প প্রশাসন এখন একে-ওকে ডাকা ডাকি করছে নতুন কোনো চুক্তি করতে। জানি না, এই পাগলামোর শেষ কোথায়?


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us