করোনাভাইরাস এবং ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা!
ট্রাম্প - সংগৃহীত
১৯৪৫ সালে পরিসমাপ্ত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্র যে পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করে তা একটি মূল সূত্রের ওপর প্রতিষ্ঠিত। সেটি হলো- ওয়াশিংটনের প্রয়োজনীয় কাজটি আন্তর্জাতিক কোনো প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সম্পন্ন ও সমন্বয় করিয়ে নেয়া, সেটি প্ররোচনার মাধ্যমে হোক, ভয়ভীতি দেখিয়ে হোক বা বলপ্রয়োগের মাধ্যমে হোক। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিষয়ে বিভিন্ন দেশ এখন আর আশানুরূপ সাড়া দিচ্ছে না। বর্তমান ও নিকটাতীতের দিকে দৃষ্টিপাত করলে দেখব, সোভিয়েত ইউনিয়ন, ব্রিটিশ সাম্রাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র বিশ্ব সঙ্কট ও রাজনীতিতে প্রতারণা ও ধাপ্পাবাজির আশ্রয় নিয়েছে। ১৯৫৬ সালের সুয়েজ সমস্যায় ব্রিটিশদের পদক্ষেপ এবং ১৯৮০ সালে আফগানিস্তানে সোভিয়েত ইউনিয়নের আগ্রাসন, খোমেনিকে ধরে নেয়ার ওয়াশিংটনের অপারেশন, ফিলিস্তিনে শান্তির জন্য জেরুসালেমকে ইসরাইলের রাজধানী ঘোষণা, আরব ন্যাটো বাহিনী তৈরি করা- এরূপ অসংখ্য উদাহরণ রাজনীতির মাঠে গড়াগড়ি খাচ্ছে।
করোনাভাইরাসের আগ্রাসন সুয়েজ ও আফগানিস্তানের মতো ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য বড় সমস্যা। সত্যি বলতে কি, প্লেগ এসবের চেয়ে আরো বড় সমস্যা করোনা। কেননা বিশ্বের সব দেশের মানুষ কোভিড-১৯ জ্বরে কোনো না কোনোভাবে সংক্রমিত হয়েছে ও হচ্ছে। অর্থাৎ এই গ্রহটিই এখন সংক্রমিত। এ ধরনের একটি মেগা বিষয়ে আমেরিকা দায়িত্ব নিতে ও নেতৃত্ব দিতে এখন পর্যন্ত সক্ষম হলো না, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানও উন্নত হলো না।
অন্য দিকে রাশিয়ার বদলে চীনের উত্থান অনেক গুরুত্বপূর্ণ, যা করোনা-পরবর্তী সময়ে আরো উজ্জীবিত হবে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। চীন নতুন মহামারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সক্ষম হয়েছে; যা অন্য দেশগুলো এখনো পারেনি। চীন সবার আগে ভয়াবহভাবে আক্রান্ত ইতালি ও আফ্রিকায় মেডিক্যাল টিম, পরীক্ষার কিট, ভেন্টিলেটর, ফেস মাস্ক পাঠিয়েছে। ইতালি দেখেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্য দেশগুলোতে তাদের চাহিদার ক্রন্দনে কোনো প্রতিক্রিয়া না হলেও চীন সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। চীনা সমাজসেবীরা বেলজিয়ামে তিন লাখ ফেস মাস্ক পাঠিয়েছে। এসব বিশেষ মুহূর্তের হলেও দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্ক স্থাপনের নিয়ামক হিসেবে কাজ করবে। যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতা কমা শুরু হলেও বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে ৮০০ সামরিক ঘাঁটি রয়েছে। এ জন্য মিলিটারি বাজেটের ৭৪৮ বিলিয়ন ডলার খরচ পড়ে। খরচের পাহাড় গড়ালেও আমেরিকা সোমালিয়া, আফগানিস্তান ও ইরাকে কাক্সিক্ষত অর্জন লাভ করতে পারেনি। ট্রাম্প কোনো যুদ্ধ শুরু করেননি, তথাপি তার যুদ্ধংদেহী গর্জন বিশ্বকে কাঁপিয়েছে। তিনি পেন্টাগনের চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারির ক্ষমতা বেশি প্রয়োগ করেছেন। ইরানের বিরুদ্ধে শক্ত অবরোধ, অন্য কিছু দেশের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক যুদ্ধের হুমকি বহু দেশকে বিপাকে ফেলেছে। তিনি বিশ্বাস করেন ডলারের ক্ষমতাই বড় শক্তি। তিনি হিন্দু জাতীয়তাবাদী নরেন্দ্র মোদি ও জিওনিস্ট নেতানিয়াহুকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করেছেন এবং উচ্চাভিলাষী দু’জন নেতা উত্তর কোরিয়ার কিম জং উন এবং সৌদি আরবের মোহাম্মদ বিন সালমানকে নিজ অক্ষে আনতে সক্ষম হয়েছেন।
সরকারকে জনগণের ভালো করতে হয়। বিশেষ করে এই প্লেগের সময়ে। জনগণ রাষ্ট্রক্ষমতাধারীদের রক্ষাকারীভাবে। অবস্থা দেখে মনে হয় যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন সে কাজটি সঠিকভাবে আঞ্জাম দিতে পারেনি। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রকে এখন জনগণ করোনাভাইরাস ম্যানেজমেন্টে কে বেশি পারঙ্গম তা দিয়ে মাপছে।
ট্রাম্প এখনো আমেরিকায় জনপ্রিয়। তবে বলা হচ্ছে ট্রাম্প নিউ ইয়র্ক ও বোস্টনে গুরুত্ব দেননি। যদি এই ধারা টেক্সাস ও ফ্লোরিডায় অব্যাহত থাকে তবে তার জনপ্রিয়তা বাষ্পের মতো উড়ে যেতে পারে। আরো বলা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসন সমাজকে বিভক্ত করেছে, বাধা দেয়া না হলে এই বিভক্তি গভীরতর হবে। আমেরিকানরা বলছেন, তিনি সঠিকভাবে করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে পারেননি।