যে কারণে নারায়ণগঞ্জে বাড়ছে করোনার দাপট

কামাল উদ্দিন সুমন নারায়ণগঞ্জ | May 14, 2020 03:34 am
 যে কারণে নারায়ণগঞ্জে বাড়ছে করোনার দাপট

 যে কারণে নারায়ণগঞ্জে বাড়ছে করোনার দাপট - সংগৃহীত

 

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের হটস্পট খ্যাত নারায়ণগঞ্জ শিগগিরই সেই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে পারছে না। প্রায় প্রতিদিনই হু হু করে বেড়েই চলছে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা। এরই মধ্যে এক হাজার ৪০০ ছাড়িয়ে গেছে আক্রান্তের সংখ্যা। সেই সাথে মৃত্যুর সংখ্যাও কমছে না। এ পর্যন্ত মারা গেছে ৫৯ জন। প্রায় প্রতিদিনই দুই-একজন করে মারা যাচ্ছে। তারপরও সচেতন হচ্ছেন না মানুষ।

লকডাউন শিথিলতার কারণে মার্কেটগুলোতে মানুষের ভিড় যেমন বাড়ছে তেমনি ঈদকে সামনে রেখে বিপণিবিতানগুলোতে মানুষের উপচেপড়া ভিড়। কোনো নিয়মনীতি না মেনেই অনেকে শিশুদের নিয়ে কেনাকাটা করতে আসছেন। এদের অনেকে মানছে না স্বাস্থ্যবিধি।
এদিকে ব্যাংকের শাখাগুলোতে টাকা তোলার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ছে মানুষ। কোনো নিয়মনীতিই মানছে না গ্রাহকরা। ধাক্কাধাক্কি করে কার আগে কে টাকা তুলবেন এ নিয়ে দেখা দেয় প্রতিযোগিতা।
গত ১০ মে থেকে বিপণিবিতান খুলে দেয়ার আনুষ্ঠানিক নির্দেশনা দেয় সরকার। এই নির্দেশনায় করোনাভাইরাসের হটস্পট খ্যাত নারায়ণগঞ্জে কোনো মার্কেট বন্ধ রাখা হয়নি। যথারীতি সব মার্কেটই খোলা হয়েছে।

এর আগে গত ৭ মে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে জেলা প্রশাসনের সাথে দোকান মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নেন জেলা প্রশাসক মো: জসিমউদ্দিন।

সভায় জানতে চাওয়া হয়, নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন মার্কেটের মালিকরা তাদের মার্কেটগুলো খোলা এবং বন্ধ রাখাসহ স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতকল্পে কী কী ধরনের পদক্ষেপ নেবেন। এ সময় ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ বলেন, যেসব মার্কেটে প্রবেশ ও বহির্গমন পথ অত্যন্ত সরু সেগুলোতে জনসমাগম কমিয়ে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে তারা পদক্ষেপ নেবেন। এ ছাড়া প্রতিটি মার্কেটের সামনে হাতধোয়ার ব্যবস্থাসহ জীবানুনাশক স্প্রে ছিটানো এবং সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতকল্পে তারা পদক্ষেপ নেবেন। পাশাপাশি জেলা প্রশাসন থেকে তাদের জনসচেতনতার যে লিফলেট দেয়া হবে সেগুলো প্রতিটি মার্কেটের সামনে মাইকে বাজানো হবে।
সভায় জেলা প্রশাসক মো: জসিম উদ্দিন বলেছিলেন, শিশু নিয়ে মার্কেটে আসা যাবে না। এ বিষয়ে জেলা তথ্য অফিস, চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি এবং মার্কেট মালিক সমিতিকে মাইকিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রাইভেট গাড়ি নিয়ে মার্কেটে আসা যাবে না। মার্কেটে হ্যান্ড স্যানিটাইজার, হাতধোয়া এবং স্প্রে করার বিষয়ে মার্কেট কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেবেন।

কিন্তু কার্যতপক্ষে সেই নির্দেশনা মানা হচ্ছে না। গত দুই দিন ধরেই নারায়ণগঞ্জ শহরের প্রত্যেকটি মার্কেটেই লক্ষ করা যাচ্ছে ক্রেতাদের প্রচ- ভিড়। ক্রেতারা সামাজির দূরত্ব বজায় না রেখে একে অন্যের সাথে ঘেঁষেই তারা তাদের পণ্যসামগ্রী ক্রয় করছেন। সেই সাথে ক্রেতাদের ছোট ছোট কোমলমতি শিশুদের নিয়েই অবাধে মার্কেটে প্রবেশ করেছেন। আর এ ব্যাপারে মার্কেট কর্তৃপক্ষও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা: সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেছিলেন, অল্প পরিসরে দোকানপাট খুলে দেয়া হলেও নারায়ণগঞ্জে কিভাবে মানুষকে রক্ষা করব, সামাজিক দূরত্ব কিভাবে মানা হবে সেটি আমার বোধগম্য না। একমাত্র উপরওয়ালা ছাড়া আমাদের কিছু করার আছে কি না জানি না। স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে হবে। নতুবা আমাদের বিপর্যয় হবে। তিনি বলেন, শহরের দোকানপাট খোলা ও ফুটপাথে হকারদের যেভাবে বসা শুরু হয়েছে, তাতে সংক্রমণ দ্রুত ছড়াতে পারে।

এদিকে নিষেধ থাকা সত্ত্বেও মার্কেটে শিশু বা ছোট বাচ্চা নিয়ে আসছেন অনেক অভিভাবক। দোকানিরা বিব্রত হলেও কিছু বলতে পারছেন না। শিশু নিয়ে মার্কেটে ঢুকে অভিভাবকরা জামাকাপড় ও জুতা কিনছে।
গতকাল বুধবারও এমন দৃশ্য চোখে পড়ে বর্ষণ সুপার মার্কেটে। ছোট শিশু আয়েশা ছিদ্দিকীকে নিয়ে মার্কেটে এসেছেন এক মা। তিনি এসেছেন শিবু মার্কেট এলাকা থেকে।

কেনো শিশু নিয়ে এসেছেন? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, জামা, জুতা কিনব। মাপটা যাতে ঠিকমতো হয় এ জন্য বাচ্চাকে সাথে নিয়ে এসেছি। শিশু নিয়ে মার্কেটে আসা নিষেধ এ কথা তিনি জানতেন না বলে জানালেন।

জেলা সিভিল সার্জন মোহাম্মদ ইমতিয়াজ জানান, গত এক সপ্তাহে সংক্রমণ কমে এলেও হঠাৎ আবার বাড়া শুরু হয়েছে। লকডাউন শিথিল ও স্বাস্থ্য নির্দেশনা না মানায় সংক্রমণ বাড়ছে। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করতে হলে লকডাউন ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে হবে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন জানান, মানুষকে ঘরে আটকে রাখার পদ্ধতি খুঁজে বের করতে হবে। ব্যবসায়ীরা যদি মার্কেট না খোলেন, তাহলে লোকজন বের হবে না। তাই তাদের কাছে অনুরোধ, নিজেদের স্বার্থে সবাইকে লকডাউন মানতে হবে। নাহলে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়বে।


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us