ক্রমাগত শক্তিশালী বাড়াচ্ছে, কখন আছড়ে পড়বে আমফান?
ক্রমাগত শক্তিশালী বাড়াচ্ছে, কখন আছড়ে পড়বে আমফান? - সংগৃহীত
শক্তিশালী থেকে অতি শক্তিশালী হচ্ছে ঘূর্ণিঝড় আমপান। এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের দিঘা থেকে বাংলাদেশের হাতিয়া দ্বীপের মধ্যবর্তী কোনো এলাকায় আমপান আছড়ে পড়তে পারে। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আমপানের শক্তি কয়েকগুণ বাড়বে। আবহাওয়া বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, আমফান ‘সুপার সাইক্লোন স্টর্ম’-এর চেহারা নেবে। এই অতি শক্তিশালী ঘূ্র্ণিঝড়ের ঘূর্ণনের গতিবেগ হতে পারে সর্বোচ্চ ১৮০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা।
আনন্দবাজার পত্রিকার খবরে বলা হয়, আমফানের ঝাপটায় সব থেকে বেশি ক্ষতক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে, দিঘা, মন্দারমনি, সুন্দরবনের সমুদ্র সৈকত এবং উপকূলবর্তী এলাকায়। ঝড়ের তাণ্ডবে কাঁচা বাড়ির ভেঙে পড়তে পারে। গাছ, বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। প্রাণহানির ঘটনা যাতে না ঘটে,তার আগাম সতর্কতা হিসেবে উপকূলের বাসিন্দাদের নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। রাজ্য প্রশাসন গোটা পরিস্থিতির উপরে নজর রেখেছে। উপকূলবর্তী এলাকাগুলিতে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।
ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে চাষেরও। শনিবার এ বিষয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার সমন্বয় রেখে চলছে রাজ্যের সঙ্গে। করোনা আবহের মধ্যে এই দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবিলায় মধ্যে ‘সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিং’-এর বিষয়টি মাথায় রাখা হচ্ছে। রাজ্যের পক্ষ থেকে উপকূলের জেলাগুলোর প্রশাসনকে তৈরি থাকতে বলা হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গের আলিপুর আবহাওয়া দফতর সূত্রে খবর, পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগরের উপরে অবস্থান করছে আমপান। এর অভিমুখ রয়েছে উত্তর দিকে। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বাঁক নিয়ে তা উত্তর-পূর্ব দিকে এগোতে শুরু করবে। এখন আমফান পারাদ্বীপ থেকে ৭৮০ কিলোমিটার দূরে রয়েছে। দিঘা থেকে এর দূরত্ব ৯৩০ কিলোমিটার, বাংলাদেশের খেপুপাড়া থাকে ১০৫০ কিমি। বুধবার দুপুরে প্রায় ১৫৫ থেকে ১৬৫ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা ঘূর্ণনের গতিবেগে আছড়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এমনকি, এর ঘূর্ণনের গতি উঠতে পারে ১৮৫ কিলোমিটারের আশপাশে। এমন গতিতে যদি এ রাজ্যের উপরে স্থলভাগে আছড়ে পড়ে আমপান, তা হলে ভয়ঙ্করভাবে ক্ষতির সম্ভাবনাও থাকছে।
আমপানের প্রভাবে কলকাতা, দুই মেদিনীপুর, দুই ২৪ পরগনা, হুগলি, নদিয়াতে প্রবল বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে মঙ্গল এবং বুধবার। কলকাতাতেও ঝড়ের ঝাপটা পড়তে পারে। সে জন্য কলকাতা পুরসভাও সমস্ত রকমের ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে। সতর্ক করা হয়েছে পুর কর্মীদের। সচেতনতা বাড়াতে দিঘা, সুন্দরবনে মাইকিং করা হচ্ছে। টহল দিচ্ছে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী।
আমফান কী ক্ষতি করতে পারে?
বিবিসির খবরে আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ বলছেন, ঘূর্ণিঝড় আমফান যখন আঘাত হানবে তা অতি প্রবল হওয়ার যথেষ্ট আশঙ্কা রয়েছে।
পূর্বের অভিজ্ঞতা বলে, এ ধরণের ঝড়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ যথেষ্ট হয়।
ঘরবাড়ি, গাছ-পালার ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যাওয়া, বিদ্যুৎ সরবরাহ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার মতো অবস্থা তৈরি হতে পারে।
তবে বাংলাদেশের কোন কোন জেলার উপর দিয়ে এই ঘূর্ণিঝড়টি বয়ে যেতে পারে সে বিষয়ে এখনো নির্দিষ্ট করে কিছু বলা যাচ্ছে না বলে জানাচ্ছেন সামছুদ্দিন আহমেদ।
তবে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক মি. ওয়াজেদ বলছেন, এখনো পর্যন্ত পাওয়া তথ্য থেকে ধারণা করা যাচ্ছে যে, ঘূর্ণিঝড়টি হয়তো দেশের উত্তর-পশ্চিম দিক অর্থাৎ সাতক্ষীরা ও খুলনা অঞ্চলে আঘাত হানবে।
তিনি বলেন, আঘাত হানার সময় যদি ঘূর্ণিঝড়টির বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১৭০ কিলোমিটার বা তার উপরে থাকে তার মানে হচ্ছে এটা বড় ধরণের একটা ঘূর্ণিঝড়। এ ক্ষেত্রে স্থানীয় লোকজনকে সাইক্লোন শেল্টারে আশ্রয় নিতে বলা হয়।
তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে দুই ধরণের ক্ষতি হয়। একটা হচ্ছে প্রাণহানি। আরেকটা হচ্ছে ঘরবাড়ি ও গবাদিপশুর ক্ষতি।
অতীতের বেশ কয়েকটি ঘূর্ণিঝড়ের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশে এখন প্রাণহানির সংখ্যা কমে গেছে।
১৯৭০ সালের ভোলা সাইক্লোনে প্রায় ৫ লাখ মানুষ মারা গেছে। ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিলের ঘূর্ণিঝড়ে ১ লাখ ৩৮ হাজার মানুষ মারা যায়। প্রায় একই ধরণের আরেকটি ঘূর্ণিঝড় ছিল ২০০৭ সালে সিডর। সেখানে মানুষের মৃত্যু হার তুলনামূলক কম ছিল। ওই ঘূর্ণিঝড়ে ৩ হাজার ৪০৬ জন মারা গিয়েছিল।
এরপরে বাংলাদেশে আরো বেশ কয়েকটি ঘূর্ণিঝড় হয়েছে। ২০০৯ সালের ২৫শে মে আইলার আঘাতে মারা যায় ১৯০জন। ২০১৩ সালে মহাসেনে মারা যায় ১৮ জন।
‘এরপরে আমাদের দেশে মৃত্যুর সংখ্যা কখনোই দুই সংখ্যার বেশি হয়নি এবং সেটি ২৫ এর উপরে যায়নি,’ বলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক।
অন্যদিকে আম্পানে বাতাসের গতিবেগ বেশি থাকলে বাড়ি-ঘর এবং গাছপালা পড়ে যাবে এবং এতেও ক্ষতি হতে পারে।