করোনায় মৃত্যু : কী বলতে চান ট্রাম্প?
ট্রাম্প - সংগৃহীত
মৃতের সংখ্যা নিশ্চিতভাবেই হৃদয়বিদারক : ৮৫ হাজারের বেশি আমেরিকান মারা গেছে, সংক্রমিত হয়েছে ১.৪ মিলিয়নের বেশি। তবে ট্রাম্প প্রশাসনে থাকা কয়েকজনসহ অনেক গণস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, কোভিড-১৯-এ মৃত্যু ও সংক্রমণের সংখ্যাটি অনেক কম দেখানো হচ্ছে।
মঙ্গলবার সিনেট কমিটির সামনে হাজির হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ সংক্রমণ রোগ বিশেষজ্ঞ ও প্রেসিডেন্টের করোনাভাইরাস টাস্ক ফোসের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ডা. অ্যান্থনি ফুসি আইনপ্রণেতাদের বলেন যে সরকারিভাবে যে সংখ্যাটি দেয়া হচ্ছে, সত্যিকারের মৃত্যুর সংখ্যা নিশ্চিতভাবেই অনেক বেশি। (এই শুনানিটি হয় ভার্চুয়ালি। কারণ ভাইরাসটির সম্ভাব্য আক্রমণের শিকার হয়ে ডা. ফুসি, টাস্ক ফোর্সের অপর দুই সদস্য ও কমিটির চেয়ারম্যান সিনেটর লামার আলেকজান্ডারও সেলফ কোয়ারেন্টিনে ছিলেন।)
এটি সত্ত্বেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় প্রশাসন কর্মকর্তা দৃশ্যত সন্দেহ করছেন যে কোভিড-১৯-এ মৃত্যুর সংখ্যাটি অনেক বাড়িয়ে বলা হয়েছে। চলতি সপ্তাহে অক্সিয়সের প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, সেন্টার্স ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের তথ্য নিয়ে বিতর্ক চলছে। একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা দি টাইমসকে বলেন, তথ্য সাম্যতার ইস্যুর বৃহত্তর পর্যালোচনার অংশ হিসেবে মৃত্যুর সংখ্যা পুনঃমূল্যায়ন করছে টাস্ক ফোর্স।
হোয়াইট হাউসকে এই পর্যালোচনা ও যেকোনো ধরনের চাপা থাকা উদ্বেগের ব্যাপারে স্বচ্ছ হওয়া প্রয়োজন। এই রোগটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা ও যারা মারা গেছে, তাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য এই রোগে কতজন আমেরিকান মারা গেছে, সেটা জানা খুবই দরকার। মহামারিটির অনেক বিষয়ের মতো মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে প্রশ্নও জনসাধারণের মধ্যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। আর প্রেসিডেন্ট এই বিভ্রান্তি অবসানের জন্য কোনো কিছুই করছেন না।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে একবার প্রকাশ্যেসহ কোভিড-১৯-এ মারা যাওয়াদের সংখ্যা নিয়ে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন ট্রাম্প। ১৫ এপ্রিল নিউজ ব্রিফিংকালে তিনি বলেন যে নিউ ইয়র্ক সিটি অন্যান্য রোগে মারা যাওয়াদেরও কোভিডে মৃত্যু হিসেবে অভিহিত করছে। তিনি বলেন, আজ সকালে আমি দেখলাম নিউ ইয়র্ক তিন হাজার মৃত্যু যোগ করেছে এই কারণে যে তারা মারা গেছে। হৃদরোগে মারা যাওয়ার বদলে উল্লেখ করা হয়েছে যে তারা এর কারণে সৃষ্ট হৃদরোগে মারা গেছে।
আরো কঠোরভাবে ২৬ এপ্রিল এক রক্ষণশীল ভাষ্যকারের টুইটকে রিটুইট করেন। ওই ভাষ্যকার বলেন যে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে তিনটি ব্যর্থ অভ্যুত্থান পরিচালনাকারী কৃষ্ণ রাজনৈতিক শক্তিই এখন মহামারির তথ্য বিকৃত করছে। ওই দিনই প্রেসিডেন্ট সরকারি হিসাবের যথার্থতার পক্ষে কথা বলেন।
কয়েকটি কারণে এই সমস্যার সৃষ্টি হয়ে থাকতে পারে। প্রথমে কোভিড-১৯ মৃত্যু হিসাব করা হতো ভাইরাসে পজিটিভ হওয়ার কঠোর নিয়মকানুনের ভিত্তিতে। কিন্তু পর্যাপ্ত পরীক্ষা না হওয়া, চিকিৎসকের কাছে না যেতে পেরে বাসাতেই মারা যাওয়া ইত্যাদি কারণে শিথিলতা আনতে হয়েছে। এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকেই অনেক রাজ্য কোভিড-১৯ সন্দেহে মৃত্যুর কথা বলতে থাকে।
এই প্রেক্ষাপটে নিউ ইয়র্ক যখন মৃতের সংখ্যা এক লাফে বাড়িয়ে ৩,৭০০ করে, তখন হতাশ হন ট্রাম্প।
ট্রাম্প অবশ্যই এই প্রথম অনাকাঙ্ক্ষিত সংখ্যাকে চ্যালেঞ্জ করলেন, এমন নয়। ২০১৭ সালে পুয়েরতো রিকোকে আঘাত হানা মারাত্মক হ্যারিকেন মারিয়ার আঘাতে প্রথমে বলা হয়েছিল যে মারা গেছে দুই অঙ্কের সদস্য। পরে আরো ব্যাপকভিত্তিক হিসেবে মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় তিন হাজার বলে জানানো হয়। ট্রাম্প এই হিসাব প্রত্যাখ্যান করে বলেন যে তাকে অস্বস্তিতে ফেলার চক্রান্ত হিসেবে এই তথ্য বানানো হয়েছে।
প্রশাসনের আরো অনেক কর্মকর্তাও বলছেন যে মৃত্যুর হার অনেক বাড়িয়ে বলা হচ্ছে। তাদের কারো কারো মতে, এই বৃদ্ধি ২৫ ভাগ পর্যন্ত বেশি।
প্রেসিডেন্ট এখন রাজ্যগুলোকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিধিনিষেধ শিথিল করতে ও অর্থনীতি আবার চালু করতে বলছেন। এই প্রেক্ষঅপটে মহামারিটির ব্যাপারে নির্ভুল তথ্য আরো বেশি প্রয়োজন। হোয়াইট হাউস যদি মনে করে, মৃত্যুর সংখ্যা অনেক বেশি এবং এর সমন্বয় সাধন করা প্রয়োজন, তবে জনগণকে ব্যাখ্যা দিয়ে বোঝাতে হবে যে কেন দেশের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের দেয়া হিসাবের বিপরীত অবস্থান গ্রহণ করতে হচ্ছে।
নিউ ইয়র্ক টাইমস