করোনায় নারী-পুরুষ বৈষম্য : বিশ্বজুড়ে আলোচনা
করোনায় নারী-পুরুষ বৈষম্য : বিশ্বজুড়ে আলোচনা - সংগৃহীত
নারীরা কি কোভিড ১৯-এ কম আক্রান্ত হচ্ছেন? মৃত্যুহারও কি কম? সম্প্রতি বেশ কিছু সমীক্ষার রিপোর্ট প্রকাশিত হওয়ার পর এ নিয়ে তামাম বিশ্বে আলোচনার ঝড় বইছে। মার্কিন মুলুকের খবর, নিউইয়র্কে করোনায় মৃতদের ৬১ শতাংশই পুরুষ! ইতালির পাবলিক হেলথ রিসার্চ এজেন্সির তথ্য বলছে, সেদেশেও কোভিডে মৃতের ৭০ শতাংশই পুরুষ! চাইনিজ সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিসিডিসি)-এর রিপোর্টেও সেদেশে কোভিড সংক্রমণে পুরুষদের মৃত্যুহার ২.৮ শতাংশ। নারীদের ক্ষেত্রে তা ১.৭ শতাংশ। গ্লোবাল হেলথ ফিফটি ফিফটি জানাচ্ছে, ডেনমার্কে করোনা আক্রান্ত পুরুষের মধ্যে ৫.৭ শতাংশের প্রাণহানি হয়েছে। অথচ সংক্রামিত নারীদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে মাত্র ২.৭ শতাংশের। ফিফটি ফিফটি’র রিপোর্ট বলছে, স্পেন, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, সুইডেনের মতো দেশগুলোতে করোনায় মৃতের মধ্যে ৬০ শতাংশই পুরুষ!
এবার দেখা যাক, নারী না পুরুষ, কারা সংক্রামিত হচ্ছেন বেশি? ডেনমার্কে মোট সংক্রামিতের ৫৪ শতাংশ নারী। পুরুষ ৪৬ শতাংশ। সুইজারল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডে সংক্রামিতের মধ্যে নারী ৫৩ শতাংশ, পুরুষ ৪৭ শতাংশ। আর ভারতে নোভেল করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে পুরুষ প্রায় ৬৪ শতাংশ। বাকি অংশ নারী।
এম আর বাঙ্গুর কোভিড হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটের ইনচার্জ ডাঃ শুভব্রত পাল বলেন, পুরুষদের পাশাপাশি নারীরা আক্রান্ত হলেও সংক্রমণজনিত শারীরিক জটিলতা নারীদের কম। ধারণা করা হয়, পুরুষ হর্মোন টেস্টোস্টেরনের ক্ষরণের হার বেশি হওয়ায় বেসাল মেটাবলিক রেট (বিএমআর) বেশি হয়। বিএমআর বেশি থাকলে প্রদাহজনিত অসুখের প্রতিক্রিয়া বেশি হয়। তবে এ সবই ধারণা। এ নিয়ে রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালে সমীক্ষা শুরু হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গের প্রবীণ ফিজিশিয়ান ডাঃ সুকুমার মুখোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, রাজ্যে এখন পর্যন্ত আক্রান্তদের কমবেশি দুই তৃতীয়াংশ পুরুষ, এক তৃতীয়াংশ নারী। ‘এসিই ২ রিসেপটর’-এর তুলনায় ‘টোল-লাইক রিসেপটর’ অনেক বেশি থাকে মহিলাদের। টোল-লাইক রিসেটপর শরীরে সংক্রমণ প্রতিরোধ করে। পুরুষ দেহে এসিই ২ রিসেপটরের সংখ্যা বেশি। এই রিসেপটরের মাধ্যমেই এই ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করে। এই রিসেপটর থাকে ফুসফুস, আর্টারি, হার্ট, কিডনিতে। ফলে একাধিক অঙ্গ বিকল হওয়ার আশঙ্কা পুরুষদেরই বেশি।
এছাড়াও বিশেষজ্ঞদের দাবি, নারীদের এক্স ক্রোমোজোম থাকে দুটি। এর সঙ্গে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার যোগ রয়েছে। নারী দেহে ইস্ট্রোজেন, প্রজেস্টেরনের মতো হর্মোনও আসলে সংক্রমণ প্রতিরোধ করে। এছাড়া কিছু জিনও হতে পারে ধাঁধার উত্তর। কিন্তু কোনোটাই প্রমাণিত সত্য নয়। ফলে এনিয়ে রহস্য থেকেই যাচ্ছে।
সূত্র : বর্তমান