নেপাল-ভারত সীমান্ত উত্তেজনা : কী হতে পারে পরিণতি?
নেপাল-ভারত সীমান্ত উত্তেজনা : কী হতে পারে পরিণতি? - সংগৃহীত
তিব্বত যেতে কৈলাশ-মানসসরোবরের জন্য লিপুলিখ দিয়ে সাম্প্রতিক ভারতের একটি লিঙ্ক রোড খুলে দেয়ার বিরুদ্ধে নেপাল ক্ষোভে ফেটে পড়েছে। লিমপিয়াধুরা, কালাপানি ও লিপুলেখের মতো এলাকাগুলো ঐতিহাসিকভাবেই নেপালি ভূখণ্ড হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে।
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৫০০০ মিটার উঁচুতে অবস্থিত লিপুলেখ পাসের ভূ-কৌশলগত মূল্য রয়েছে। কারণ এর উত্তর দিকেই তিব্বত অবস্থিত। প্রাচীনকালে এটি নেপাল ও তিব্বতের মধ্যে ব্যবসায়ী ও তীর্থযাত্রী চলাচলে ব্যবহৃত হতো।
১৯৬২ সালের চীন-ভারত যুদ্ধের পর ভারতীয় বাহিনী এসব এলাকা থেকে সরেনি। সম্পর্কের অপ্রতিসাম্যতার কারণে এসব এলাকা থেকে ভারতীয় সৈন্যদের প্রত্যাহার বাধ্য করতে পারেনি নেপাল।
গত শনিবার এসব ভূখণ্ডের দাবি নিয়ে নেপাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি কড়া বিবৃতি দিয়েছে। এতে ভারতকে এসব এলাকায় আর অগ্রসর না হতে ও তৎপরতা না চালানোর জন্য ও কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে ইস্যুটির নিরসনের আহ্বান জানানো হয়েছে।
এর জবাবে ভারতের পররাষ্ট্র দফতর জোর দিয়ে বলে যে নির্মাণকাজ করা হয়েছে ভারতীয় ভূখণ্ডে। এতে আরো বলা হয়, কূটনৈতিক সংলাপের মাধ্যমে নেপালের সাথে সীমান্ত বিরোধ মীমাংসা করার প্রতি দেশটি এখনো প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নেপালে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূতকে তলব করা হয় এবং নেপালের অসন্তুষ্টি নিয়ে একটি কূটনৈতিক নোট হস্তান্তর করা হয়।
জম্মু ও কাশ্মির ও লাদাখকে পুনঃসংগঠিত করার পর নতুন মানচিত্র প্রকাশের পর গত নভেম্বরে কাঠমান্ডু একটি কূটনৈতিক নোট পাঠিয়েছিল।
নেপাল ও ব্রিটেনের ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ১৮১৪-১৮১৬ সময়কালে একটি যুদ্ধে অংশ নেয়। সুগুইলি চুক্তিতে কালি নদীকে নেপালের পশ্চিম সীমান্ত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এরপর থেকে নেপাল লিমপিয়াধুরা, কালাপানি ও লিপুলেখে তার সার্বভৌত্ব বজায় রাখে।
নেপাল বলে আসছে যে কালি নদীর উৎ লিমপিয়াধুরায়। আর ভারত দাবি করে আসছে যে নদীটির উৎপত্তি লিমপিয়াধুরার পূর্ব দিকে কালাপানি এলাকায়।
এসব বিষয় অনেকবারই নেপালের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে প্রকাশ পেয়েছে। তবে কার্যকর পররাষ্ট্রনীতি প্রণয়নের পূর্ব শর্ত হলো স্থিতিশীল অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিবেশ।
কিন্তু এসব এলাকার বাণিজ্যিক ও কৌশলগত মূল্যের কারণে ভারত বর্তমান স্থিতিবস্থা ত্যাগ করতে চাইবে না, এটিই স্বাভাবিক। তবে এবার নেপাল বিষয়টি বেশ সক্রিয়ভাবে গ্রহণ করেছে। সরকার বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ, সাধারণ মানুষের ব্যাপক সমর্থন পাচ্ছে।
বিশ্বব্যাপীই ভূখণ্ডগত বিরোধ নিষ্পত্তি একটি কঠিন বিষয়। আর এটি সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতার সাথে সম্পৃক্ত হওয়া প্রতিটি রাষ্ট্রই জাতীয়তাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করে।
আকার, জনসংখ্যা, অর্থনীতি, সম্পদ ও সামরিক শক্তি যাই হোক না কেন, প্রতিটি দেশই আন্তর্জাতিক আইনের সামনে সমান। আর অল্প যে কয়েকটি দেশ পুরো ইতিহাসজুড়ে স্বাধীন থাকার জন্য গর্ব করতে পারে, নেপাল তার অন্যতম।
নেপাল ও ভারত অভিন্ন ভৌগোলিক, ঐতিহাসিক, সামাজিক-অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও জনগণ পর্যায়ে মূল্যবোধ লালন করে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী সবসময় প্রতিবেশী প্রথম নীতির কথা বলেন। অবশ্য ফলাফল ভিন্ন কথা বলে। কিন্তু তবুও ওলি ও মোদির উচিত হবে এই ইস্যুটি নিরসন করে নেপাল-ভারত সম্পর্কে তাদের নাম সোনালি হরফে লেখার সুযোগটি গ্রহণ করা।
এশিয়া টাইমস