লাদাখে চীনা বাহিনীর সাথে হাতাহাতি, শক্তি বাড়াচ্ছে ভারত
লাদাখে চীনা বাহিনীর সাথে হাতাহাতি, শক্তি বাড়াচ্ছে ভারত - সংগৃহীত
সিকিমের নাকু লায় ভারতীয় ও চীনা সেনাবাহিনীর মধ্যে হাতাহাতির রেশ কাটেনি এখনো। এর মধ্যেই উত্তেজনা ছড়াল লাদাখ সীমান্তে। নয়াদিল্লির হাতে যে তথ্য এসেছে তাতে ইঙ্গিত মিলেছে, লাদাখের ভারত-চীন সীমান্ত বরাবর নির্মাণকাজ শুরু করেছে চীনা বাহিনী। তাই ওই এলাকার সীমান্ত আরো সুরক্ষিত করছে ভারত। ওই এলাকায় মোতায়েন থাকা ভারতীয় সেনাদলের শক্তিও আরো বাড়ানো হচ্ছে। ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকায় এ খবর প্রকাশিত হয়েছে।
পত্রিকাটি জানায়, সপ্তাহ খানেক আগেই ভারত ও চীন সীমান্তে উত্তর সিকিমের নাকু লায় হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়ে দুই দেশের সেনা। পাঁচ হাজার ফুট উচ্চতায় অবস্থিত ওই সীমান্তে দু’পক্ষের প্রায় ১৫০ সেনার মধ্যে সঙ্ঘর্ষ হয়। উভয় দলেরই কয়েক জন জখন হন।
আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে বলা হয় যে জানা গেছে, লাদাখে গালওয়ান নদীর পাড়ে একের পর এক তাঁবু স্থাপন করছে চীনা বাহিনী। লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল (এলএসি) বরাবর নিজেদের শক্তিও বাড়িয়ে চলেছে বেইজিং। এমন পরিস্থিতিতে ওই এলাকার উত্তেজনা বাড়ছে। তাই ওই সীমান্তে পাল্টা শক্তি বাড়াচ্ছে ভারতীয় সেনাও। এক সরকারি কর্মকর্তার কথায়, ‘গত কয়েক দিন ধরেই এলএসি বরাবর সেনা সংখ্যা বাড়াচ্ছে চীন। তাই আমরাও শক্তিবৃদ্ধি করতে বাধ্য হয়েছি।’ তার মতে, ‘এটা সাধারণ ব্যাপার। কিন্তু গত এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে যেহেতু এমন ঘটছে তাই আমরাও শক্তি বাড়াচ্ছি।’
নাকু লার ঘটনার পর, সেনা প্রধান এমএম নারায়ণের বলেন, দৈনিক অন্তত ১০টি জায়গায় দু’পক্ষের বৈঠক হচ্ছে এবং সেই জায়গাগুলোতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু দু-একটি জায়গায় যেখানে কর্মকর্তা বদল হচ্ছে সেখানে এমন উত্তেজনার পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে।
শুধু গালওয়ান উপত্যকাই নয়, পূর্ব লাদাখের ডেমচকে ভারত-চীন সীমান্তে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। লাদাখের এই পরিস্থিতি কত দূর গড়ায় সে দিকে আপাতত নজর রাখছে নয়াদিল্লি। এক কর্মকর্তার কথায়, এলএসি নিয়ে প্রায়শই দু’পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বাধে। তবে এই বিষয়গুলি মিটেও যায়। তবে সরকারি আধিকারিকদের অন্য একটি অংশের অবশ্য মত, গত এক সপ্তাহের ভিতর নাকু লা ও লাদাখে ভারত-চীন সীমান্তে উত্তেজনা বৃদ্ধি মোটেই কাকতালীয় নয়। আমেরিকার সঙ্গে ভারতের ঘনিষ্ঠতা বাড়ার ফলেই ভারত মহাসাগরে আগ্রাসন বাড়াচ্ছে বেইজিং, যা ক্রমশই নয়াদিল্লির কাছে উদ্বেগজনক হয়ে উঠছে।
নেপালের দাবির পেছনে চীনের ইন্ধন!
এদিকে ভারতের আরেকটি সংবাদমাধ্যম বর্তমানের খবরে বলা হয় অন্যের কথায় ভারতের রাস্তা তৈরির কাজে আপত্তি জানাচ্ছে নেপাল। শুক্রবার এই মন্তব্য করলেন সেনাপ্রধান জেনারেল এম এম নারাভানে। সেনাপ্রধানের ইঙ্গিত পরোক্ষে চীনের দিকেই। অর্থাৎ, নেপালকে সামনে রেখে পিছন থেকে কলকাঠি নাড়ছে বেইজিং। পাশাপাশি সীমান্তে চীনের সঙ্গে সংঘাতের ইস্যুতে নারাভানে বলেন, ‘প্রতিটি ঘটনা নিয়ে আলাদাভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’ প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত একটি থিঙ্ক ট্যাঙ্ক সংস্থার এক আলোচনাসভায় এদিন ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অংশ নেন সেনাপ্রধান।
উত্তরাখণ্ডের নিপুলেখ পাসের সংযোগকারী রাস্তা নির্মাণের কাজে সম্প্রতি আপত্তি জানিয়েছে নেপাল। এপ্রসঙ্গে সেনাপ্রধান বলেন, ‘কালী নদীর পূর্বের এলাকা নেপালের অংশ। নদীর পশ্চিম দিকে আমরা রাস্তা বানাচ্ছি। আমি জানি না ওরা কেন আপত্তি তুলছে। ওরা সম্ভবত অন্য কারও হয়ে আপত্তি জানাচ্ছে। তার যথেষ্ট সম্ভাবনাও রয়েছে।’ নারাভানে আরও বলেন, ‘দেশের উত্তর ও পশ্চিম সীমান্তে দ্বিমুখী যুদ্ধ পরিস্থিতির জন্য সজাগ থাকতে হবে ভারতকে।’ তবে, সংঘাতের প্রতিটি ঘটনাই যে সেই পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যেতে পারে, তা মনে করেন না সেনাপ্রধান। অল্প বয়সিদের তিন বছরের জন্য সেনাবাহিনীতে নিয়োগের প্রস্তাব নিয়েও এদিন মন্তব্য করেন নারাভানে।
তিনি বলেন, ‘স্কুল ও কলেজ পড়ুয়াদের কাছ থেকে মেলা অভিমতের ভিত্তিতেই এই নয়া পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।’ উল্লেখ্য, করোনা সঙ্কটের প্রেক্ষিতে সেনাবাহিনীকে ২০ শতাংশ খরচ কমাতে বলা হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে।