করোনা ভ্যাকসিন আবিষ্কার : যুক্তরাষ্ট্র, চীন না ইউরোপ এগিয়ে?
করোনা ভ্যাকসিন - সংগৃহীত
কোভিড-১৯ এর প্রতিরোধে ভ্যাকসিন তৈরিতে গবেষণা গ্রুপগুলোর জোরালো প্রচেষ্টা সত্ত্বেও শিগগিরই ভ্যাকসিনের পুরোপুরি ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল সম্পন্ন হচ্ছে না। এদিকে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও), সকলকে আগামী এক বছরের মধ্যে ভাইরাস প্রতিরোধের কার্যকর ভ্যাকসিন পাওয়ার আশা না করার জন্য বলেছে।
আন্তর্জাতিক মিডিয়ার রিপোর্টে বলা হয়, ইতোমধ্যে ১ শ’রও বেশি সম্ভাবনাময় কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের উন্নয়ন করা হয়েছে, এগুলোর মধ্যে অনেকগুলো ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে রয়েছে। তবে, বিশেষজ্ঞরা শঙ্কা প্রকাশ করেছেন, পরীক্ষা নিরীক্ষা এবং প্রতিবন্ধকতার মধ্যে ২০২০ সালের মধ্যে এটি চূড়ান্ত ব্যবহার উপযোগী নাও হতে পারে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, বর্তমানে ৮টি কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন হিউম্যান ট্রায়ালে রয়েছে। তবে, রাতারাতি কোনটিরই কার্যকারিতার ব্যাপারে কোন আশাব্যাঞ্জক কিছু দেখা যাচ্ছে না, বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, একটি সংক্রামক ব্যাধির জন্য একটি কার্যকর ভ্যাকসিন উৎপাদনে কয়েক বছর লেগে যেতে পারে।
বিশ্বের শীর্ষ এই স্বাস্থ্য সংস্থা ভ্যাকসিন তৈরি এবং করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য ৮ বিলিয়ন ডলারের বাড়তি তহবিল গঠন করেছে।
গবেষণা উদ্যোগের সর্বশেষ অগ্রগতি সম্পর্কে সংবাদ সংস্থা রয়টারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্কিন বায়োটেকনোলজিক্যাল কোম্পানি মডেরনা ইনক্ বলেছে, মঙ্গলবার তারা করোনা ভাইরাসের পরীক্ষামূলক ভ্যাকসিনের ‘ফাস্ট ট্রাক’ অগ্রগতির জন্য আমেরিকান ফুড এন্ড ড্রাগ এডমিনিস্ট্রেশনের (এফডিএ) অনুমতি পেয়েছে।
এখন সব কিছু ঠিকঠাক মতো এগোলে এফডিএ সিদ্ধান্ত নিয়েছে ছয় মাসের মধ্যে ভ্যাকসিন উন্নয়ন জোরদারে কোম্পানিকে ৪৮৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার তহবিল সরবরাহ করবে।
এফডিএ এর আগে ফার্মা জায়ান্ট রোচির কোভিড-১৯ এন্টিবডি টেস্টের জন্য ইমার্জেন্সি ইউজ অথরাইজেশন (ইইউএ) দিয়েছে। কোম্পানি কোভিড-১৯ আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসায় এর প্রায় ১০০ ভাগ কার্যকারিতা দাবি করেছে।
মডেরনা বলেছে, ২০২১ সালে তাদের ভ্যাকসিন বাজারে যাওয়ার উপযোগিতার অনুমোদন পেতে তারা শিগগিরই পরের ধাপের ট্রায়াল শুরু করবে।
ভ্যাকসিন আরএনএ ম্যাসেঞ্জার টেকনোলজি ব্যবহার করে ভাইরাস প্রতিরোধ করে। আরএনএ শরীরের কোষে বিভিন্ন ধরণের প্রোটিন গঠনের বার্তা পাঠায়, এই ভ্যাকসিন আরএনএ’র মাধ্যমে সুনির্দিষ্ট করোনা ভাইরাস প্রোটিন গঠনের বার্তা পৌঁছানোর মাধ্যমে করোনার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে।
রিপোর্টে বলা হয়, বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা গ্রহন করা যায়, তবে, এ ধরনের কোন ওষুধ এখনো বাজারে আসার অনুমোদন পায়নি।
মডেরনা আরো অনেকগুলো ওষুধ কোম্পানি এবং গবেষণা গ্রুপকে সঙ্গে নিয়ে এই ভ্যাকসিন উন্নয়নে কাজ করছে, এগুলোর মধ্যে ওষুধ প্রস্তুতকারী জনসন এন্ড জনসন ও ফিজার ইনক রয়েছে, যারা, জার্মান বায়োএনটেক এসই’র সঙ্গে কাজ করছে।
বিশ্বখ্যাত সায়েন্টিফিক জার্নাল ন্যাচার জানায়, গতমাসের শেষের দিকে জার্মানিতে এই ভ্যাকসিনের ট্রায়াল শুরু হয়েছে।
ইইউ সদস্য দেশ, কানাডা, জাপান, সৌদি আরব, যুক্তরাজ্য ও নরওয়ের নেতৃত্বে একটি বৈশ্বিক সমন্বিত গ্রুপ কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের উন্নয়নে ৮ বিলিয়ন ডলার চেয়েছে। এই ভ্যাকসিনেরর সুবিধা গোটা বিশ্বের মানুষের কাছে পৌঁছাতে বিশ্ব ব্যাংক, বিলস এন্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন এবং অন্যান্য দাতারা প্রাথমিক অর্থ সরবরাহ করেছে।
যুক্তরাষ্ট্র নিজ দেশের জনগণকে সুরক্ষায় সম্ভাব্য ভ্যাকসিনের পর্যাপ্ত ডোজ উৎপাদনে নিজস্ব প্রকল্প ‘অপারেশন ওয়ার্প স্পিড’ এ কয়েক বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের পরিকল্পনা গ্রহন করেছে।
ভ্যাকসিন উন্নয়নের বৈশ্বিক প্রচেষ্টায় বৃটেন সম্মুখ সারিতে রয়েছে, ইতোমধ্যেই বৃটেন ভ্যাকসিনের হিউম্যান ট্রায়াল শুরু করেছে।
ভ্যাকসিন উন্নয়ন ও উৎপাদনে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির জেনিফার ইনস্টিটিউট বৃটিশ বহুজাতিক বায়োফার্মাসিটিক্যাল কোম্পানি আসত্রাজেনেকা’র সঙ্গে কাজ করছে। মার্চের শেষ দিকে এই ভ্যাকসিনের ফেজ ১/২ ট্রায়াল শুরু হয়েছে।
ভারতীয় সিরাম ইনস্টিটিউট ভ্যাকসিন উন্নয়নে ইতোমধ্যেই বানরের ওপর দুইদফা টেস্ট সম্পন্ন করেছে। জেনিফার ইসস্টিটিউট জানায়, প্রাণীর ওপর টেস্ট সফল হলে পরে হিউম্যান টেস্ট হবে, অক্সফোর্ড ভ্যাকসিন জুনের প্রথম দিকে ফেজ ২/৩ ট্রায়াল শুরু করবে।
যদিও বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন মঙ্গলবার সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, কার্যকর করোনা ভাইরাস ভ্যাকসিন হয়তো কখনোই পাওয়্রা যাবে না। তিনি জনগণের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে চলমান লকডাউন শিথিলের জন্য কর্মকৌশল নির্ধারণ করেছেন।
করোনায় ভয়ংকর ক্ষতিগ্রস্ত ইতালি সম্প্রতি সুনির্দিষ্ট ভ্যাকসিন উদ্ভাবনের দাবি করেছে এবং এগুলোর ট্রায়াল চলছে।
জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো অ্যাবে সোমবার বলেছেন, তারা আশা করছেন জুলাইয়ে করোনা ভ্যাকসিনের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু হবে। এই ভ্যাকসিন উন্নয়নে ইউনিভার্সিটি অব টোকিও, ওসাকা ইউনিভার্সিটি এবং ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ইনফেকশনাস ডিজিজসহ অনেকগুলো ইনস্টিটিউট কাজ করছে।
নিউইয়র্ক টাইমস সম্প্রতি এক রিপোর্টে জানিয়েছে, ফাইজার এবং বায়োএনটেক ঘোষণা দিয়েছে, তাদের করোনা ভাইরাস ভ্যাকসিন যুক্তরাষ্ট্রে হিউম্যান ট্রায়াল শুরু হয়েছে। টেস্ট সফল হলে জরুরি ব্যবহারের জন্য যথাসম্ভব সেপ্টেম্বরেই ভ্যাকসিন তৈরি হয়ে যাবে।
সিনহুয়ার খবরে বলা হয়, ভারত ও থাইল্যান্ড করোনা ভ্যাকসিন উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। ভারতে করোনার ৩০ টির বেশি ভ্যাকসিনের কাজ বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে, কয়েকটি ট্রায়াল পর্যায়ে রয়েছে।
চীনের বেইজিং ভিত্তিক সিনোভাক বায়োটেক করোনা ভ্যাকসিনের উন্নয়ন ঘটিয়েছে, এর একটি ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে আছে। ৩ টি ট্রায়ালের দ্বিতীয় ধাপে রয়েছে।
সূত্র : বাসস