‘ফিঙ্গার’ নিয়ে ঝামেলা শুরু ভারত-চীনের

‘ফিঙ্গার’ নিয়ে ঝামেলা শুরু ভারত-চীনের - সংগৃহীত
এক সপ্তাহের মাথায় কিছুটা সংযম দেখাল দু’পক্ষই। অর্থাৎ, চীন ও ভারত। যে কারণে চাপা উত্তেজনা থাকলেও, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে কোনো সমস্যা তৈরি হয়নি লাদাখের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায়। গত বুধবার ভারতীয় সেনার মুখপাত্র কর্নেল অমন আনন্দ বলেন, ‘আমরা সতর্ক আছি এবং সচেতনও। তবে নতুন করে কোনো সমস্যা তৈরি হয়নি। তাই অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করার আর কোনো প্রয়োজন নেই এখানে।’
কিন্তু হঠাৎ করে উত্তেজনা তৈরি হলো কেন? কী এমন লো যে, ২০১৭ সালের পর ফের ভারত ও চীনের সেনা হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়ল?
লাদাখ উপত্যকার পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র প্যাংগং লেক। এর উপর দিয়েই গেছে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা। সেইমতো লেকের পশ্চিম দিকের ৪৫ কিলোমিটার অংশ ভারতের অন্তর্ভুক্ত আর বাকিটা চীনের নিয়ন্ত্রণাধীন। লেকের উত্তর দিক বরাবর যে পর্বতমালা রয়েছে, সেগুলোর ছোট ছোট চূড়াকে সেনাবাহিনীর পরিভাষায় ‘ফিঙ্গার’ বলা হয়। এরকম ৮টি ‘ফিঙ্গার’ রয়েছে প্যাংগং লেকের ধার ঘেঁষে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর চৌকি রয়েছে ‘ফিঙ্গার ৩’-এর কাছাকাছি। কিন্তু ‘ফিঙ্গার ১’-এর পর রাস্তা দুর্গম হওয়ায়, বাকিটা হেঁটেই টহল দিতে হয় জওয়ানদের। চীনের অবশ্য সে সমস্যা নেই। কার্গিল যুদ্ধের সময় ভারত যখন পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে নিয়ে ব্যস্ত ছিল, তখন ফাঁকতালে ভারতের ভিতরে ঢুকে ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ রাস্তা বানিয়ে ফেলেছিল চীন। প্রথম প্রথম ‘ফিঙ্গার ৮’ পর্যন্ত ভারতীয় সেনাবাহিনীর টহলদারি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল চীনের সেনাবাহিনী। কিন্তু, তাতে পাত্তা দেয়নি নয়াদিল্লি।
এরপর বিগত কয়েক মাস ধরে ‘ফিঙ্গার ২’-এর পর ভারতীয় সেনাকে টহলদারিতে বাধা দেয়ার চেষ্টা শুরু হয়। কারণ, চীনের দাবি, ‘ফিঙ্গার ২’-এর উপর দিয়েই প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা গেছে। ৫ মে রাতে বিষয়টি চরমে ওঠে। ‘ফিঙ্গার ২’-তে টহল দিতে ভারতীয় সেনাবাহিনীকে বাধা দেয় চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ)। কিন্তু তাতে কান না দিয়ে টহলদারি অব্যাহত রাখে সেনাবাহিনী। এরপরই মারমুখী হয়ে ওঠে চীনের সেনাবাহিনী। মেটাল রড, ব্যাট, ব্যাটন দিয়ে হামলা চালায় ভারতীয় জওয়ানদের উপর। দুই কর্মকর্তাসহ জখম হন বেশ কয়েকজন। মুখ বুজে না থেকে পাল্টা দেন জওয়ানরাও। তাতে পিএলএ’রও কয়েকজন জখম হন।
পরদিন পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে হেলিকপ্টারে এলাকায় যান সেনাবাহিনীর কয়েকজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। ভারত এবং চীনের শর্ত অনুযায়ী, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার এক কিলোমিটারের মধ্যে আসতে পারবে না কোনো দেশের সেনা হেলিকপ্টার। যুদ্ধবিমানের ক্ষেত্রে এই ব্যবধান ১০ কিলোমিটারের। সেই নিয়ম মেনেই ভারতীয় সেনাবাহিনীর কপ্টার এলাকা পরিদর্শন করছিল। কিন্তু, তাকে দেখে যুদ্ধংদেহি মেজাজে ছুটে আসে চীনা সেনাবাহিনীর দু’টি কপ্টার। অশালীন অঙ্গভঙ্গিও করা হয় সেগুলো থেকে। এরপরই লে বিমানবাহিনীর ঘাঁটি থেকে দু’টি সুখোই-৩০ এমকেআই উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয় নিকটবর্তী বাহিনীর ঘাঁটিতে। তারপর থেকেই চুপচাপ হয়ে গিয়েছে ‘লাল ফৌজ’!
যদিও সীমান্তে চীনের সঙ্গে সাম্প্রতিক ঘটনাগুলিকে গুরুত্ব দিতে নারাজ ভারতের সেনাপ্রধান জেনারেল মনোজ মুকুন্দ নারাভানে। বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, সংঘর্ষের ওই দুই ঘটনার মধ্যে পারস্পরিক কোনো সম্পর্ক নেই। এমনকী, স্থানীয় বা আন্তর্জাতিক স্তরের কোনো ঘটনাগুলোর সঙ্গেও এর কোনো যোগসূত্র নেই। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর এধরনের কিছু ঘটনা ঘটেই থাকে।
সূত্র : বর্তমান