হংকং থেকে হাঙরের পাখনাগুলো যাচ্ছিল চীনে!
হংকং থেকে হাঙরের পাখনাগুলো যাচ্ছিল চীনে! - সংগৃহীত
করোনাভাইরাস কোথা থেকে এসেছে? চীনের উহান প্রদেশের গবেষণাগার নাকি সেখানকার বাজারে খাবারের জন্য বিক্রি হওয়া বাদুড় থেকে। এই বিতর্ক এখনো চলছে। তবে, এই ঘটনায় উহানের বাজারে মানুষের খাওয়ার জন্য বন্যপ্রাণীসহ বিভিন্ন পশুর গোশত বিক্রির ছবি স্পষ্ট হয়ে গেছে। যা নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠায় চীনা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এরকম প্রাণীদের গোশত বিক্রির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। তাতে কী পরিস্থিতির বদল হয়েছে? করোনার জেরে গোটা বিশ্বে এখন লকডাউন শুরু হয়েছে। কিন্তু যেখানে প্রথম এই রোগের প্রকোপ থাবা বসিয়েছিল, সেই চীনের উহানে এখন লকডাউন উঠে গেছে। নাগরিক জীবন ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে। সম্প্রতি হংকংয়ে যা হলো, তাতে বিভিন্ন মহলের দাবি, কোনো বদল হয়নি চীন আছে চীনের জায়গাতেই।
চলতি মাসে হংকং সীমান্তে ঢোকার আগে দু’বার দুটি কন্টেনারকে আটক করা হয়। সেগুলোতে যা ছিল, তা চীনে যাওয়ার কথা ছিল বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। হংকংয়ের শুল্ক বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ওই দুটি কন্টেনারে ১৩ টন করে মোট ২৬ টন হাঙর মাছের পাখনা উদ্ধার করা হয়েছে। হংকং, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশ এবং চীনে হাঙর মাছের পাখনা দিয়ে তৈরি স্যুপ খেতে পছন্দ করে সাধারণ মানুষ থেকে পর্যটক সকলেই। তাই এই পরিমাণ বিপুল হাঙরের পাখনা উদ্ধার হওয়ায় প্রশাসনিক মহলে শোরগোল হচ্ছে, এগুলোও কী তাহলে খাওয়ার জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল? যদিও এবিষয়ে চীনা প্রশাসন বা সে’দেশের সরকারি সংবাদ সংস্থার পক্ষ থেকে কিছু জানানো হয়নি।
তবে হংকং শুল্ক দপ্তর জানিয়েছে, তারা বাজেয়াপ্ত সব সামগ্রী বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞদের দিয়ে দেখিয়েছে। তার মধ্যে ৩১ হাজারটি পাখনা থ্রেসার শার্কের এবং ৭৫০০টি সিল্কি শার্ক ছিল। যা আন্তর্জাতিক বন্যপ্রাণী পর্যবেষকদের মতে, বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তদন্তকারীরা জানতে পেরেছে ইকুয়েডর থেকে জাহাজে করে ওই মাল এসেছে। লকডাউন শিথিল হলে তা হংকং হয়ে চীনে যাওয়ার কথা ছিল। তার আগেই সব বাজেয়াপ্ত হয়েছে। এই বিপুল পরিমাণ হাঙরের পাখনার চোরাবাজারে দাম প্রায় ৮.৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
প্রায় ৭০০’র বেশি নাইলন ব্যাগে করে এগুলো পাচার করা হচ্ছিল। হংকংয়ে এখন পর্যন্ত সর্বাধিক ২০১৯ সালে ১২ টন হাঙরের পাখনা উদ্ধার হয়। এবছর মাত্র দুটি কন্টেনারে তার থেকে বেশি উদ্ধার হওয়ায়, উদ্বিগ্ন বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞরাও। তাদের মতে, চীনে চাহিদা বৃদ্ধির কারণেও এই পরিমান হাঙরের পাখনা আসছিল।
বিশেষ সূত্রের খবর, যে কন্টেনারে সেগুলো পাচার করা হচ্ছিল, সেখানে ইংরেজিতে লেখার কথা থাকলেও, স্প্যানিসে “Pescado Seco” লেখা ছিল। অর্থাৎ ‘শুকনো মাছ’। এটা দেখেই সন্দহ হওয়াতে ভালোভাবে তল্লাশি শুরু করেন শুল্ক বিভাগের অফিসার। তখনই এই বিপুল পরিমাণের হাঙরের পাখনা উদ্ধার হয়। যদিও এই ঘটনার পিছনে মূল হাত কার রয়েছে, তা তদন্ত করে দেখছেন শুল্ক বিভাগের অফিসাররা।
এদিকে, এই ঘটনার কয়েক দিন পর মেক্সিকোতে প্রায় ১৫ হাজারেরও বেশি বিরল কচ্ছপ উদ্ধার হয়। সেখানেও জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, কচ্ছপগুলো চীনে পাচার করা হচ্ছিল। এই ঘটনাগুলো স্পষ্ট করে দেয়, চীনে ফের বন্যপ্রাণী বা অন্যান্য কোনো প্রাণীর দেহাংশ বিক্রির চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে। যদিও এই বিষয়ে কর্মরত চীনের একটি সংস্থার দাবি, তাদের দেশে হাঙরের স্যুপ খাওয়ার প্রচলন একেবারে কমে গেছে। এখন হংকং ছাড়া ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড এবং ভিয়েতনামে এই হাঙরের পাখনার স্যুপ খাওয়ার প্রচলন খুব বেড়েছে।
সূত্র : বর্তমান