মির্জা ফখরুলের সাথে যে আলোচনা করেছেন খালেদা জিয়া
খালেদা জিয়া - সংগৃহীত
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে গুলশানের বাসায় ডেকে নিয়ে কথা বলেছেন দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া৷ তাদের একান্ত বৈঠকে কী কথা হয়ে তা নিয়ে কৌতূহল আছে বেশ৷
এটা দলের নেতা-কর্মীরা যেমন জানতে চান, তেমনি আগ্রহ আছে সরকারেও৷ কিন্তু ফখরুল ইসলাম আলমগীর ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ‘‘রাজনৈতিক নয়, ওটা ছিল মূলত সৌজন্য সাক্ষাৎ৷ তিনি তো অসুস্থ৷ রাজনীতি নিয়ে কথা বলার সময় কোথায়!’’
১১ এপ্রিল রাত ৯টার পর খালেদা জিয়ার গুলশানের বাসায় মির্জা ফখরুল দেখা করেন৷ তিনি খালেদা জিয়ার বাসায় প্রায় দেড় ঘণ্টা ছিলেন৷ তারপরও খালেদা জিয়াকে ত্রাণ তৎপরতা ও দলের বর্তমান অবস্থা নিয়ে খালেদা জিয়াকে জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল৷ করোনায় চিকিৎসা, কৃষি উৎপাদন পর্যবেক্ষণ ও দলের ত্রাণ তৎপরতা পর্যবেক্ষণের জন্য জাতীয় করোনা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সেল গঠনের কথা তিনি জানান দলের চেয়ারপারসনকে৷ সারাদেশে কর্মহীন ও গরিব মানুষকে সহায়তার জন্য দলের পক্ষ থেকে নেতা-কর্মীদের চিঠি দেয়ার কথাও জানানো হয়৷
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘এগুলোতো সাধারণ আলোচনা৷ করোনা পরিস্থিতি, ত্রাণ তৎপরতা এগুলো তাকে জানানো হয়েছে৷ সৌজন্য সাক্ষাতে তো আর বিস্তারিত আলোচনা হয় না৷’’ তিনি দলের জন্য কোনো নির্দেশনা দিয়েছেন কিনা জানাতে চাইলে বলেন, ‘‘না কোনো নির্দেশনা দেননি, তিনি অসুস্থ৷’’
গত ২৫ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রিজন সেল থেকে ছয় মাসের জন্য মুক্তি পাওয়ার দিনখালেদা জিয়ার সাথে মির্জা ফখরুলের এক ঝলক দেখা হয়৷ দলের মহাসচিব ৪৮ দিন পর তার বাসায় গিয়ে দেখা করলেন৷ মুক্তি পাওয়ার পর তিনি ১৪ দিনের হোম কোয়ারান্টিনে ছিলেন৷ কোয়ারান্টিন শেষ হওয়ার পরও তার পরিবারের লোকজন ছাড়া দলের কোনো নেতার দেখা করার অনুমতি মেলেনি৷ মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘এতদিন তো করোনার কারণে আমরা কেউ তার সাথে দেখা করতে পারিনি৷ এবার তিনি দেখা করলেন৷’’
তবে এরমধ্যে দলীয় আর কোনো নেতা খালেদা জিয়ার সাথে দেখা করেননি বলে জানান বিএনপির চেয়ারপার্সনের প্রেস উইং-এর সদস্য শায়রুল কবির খান৷ তিনি জানান, ‘‘খালেদা জিয়ার পুত্রবধু ডা. জোবায়াদা রহমানের তত্ত্বাবধানে ঢাকায় তার বোন, ভাই, ভাইয়ের বউ তার দেখাশোনা করেন৷ এখন প্রতিদিন ইফতারির আগে তার বাসায় যান৷ আর তার ব্যাক্তিগত চিকিৎসক ডা. এ জেড এম জাহিদের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের চিকিৎসক দল তার চিকিৎসার দিকটা দেখছেন৷ তাকে এখন বাসায় রেখেই চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে৷ পরিস্থিতির কারণে আপাতত তিনি কোনো হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেনা না৷’’
খালেদা জিয়া দেশের বাইরে তার পরিবারের সদস্যদের সাথে টেলিফোনে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন৷ পরিবারের সদস্যদের বাইরে আপাতত তার যোগাযোগ সীমিত৷ বিএনপির এক নেতা জানান, ‘‘তিনিতো শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি পেয়েছেন৷ তাই তার যোগাযোগ শর্ত বজায় রেখেই হচ্ছে৷ তিনি তারেক রহমানের সাথে ফোনে কথা বলবেন এটাই তো স্বাভাবিক৷ তারেক রহমান তার বড় ছেলে৷ তিনি দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যানও৷’’
মির্জা ফখরুল খালেদা জিয়ার সাথে দেখা করার পর দলের অন্য নেতাদের এনিয়ে কিছু শেয়ার করেছেন বলেন জানা যায়নি৷ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘‘চেয়ারপার্সনের সাথে দলের মহাসচিবের কি কথা হয়েছে জানিনা৷ আর আমিও ফোন করে জানতে চাইনি৷ তবে হেলথ ইস্যু ছাড়া আলোচনার তেমন কোনো বিষয় নেই৷ আমার মনে হয় না তিনি এখন রাজনীতিতে সক্রিয় হবেন৷’’
খালেদা জিয়ার বাসায় তার নিরাপত্তার দিকটি দেখছেন তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা দলের সদস্যরা৷ নেতৃত্ব দিচ্ছেন মেজর জেনারেল (অব.) ফজলে এলহী আকবর৷ খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত কর্মকর্তা আব্দুস সাত্তার জানান, ‘‘সরকারের পক্ষ থেকে খালেদা জিয়াকে আলাদা কোনো নিরাপত্তা দেয়া হচ্ছে না৷ আমরা নিরাপত্তার জন্য পুলিশের আইজির কাছে আবেদন করা হয়েছে৷ কিন্তু কোনো জবাব এখনো পাওয়া যায়নি৷’’
খালেদা জিয়ার সাথে তার চিকিৎসক ও পরিবারের সদস্যদের বাইরে কেউ দেখা করার সুযোগ পাচ্ছেন না৷ করোনা এবং তারা শারীরিক অবস্থার কারণেই দেখা করার সুযোগ সীমিত৷ একমাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দু'দিন আগে দেখা করেছেন৷
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়৷ ওই দিনই তাকে কারাগারে পাঠানো হয়৷ পরে দুদকের আপিলে এই মামলায় সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর করা হয়৷ এরপর তাকে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় সাত বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়৷ ২০১৯ সালের এপ্রিল থেকে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের এর প্রিজন সেলে চিকিৎসাধীন ছিলেন৷
সূত্র : ডয়চে ভেলে