করোনার ওষুধ রেমডেসিভিরের এত কেন?

হামিম উল কবির | May 14, 2020 03:27 am
করোনার ওষুধ রেমডেসিভিরের এত কেন?

করোনার ওষুধ রেমডেসিভিরের এত কেন? - সংগৃহীত

 

 

করোনাভাইরাসের নতুন ওষুধ রেমডেসিভিরের আকাশছোঁয়া দাম ক্ষুব্ধ করেছে অনেককে। সচেতন মহল ও চিকিৎসকরা আন্তর্জাতিক জার্নাল থেকে রেমডেসিভিরের দাম বের করে বলেছেন, গলাকাটা ব্যবসার মতো রেমডেসিভিরের দাম নির্ধারণ করা হচ্ছে। তারা ওষুধটির দাম কমিয়ে সাধারণের নাগালে আনার পরামর্শ দিয়েছেন।

ইনজেকশন আকারের এ ওষুধটি বাজারে আসার আগেই গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়ে গেছে। এর আগে কোনো ওষুধ বাংলাদেশে এত প্রচার পায়নি। বাজারে আসার আগেই এর দাম কত হতে পারে তা জানিয়ে দিয়েছে সংশ্লিষ্ট ওষুধ কোম্পানিগুলো। ওষুধটির এত দাম রাখা হচ্ছে যে গরিব মানুষের পক্ষে এ ওষুধটি কিনে করোনাচিকিৎসা করানো সম্ভব হবে না, যদি না তারা সরকারি সহায়তা পায়।
১০ দিনের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় রেমডেসিভির ইনজেকশন উৎপাদনের ন্যূনতম খরচ কত হতে পারে এর একটি হিসাব করেছে ‘জার্নাল অব ভাইরাস ইরাডিকেশন’ বা জেভিই। ন্যূনতম খরচ হিসাব করার ক্ষেত্রে জেভিআই- অ্যাক্টিভ ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রেডিয়েন্টসের (এপিআই) দাম, এপিআইয়ের সাথে ব্যবহৃত ইনঅ্যাক্টিভ উপাদানের (এক্সিপিয়েন্টস) দাম, প্রক্রিয়াকরণের (ফরমুলেশন) খরচ, প্যাকেটজাতকরণের খরচ এবং মুনাফা ধরে একটি দাম নির্ধারণের চেষ্টা করা হয়েছে।

 যেহেতু রেমডেসিভির হেপাটাইটিস সি, ইবোলাসহ অন্যান্য কিছু রোগের ওষুধ হিসেবে তৈরি হয়েছিল এবং করোনার জন্য আলাদা কোনো গবেষণা করে বের করতে হয়নি। তাই গবেষণার জন্য নতুন করে কোনো খরচ নেই। ইতোমধ্যে আবিষ্কৃত ওষুধ পুনর্ব্যবহার করা হচ্ছে। সে কারণে রেমডেসিভির উৎপাদনে আলাদা করে গবেষণার খরচ ধরা হয়নি। ফলে বাংলাদেশের ওষুধ কোম্পানিগুলোরও কোনো খরচ নেই। তারা মার্কিন মূল কোম্পানি গিলিয়াডের তৈরি রেমডিসিভির শুধুই কপি করছে। ‘প্যাটেন্ট অধিকারের মধ্যেও বাংলাদেশের ওষুধ কোম্পানিগুলো পড়ে না’ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকার দেশ বলে। স্বল্পোন্নত দেশ হলে তারা প্যাটেন্ট অধিকার রয়েছে এমন সব ওষুধই কপি করে নিজেদের বাজারে বিক্রি করতে পারে এবং দেশের বাইরেও বিক্রি করতে পারে। ফলে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে গবেষণার খরচও প্রযোজ্য হচ্ছে না।

জেভিআই রেমডেসিভির উৎপাদনের যে খরচ ধরেছে তা হলো- রেমডেসিভির ইনজেকশন প্রথম দিনে দিতে হবে ২০০ মিলিগ্রাম এবং দ্বিতীয় দিন থেকে দৈনিক ১০০ মিলিগ্রাম। ফলে ১০ দিনে রেমডেসিভির লাগবে এক হাজার ১০০ মিলিগ্রাম বা ১.১ গ্রাম বা ০.০০১১ কেজি। পণ্যের জাহাজীকরণ সম্পর্কিত অনলাইন ট্র্যাকিং ওয়েবসাইট ‘প্যানজিভা’ থেকে নেয়া তথ্যানুসারে রেমডেসিভিরের প্রতি কেজি এপিআইয়ের দাম চার হাজার ডলার। প্যানজিভা এসব তথ্য পেয়ে থাকে মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটির কাস্টসম সার্ভিস থেকে। প্যানজিভার কাছে রয়েছে সাত লাখ কোম্পানির দুই কোটি শিপিং রেকর্ড । এটা নিউ ইয়র্ক শহরে বিশ্ববাণিজ্য ডাটাভিত্তিক একটি কোম্পানি। আমদানি ও রফতানির সব তথ্য প্যানজিভার ওয়েবসাইটে পাওয়া যায়।
প্যানজিভার তথ্যানুসারে এক হাজার ১০০ মিলিগ্রাম বা ০.০০১১ কেজি এপিআইয়ের দাম পড়ে ৪.৪ ডলার। এর সাথে প্রক্রিয়াজাতকরণের খরচ, প্রক্রিয়াজাত করার সময় ২০ শতাংশ নষ্ট হতে পারে এর দাম ধরা হয়। উল্লিখিত খরচ যোগ করলে একটি ইনজেকশনের (এক ভায়াল) দাম পড়ে ৭.৪৮ ডলার। এর সাথে পরিবহন খরচ ১০ শতাংশ, মুনাফা ১০ শতাংশ এবং মুনাফার ওপর ২৭ শতাংশ ট্যাক্স ধরে জেভিআইয়ের হিসাবে রেমডেসিভিরে মোট খরচ হয় ৯ ডলার বা ৭৬৫ টাকা (১ ডলার = ৮৫ টাকা)।

 এক ভায়াল রেমডেসিভিরের দাম সব মিলিয়ে মাত্র ৭৬৫ টাকা খরচ পড়লেও বাংলাদেশের ওষুধ কোম্পানিগুলো প্রতি ভায়াল ইনজেকশনের দাম ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা পড়বে বলে ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছে। এসকেএফ নিজেদের মিডিয়ায় এবং বেক্সিমকো রয়টার্সের দিল্লি সংবাদদাতার মাধ্যমে নিউজ করিয়ে দামের এ ঘোষণাটি দিয়েছে। রেমডেসিভির কেবল মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের করোনা আক্রান্তকে ৫ থেকে ১০ ভায়াল ইনজেকশন দিতে হবে। সর্বোচ্চ ১০ ভায়াল ইনজেকশন লাগলে একজন রোগীর জন্য ৬০ হাজার টাকার ইনজেকশন লাগবে। রেমডেসিভিরের দামের বিষয়ে বাংলাদেশ ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের পরিচালক মো: রুহুল আমিন জানান, এসব ওষুধের দাম বাংলাদেশ ওষুধ প্রশাসন নির্ধারণ করে না। ওষুধ কোম্পানিগুলো নিজেরাই নির্ধারণ করে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক সাবেক উপদেষ্টা, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা: মোজাহেরুল হক এ বিষয়ে নয়া দিগন্তকে বলেন, বাজারে আসার আগেই দামের কথা দুটো ওষুধ কোম্পানি ঘোষণা দিয়েছে। সত্যিই এক ভায়াল রেমডেসিভিরের দাম ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা পড়লে এ দাম হবে গলাকাটা। ‘জার্নাল অব ভাইরাস ইরাডিকেশনের তথ্য সঠিক হলে এক ভায়াল রেমডেসিভিরের সর্বোচ্চ দাম ওষুধ কোম্পানি এক হাজার দুই শ’ থেকে দেড় হাজার টাকা নির্ধারণ করতে পারে। এর বেশি কিছুতেই হতে পারে না। অধ্যাপক মোজাহেরুল হক বলেন, এখনো রেমডেসিভির বাজারে আসেনি। আমি আশা করি ওষুধ কোম্পানিগুলো দাম কমিয়ে জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনবে।

অধ্যাপক মোজাহেরুল হক আরো বলেন, রেমডেসিভির কিন্তু করোনাভাইরাসের জন্য অব্যর্থ ওষুধ নয়। ল্যানসেটের তথ্য অনুযায়ী, এ ওষুধটি একজন করোনা আক্রান্তকে হাসপাতালে অবস্থানের সময় কমিয়ে দেয়। প্রচলিত অন্যান্য ওষুধ প্রয়োগ করলে একজন করোনা (কোভিড-১৯) আক্রান্ত রোগীকে ১৫ দিন হাসপাতালে অবস্থান করতে হয়। আর রেমডেসিভির প্রয়োগ করা হলে সে রোগীকে ১১ দিন অবস্থান করতে হবে। তা ছাড়া রেমডেসিভির করোনা আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু রোধ করতে পারে না। ল্যানসেটের এসব তথ্য বিবেচনা করেই আমাদেরকে ওষুধটি প্রয়োগ করতে হবে।


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us