চীন-মার্কিন সর্বাত্মক সঙ্ঘাত আসন্ন?
চীন-মার্কিন সর্বাত্মক সঙ্ঘাত আসন্ন? - সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্রে নোবেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃত্যুহার অব্যাহতভাবে বাড়তে থাকার সাথে সাথে চীন-ওয়াশিংটনের মধ্যে একটি সর্বাত্মক সঙ্ঘাত সৃষ্টির আশঙ্কা ব্যাপকভাবে বাড়ছে বলে মনে হচ্ছে। ইতোমধ্যে চীনকে লক্ষ্য করে যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চপর্যায় থেকে যেসব কথাবার্তা বলা হচ্ছে তাতে স্পষ্ট যে, আমেরিকান প্রশাসন চীনের ব্যাপারে বড় কিছু করতে যাচ্ছে। আর এ বিষয়ে বেইজিং যে সত্যিকার অর্থে অনেক বেশি উদ্বিগ্ন সেটি বোঝা যায় চীনা কমিউনিস্ট পার্টির মুখপত্র গ্লোবাল টাইমসের সম্পাদকীয় ও অন্যান্য নিবন্ধ পাঠ করলে।
গত সংখ্যায় এই কলামে স্যামুয়েল হান্টিংটনের সভ্যতার সঙ্ঘাত তত্ত্বের নতুন ব্যাখ্যা হাজির করে আমেরিকান তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক নীতিনির্ধারকরা যে চীনকে পাশ্চাত্যের ১ নম্বর শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করছেন সেই বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছিল। এর পরে পেরিয়ে যাওয়া সপ্তাহের কিছু বেশি সময়ে উত্তেজনা বেশ বেড়েছে। হোয়াইট হাউজের কর্তাদের সাথে সুর মেলাচ্ছেন আরও কয়েকটি পশ্চিমা দেশের নেতারাও। কেউ কেউ চীন-বিরোধী এই প্রচারণাকে করোনার কারণে ব্যাকফুটে যাওয়া ট্রাম্পের নির্বাচনী লড়াইয়ে ফেরার প্রচেষ্টা হিসেবে মূল্যায়ন করেছিলেন। কিন্তু গ্লোবাল টাইমসের মন্তব্য হলো ট্রাম্প বা জো বাইডেন যে-ই পরবর্তী সময়ে হোয়াইট হাউজের দায়িত্ব নেন না কেন বৈরিতার এই ধারা অব্যাহত থাকবে। এতে একটি বিষয় স্পষ্ট যে, চীন-মার্কিন যে সম্ভাব্য সঙ্ঘাতের ডঙ্কা বেজে উঠেছে তা আমেরিকার কোনও এক শিবিরের বিষয় নয়। এটি যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘমেয়াদি রণকৌশলের একটি বিষয়। আর এর সাথে বিশেষ সংশ্লিষ্টতা রয়েছে মার্কিন রাষ্ট্রের গভীর প্রভাবশালী বলয়ের।
বিষয়টির গভীরতা বিবেচনা করে ‘অব্যাহত মার্কিন উস্কানি’র পরিপ্রেক্ষিতে চীনকে প্রস্তুত করা দরকার বলেও গ্লোবাল টাইমসের গত শুক্রবার সংখ্যার সম্পাদকীয়তে মন্তব্য করা হয়েছে। এর আগের দিন আমেরিকান প্রতিনিধি সভার সংখ্যালঘু নেতা কেভিন ম্যাকার্থি বেইজিংয়ের রাজনৈতিক হুমকির মোকাবেলায় রিপাবলিকান নেতৃত্বাধীন ‘চীন টাস্কফোর্স’ প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন। চীনের প্রতি ক্রমবর্ধমান বৈরিতা এবং করোনাভাইরাস মহামারী সম্পর্কে ট্রাম্প প্রশাসনের কড়া প্রতিক্রিয়ার জন্য চীনকে দোষ দেয়া রিপাবলিকান পার্টির এখন কার্যত মূল প্রচার কৌশল হয়ে উঠেছে।
ট্রাম্প সরকার, রিপাবলিকান আইনপ্রণেতা এবং ট্রাম্পপন্থী রক্ষণশীল গণমাধ্যমগুলো সম্প্রতি চীনের ওপর যে ব্যাপক আক্রমণ শুরু করেছে তাতে স্পষ্ট যে, এটি রিপাবলিকান শিবিরের প্রচারমূলক কৌশলের অঙ্গ। তবে চীনা পর্যবেক্ষকরা বিষয়টিকে সেভাবে দেখছেন না। তারা মনে করছেন, চীনবিরোধী এই তরঙ্গটি বিশেষভাবে ট্রাম্পের পুনরায় নির্বাচন
জয়ের জন্য তৈরি করা হয়েছে কি না, অথবা নির্বাচন শেষ হয়ে গেলে তা বিলুপ্ত হবে কি না, এসব বিষয়ে অনেকে বিভ্রান্তিতে রয়েছেন। গ্লোবাল টাইমসের গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ হলো, মার্কিন সমাজে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনের বিরুদ্ধে বৈরিতা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। চলমান চীনবিরোধী তরঙ্গ প্রকৃতপক্ষে বিশেষভাবে ট্রাম্পকে পুনরায় নির্বাচিত করার লক্ষ্যে কিছুটা ঠিক, তবে মার্কিন দীর্ঘমেয়াদি রণকৌশলের আদর্শের সাথেও এর মিল রয়েছে। এটি চীনের প্রতি বৈরিতাকে সামনে আরও উজ্জীবিত করবে।
পত্রিকাটির মন্তব্য, “আমেরিকার নির্বাচনের পরে তার বর্তমান চীন-নীতি অপরিবর্তিত থাকবে অথবা কিছুটা সামঞ্জস্যতা আনা হবে, তবে এটি পুরোপুরি পরিবর্তনের সম্ভাবনা কম। ট্রাম্প বা জো বাইডেন যিনিই নির্বাচিত হন না কেন, ‘চীনকে জবাবদিহি করুন’ প্রচার চালানো হবে। এটি এখন চীনের সাথে প্রতিযোগিতায় মার্কিন সমাজকে সচল করার একটি উপায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমনকি যদি ডেমোক্র্যাটিক পার্টি ক্ষমতা গ্রহণ করে তবে ট্রাম্প প্রশাসন যেভাবে করছে, তারাও অবশ্যই ‘চীনকে জবাবদিহি করতে হবে’ বলে সেভাবে চিৎকার করবে।”
বেইজিং মনে করছে, চীনের উত্থানের ফলে কিছু মার্কিন রাজনৈতিক অভিজাত যুক্তিবাদী চিন্তাভাবনা ত্যাগ করতে বাধ্য হচ্ছেন। তারা উদ্বেগ ও অহঙ্কারের সংমিশ্রণে আক্রমণাত্মকভাবে কাজ করতে পরিচালিত ‘চীন হুমকি’ অতিরঞ্জিত করছে। চীনকে আক্রমণ করা ধীরে ধীরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ‘রাজনৈতিক কৌশল’ হয়ে উঠেছে, যা চীন সম্পর্কিত বিষয়গুলো সম্পর্কে মার্কিন সমাজের উদ্দেশ্যমূলক বোঝাপড়াকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করে।’
বলার অপেক্ষা রাখে না যে, চীনের রাজনৈতিক ও সামাজিক ব্যবস্থা আমেরিকার চেয়ে আলাদা। তবে মার্কিন মূল্যবোধের ভিত্তিতে চীনের দোষ খুঁজে বের করার ক্ষেত্রে আমেরিকার আগ্রহ এখন অনেক গভীর হচ্ছে। আমেরিকানরা কেবল চীনকে আন্তর্জাতিকভাবে আক্রমণ করতে চাইছে তা নয়, বরং তাদের শ্রেষ্ঠত্বের বোধের কারণেও চীনকে চেপে ধরতে চাইছে। করোনাভাইরাস মহামারী মার্কিন ব্যবস্থার অনেক ঘাটতি প্রকাশ করেছে, কিন্তু মার্কিন অভিজাতরা তাদের ব্যর্থতা সেভাবে স্বীকার করতে চাইছেন না। সামনে চীনা কূটনীতিকের একটি বাক্য বা মূলধারার চীনা গণমাধ্যমের একটি শব্দ খুব দ্রুত ব্যাখ্যা করা এবং বেইজিংয়ের এক একটি ‘পাপ’ হয়ে উঠতে পারে।
চীন-বিরোধী আমেরিকানদের মধ্যে এখন জোরালো কণ্ঠস্বর হয়ে উঠেছেন খোদ মার্কিন রাষ্ট্রপতি ট্রাম্প এবং তার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও। এর সাথে কিছু মার্কিন সংসদ সদস্য, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এবং বেশ কয়েকটি মূলধারার গণমাধ্যম এখন চীনকে মূল লক্ষ্যবস্তু করছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান সরকার বৈশ্বিক উন্নয়নের প্রতি বেশ কয়েক বছর ধরেই উদাসীন ছিল এবং দেশটি অনেকটা একতরফা নীতি অনুসরণ করে চলেছে। করোনাভাইরাসের প্রভাব চীন পর্যন্ত যতক্ষণ সীমাবদ্ধ ছিল ততক্ষণ ট্রাম্প এ ব্যাপারে অনেকখানি নির্বিকার ছিলেন। ডোনাল্ড ট্রাম্প এমনকি সঙ্কট সফলভাবে পরিচালনার জন্য চীন এবং এর রাষ্ট্রপতি শি জিনপিংয়ের প্রশংসাও করেছিলেন। ভাইরাসটি আমেরিকানদের ক্ষতি করতে শুরু করার পরে, ট্রাম্প এবং তার দলের সদস্যরা একটি পরীক্ষাগারে করোনাভাইরাস উৎপাদন, বিশ্ববাসীর কাছে এর তীব্রতা গোপন করা এবং এ ভাইরাসের সংক্রমণ অন্যের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য চীনকে দোষ দিতে শুরু করেন। এখন ট্রাম্প এবং তার সহযোগীরা করোনাভাইরাসকে ‘চীনা ভাইরাস’ বলতে শুরু করেছেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেছেন যে, চীনের উহান শহরে একটি পরীক্ষাগারে করোনাভাইরাসটির উদ্ভব হওয়ার প্রমাণ রয়েছে। তবে ট্রাম্প তথ্য এবং গোয়েন্দা সূত্র উল্লেখ করতে অস্বীকার করেন। পরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও একই রকম অভিযোগ করেছেন। পম্পেও দাবি করেন যে, উহানের একটি পরীক্ষাগারে করোনাভাইরাসটির উদ্ভবের ‘বিশাল প্রমাণ’ রয়েছে। যদিও তিনি সাংবাদিকদের বলেছিলেন, বৈজ্ঞানিক দুর্ঘটনার সময় চীন সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে ভাইরাসটি মুক্তি দিয়েছিল নাকি ভুল করে এটির মুক্তি দিয়েছে সে বিষয়ে তিনি নিশ্চিত নন। পম্পেও আরও এগিয়ে গিয়ে দাবি করেছেন যে, ‘বিশ্বজুড়ে চীনা সংক্রমণের ইতিহাস রয়েছে’ চীনা পরীক্ষাগারগুলোর নিরাপত্তাব্যবস্থার নিম্নমানের কারণে। পম্পেও আরও উল্লেখ করেন যে, চীনা কর্তৃপক্ষ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিশেষজ্ঞদের সাথে সহযোগিতা করতে অস্বীকৃতি জানায়।
ট্রাম্প প্রশাসন এই রোগটিকে মহামারী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার আগে ভাইরাসটি নিয়ে কারসাজি এবং আমদানি মজুদ করে ও চিকিৎসা সরঞ্জামের রফতানি হ্রাস করে অন্যান্য দেশে এই রোগকে মহামারীতে রূপ দেয়ার জন্য চীনকে অভিযুক্ত করেছে। এসব অভিযোগ ইঙ্গিত দেয় যে, ট্রাম্প প্রশাসন চীন সরকারকে বিশ্বজুড়ে বিপুল অর্থনৈতিক ও অন্যান্য ক্ষয়ক্ষতির জন্য জবাবদিহির আওতায় আনার উদ্যোগ নেবে। প্রয়োজনে চীনকে শাস্তি দেয়ার জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনাও তৈরি করবে।
চীন সরকারের স্বচ্ছতার অভাব ভাইরাসটির বিশ্বব্যাপী বিস্তার সম্পর্কে আমেরিকান অভিযোগকে বেশ খানিকটা বিশ্বাসযোগ্যতা দিতে পারে। মার্কিন কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, চীন সরকার তার বিজ্ঞানীদের চুপ করিয়ে দিয়েছিল এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চিকিৎসা পেশাজীবী এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) বিশেষজ্ঞদেরকে ভাইরাসের উদ্ভবস্থল উহান শহরের ল্যাবগুলোতে প্রবেশ করতে দেয়নি। অধিকন্তু, তারা দাবি করে যে, চীনা কর্তৃপক্ষ তার জাতীয় উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য ডব্লিউএইচও কর্মকর্তাদের ব্যবহার করেছে। অন্য দিকে চীনা কর্মকর্তারা দাবি করেছেন যে, আমেরিকান কর্মকর্তারা অভ্যন্তরীণ ব্যবহারের জন্য মহামারীটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেন। চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মুখপাত্র জেঞ্জ শুয়াংয়ের মতে, আমেরিকান রাজনীতিবিদরা সঙ্কট মোকাবেলায় ব্যর্থতা থেকে জনগণের দৃষ্টি অন্য দিকে সরিয়ে নিতে চাইছে। প্রকৃতপক্ষে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চীন উভয় দেশের রাজনীতিবিদরা সঙ্কটটিকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করবেন। ঘরোয়া রাজনীতিতে তাদের কর্তৃত্ব বজায় রাখতে এবং আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে তাদের জাতীয় স্বার্থকে সর্বাধিকীকরণের লক্ষ্যে এ সঙ্কটটি কাজে লাগানোর চেষ্টা করবেন উভয় পক্ষ।
করোনাভাইরাস সঙ্কটের বিষয়ে আমেরিকান রাজনীতিবিদদের অতি সাম্প্রতিক প্রতিক্রিয়ায় মনে হচ্ছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যত দ্রুত সম্ভব এটা স্পষ্ট করে দেবে যে, আমেরিকা একক উদ্যোগের পরিবর্তে বৈশ্বিক উদ্যোগ গ্রহণের দিকে অগ্রসর হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একতরফাভাবে বৈশ্বিক বিষয়গুলোতে হস্তক্ষেপ না করারও সিদ্ধান্ত নিতে পারে। অবশ্য যখন ক্ষমতার বৈশ্বিক ভারসাম্য পরিবর্তনের প্রয়াসের কথা আসে তখন কোনও আমেরিকান সরকারকে উদাসীন থাকতে দেখা যায় না। মার্কিন প্রশাসন শিগগিরই বিশ্বব্যাপী এই ভাইরাস ছড়ানোর জন্য চীনকে দায়ী করতে তার সহযোগীদেরও রাজি করবে। যুক্তরাষ্ট্রকে অনুসরণ করে ইতোমধ্যে কিছু ইউরোপীয় দেশ এবং অস্ট্রেলিয়া অনুরূপ অভিযোগ করতে শুরু করেছে।
এটি কারও জন্য অবাক হওয়ার বিষয় নয় যে, বিশ্বের দু’টি বৃহত্তম অর্থনীতির মধ্যে বৈরিতা সামনে আরও জোরদার হচ্ছে। এর প্রভাব পুরো বিশ্বের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। ট্রাম্প প্রশাসন শিগগিরই চীনের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে, মার্কিন ঋণ দায়বদ্ধতা বাতিল করার বিষয় বিবেচনা করতে পারে এবং চীনকে শাস্তি দেয়ার জন্য নতুন বাণিজ্য নীতিমালা তৈরির মতো বিভিন্ন সরঞ্জামের ব্যবহার শুরু করতে পারে। এতে মনে হচ্ছে যে, আগামী মাস এবং বছরগুলোতে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-চীনা সংঘর্ষ এবং সঙ্ঘাতগুলো আরও গভীর ও তীব্র হবে। মার্কিন সরকার যখন রাজনৈতিক, কৌশলগত ও সামরিক ক্ষেত্রে বিরোধ ও সংঘর্ষ প্রসারিত করার সিদ্ধান্ত নেয়, তখন দেশটি একাধিক ফ্রন্টে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে। অর্থাৎ দ্বিপক্ষীয় সঙ্ঘাত কেবল বাণিজ্য-যুদ্ধের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। এক কথায়, করোনাভাইরাস সঙ্কট যদি ট্রাম্পের পুনর্নির্বাচনকে বিপন্ন করে, তবে তিনি চীনের বিরুদ্ধে অনেক কঠোর অবস্থান গ্রহণ করবেন। তবে দুই দেশের মধ্যে আন্তঃসংযুক্ততা ও পরস্পরের নির্ভরতার কারণে চীনকে এমন শাস্তি দেয়া সহজ হয় তো হবে না। কারণ চীন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে নিজস্ব সম্পদ এবং টুলসগুলোকে একত্র করার ক্ষমতা রাখে।
এসব কারণে চীনকে দীর্ঘমেয়াদি চ্যালেঞ্জের জন্য প্রস্তুত করতে মনোনিবেশ করছে দেশটির সরকার। দেশটির মূল বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি এবং সামরিক কৌশলগত সামর্থ্য বাড়ানোর উদ্যোগ নিচ্ছে। মার্কিন প্রযুক্তি রফতানি নিষেধাজ্ঞার কারণে যাতে চীন সঙ্কটে না পড়ে তার বিকল্প সন্ধানেরও চেষ্টা করছে। চীনকে সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে বলেও হুঁশিয়ার করে দেয়া হয়েছে। চীনের প্রতি মার্কিন সামরিক হুমকি মোকাবেলায় চীন তার পারমাণবিক অস্ত্রাগার সম্প্রসারণ এবং তার কৌশলগত আঘাত হানার সক্ষমতা জোরদার করার বিষয়টিও জরুরিভাবে ভাবছে।
চীনের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ সঙ্ঘাত বাধার অর্থ হবে বিশ্বের অন্য ছোট-বড় শক্তিগুলো তখন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। এ কারণে হান্টিংটনের থিউরির বরাত দিয়ে বলা হচ্ছে, ইসলাম এখন প্রধান মনোযোগ আর হবে না, যেটি ২০ বছর ধরে আমরা দেখে আসছি। ইসলামিক শক্তির সাথে যুক্তরাষ্ট্র এবং চীন দুই দেশই সমান্তরালভাবে সমঝোতার সম্পর্ক কামনা করতে পারে। এর প্রভাব মধ্যপ্রাচ্যের ওপরও দৃশ্যমান হয়ে উঠতে পারে।
গ্লোবাল টাইমস বলেছে, মার্কিন মিত্রসহ বিশ্বের আরও অনেক দেশকে একত্রিত করতে চীনা উদ্যোগ অবশ্যই বাড়াতে হবে। এ লক্ষ্যে চীনের এই দেশগুলোর সাথে সাধারণ স্বার্থ প্রসারিত করতে হবে, পার্থক্য প্রসারের পরিবর্তে তা সঙ্কীর্ণ করার চেষ্টা করতে হবে এবং তাদের বোঝাতে হবে যে, একটি শক্তিশালী চীন তাদের জাতীয় স্বার্থেই প্রয়োজন রয়েছে এবং বিদ্যমান পার্থক্যগুলো তাদের সাথে চীনের সম্মানজনক সম্পর্কে প্রতিবন্ধক হবে না।
তবে একটি বিষয় লক্ষণীয় যে, যুক্তরাষ্ট্র চীনকে যতটা যুদ্ধক্ষেত্রের সামনে নিয়ে আসতে চাইছে বেইজিং কিন্তু সেভাবে চাইছে
না। চীনা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চীন-মার্কিন সম্পর্কে অতীতের স্তরে ফিরে আসা যদি অসম্ভব হয়ে পড়ে, তবুও শীতল যুদ্ধ ধরনের সঙ্ঘাত এড়ানো এখনও সম্ভব। চীনের মার্কিন উস্কানিতে সহজেই সাড়া দেয়ার বিষয়টি এড়ানো উচিত এবং আমেরিকার সাথে কৌশলগতভাবে চলাচলের জন্য ধৈর্য রাখতে হবে বেইজিংকে।
বলা হচ্ছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রায়ই চীনকে উসকে দেয়, অন্য কিছু দেশ চীনের সাথে লেনদেন করার ক্ষেত্রে তাদের সুবিধা বাড়ানোর সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করতে পারে। এ জাতীয় পরিস্থিতিতে চীনকে হয় যথাযথ প্রতিক্রিয়া জানাতে হবে অথবা কৌশলগতভাবে এগুলো সহ্য করতে হবে। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম শক্তি হওয়া সহজ নয়। বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়ে চীনের শান্ত থাকাই উচিত।
চীন ধৈর্য ধরতে চাইলেও যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে সেটি সম্ভব হবে কি না, বলা কঠিন। যুক্তরাষ্ট্রে নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে সামনের দৃশ্যপট আরও স্পষ্ট হতে শুরু করবে। তবে মনে হচ্ছে- যে মাত্রারই হোক না কেন, একটি সঙ্ঘাত আসন্ন।
mrkmmb@gmail.com