করোনার ভ্যাকসিন প্রথমে আনবে চীনই!
করোনার ভ্যাকসিন প্রথমে আনবে চীনই! - সংগৃহীত
করোনা প্রতিষেধকের খোঁজে দিনরাত এক করেও কূল পাচ্ছেন না বিশ্বের তাবোড় তাবোড় বিজ্ঞানীরা। তবে চীন কিন্তু বুক চিতিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ভ্যাকসিন প্ল্যান্ট প্রতিষ্ঠা করে ফেলল। একবার প্রতিষেধক কার্যকরী প্রমাণিত হলেই বছরে প্রায় ১০ কোটি প্রতিষেধক উৎপাদনেও সক্ষম এই প্ল্যান্ট। উৎপাদনকারী সংস্থা দ্য ফোর্থ কনস্ট্রাকশান কো লিমিটেডের অধীনেই রয়েছে বিশ্বের বায়োম্যাডিকেল বাজারের ৮০ শতাংশ। তাদের তথ্য অনুযায়ী, তারা বিএসএল-৩ পদ্ধতিতে কাজ করতে সক্ষম। এর আগে এই পদ্ধতিতে কাজ হয়েছে সার্স ও মার্সের ক্ষেত্রেও।
১৯৫৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হেবেইর এই সংস্থা অ্যান্টিবডি, সেল থেরাপি এবং ইনসুলিন উৎপাদনের কাজ করে। এপ্রিল মাসে চিনের সিনোভেক বায়োটেক তাঁদের প্রতিষেধকের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চালিয়েছে। যদি তাঁরা সফল হয় তাহলে তাঁরাও বিপুল পরিমাণ প্রতিষেধক উৎপাদন করতে পারবে। সিনোভেকও ফার্ম তৈরির জন্য ৭০ হাজার বর্গকিলোমিটার জমি নিয়ে রেখেছে বেজিং প্রশাসনের কাছ থেকে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ১১ মে এর তথ্য অনুযায়ী এখন পর্যন্ত ৮টি প্রতিষেধকের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চলছে। যার মধ্যে চারটি চিনের। আশার আলো দেখিয়ে ট্রায়ালের দ্বিতীয় পর্যায়ে প্রবেশ করেছে অ্যাডিনোভাইরাস ভেক্টর। চিনের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোলের প্রধান ড:গাও ফু জানিয়েছেন সেপ্টেম্বরেই আসতে পারে করোনা প্রতিষেধক। যা প্রথমে স্বাস্থ্যকর্মীদের দেয়া হবে। তবে হু অবশ্য বলছে ভাইরাসের প্রতিষেধক বাজারে আসতে আরও অন্তত ১২ থেকে ১৮ মাস সময় লাগবে। কিংবা তা অধরাও থেকে যেতে পারে।
অন্যদিকে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপিকা সারাহ গিলবার্ট আশাবাদী যে যদি সব ঠিকঠাক যায় তাহলে তাঁদের ভ্যাকসিন সেপ্টেম্বরেই বাজারে আসবে। এবং তাঁরা ৮০ শতাংশ আত্মবিশ্বাসী যে তাদের ভ্যাকসিন করোনা কাত করতে সক্ষম।
যে চারটি ভ্যাকসিন দেখাচ্ছে আশার আলো
বহুল আলোচিত করোনাভাইরাস অতি মাত্রায় সংক্রমিত একটি রোগ। আর সংক্রমিত রোগ প্রতিরোধের মূল হাতিয়ারই হলো ভ্যাকসিন। ভ্যাকসিন মূলত আমাদের শরীরকে রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা প্রদান করে। ভ্যাকসিন প্রয়োগে আক্রান্ত ভাইরাসের বিরুদ্ধে আমাদের শরীরে এক ধরনের প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়। যা ভাইরাসের কার্যক্রমকে নিষ্ক্রিয় করে দেয়। ফলে মানব শরীর আর ওই রোগে আক্রান্ত হয় না।
তাই সারাবিশ্বে বর্তমানে বিজ্ঞানী ও গবেষকরা কোভিড-১৯'এ ভ্যাকসিন তৈরিতে নিরলস চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে বিশ্বে ১০০টি গবেষণা দল এই রোগের ভ্যাকসিন নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে।
তবে উল্লেখযোগ্য চারটি ভ্যাকসিন নিয়ে বর্তমানে বিজ্ঞানীরা যুগান্তকারী এক ফলাফলের আশা করছেন। ভ্যাকসিন চারটি হলো -
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ভ্যাকসিন
ব্রিটেনের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক তিন মাসের প্রচেষ্টায় 'ChAdOx1 nCoV-19' নামে একটি ভ্যাকসিন তৈরি করেছে। এই ভ্যাকিসনটি বর্তমানে ফেইজ-১ ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে রয়েছে। কার্যকারিতা ও নিরাপত্তা যাচাই করার জন্য সুস্থ স্বেচ্ছাসেবকদের শরীরে গত এপ্রিলে এটি প্রয়োগ করা হয়েছে। এই ভ্যাকসিন গ্রহণকারী ব্যক্তি শরীরের অ্যান্টিবডি এডিনোভাইরাসকে দুর্বল করে দেয়৷ জুনের মাঝামাঝি সময়ের দিকে ক্লিনিক্যাল এই ট্রায়ালের ফল আসতে পারে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটসভিত্তিক মডার্না ভ্যাকসিন
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব এলার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে দেশটির ম্যাসাচুসেটসের বায়োটেক কোম্পানি মডার্না করোনার আরএনএ ব্যবহার করে একটি ভ্যাকসিন তৈরি করেছে। ইতোমধ্যে 'mRNA-1273' নামের এই ভ্যাকসিনের ফেইজ-১ অর্থাৎ প্রথম ধাপে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শেষ হয়েছে। ফেইজ-২ ট্রায়ালের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। মানুষের শরীরের কোষে এই আরএনএ ভ্যাকসিন প্রয়োগের পর মলিকিউলার নির্দেশনা অনুযায়ী ভাইরাল প্রোটিন তৈরি করে। শরীর এই ভাইরাল প্রোটিন শনাক্ত করার পর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
বেইজিংয়ের সিনোভ্যাক বায়োটেক
করোনাভাইরাসের সম্ভাব্য একটি ভ্যাকসিন বানরের দেহে প্রয়োগে সফলতার দাবি করেছেন চীনা বিজ্ঞানীরা। চীনা বায়োফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি সিনোভ্যাক বায়োটেক নামের একটি কোম্পানি পিকোভ্যাক নামের এই করোনা ভ্যাকসিন তৈরি করেছে। বর্তমানে এই ভ্যাকসিন মানবদেহে পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করা হয়েছে।
ফাইজার ও বায়োএনটেকে
যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানি ফাইজার ও জার্মান কোম্পানি বায়োএনটেক করোনার সম্ভাব্য চারটি আরএনএ ভ্যাকসিন তৈরির কাজ করছে। ইতিমধ্যে তাদের তৈরি 'BNT162'
নামের একটি ভ্যাকসিনের ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। প্রথম ধাপে এর ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শেষ হয়েছে সম্প্রতি। শিগগিরই দ্বিতীয় দফায় আরো ৩৬০ জন স্বাস্থ্য স্বেচ্ছাসেবীর দেহে ভ্যাকসিনটি প্রয়োগ করা হবে।
এছাড়াও ভারত ভ্যাকসিন অগ্রগতি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর) কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন তৈরির ভারত বায়োটেক ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের ( বিবিআইএল) সাথে একত্রে কাজ করছে।
এছাড়াও ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট (এসআইআই) আয়তনের দিক থেকে বিশ্বের বৃহত্তম ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারী কোম্পানি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে ৬ কোটি ভ্যাকসিন ডোজ তৈরির চুক্তি করেছে।
সূত্র : টাইমস অফ ইন্ডিয়া