করোনা থেকে কিভাবে রক্ষা পাবেন হাঁপানি রোগীরা?
করোনা থেকে কিভাবে রক্ষা পাবেন হাঁপানি রোগীরা? - সংগৃহীত
হাঁপানি বা অ্যাজমা হলো শ্বাসজনিত অসুস্থতা যার ফলে ঘন ঘন শ্বাসকষ্ট ও শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা দেখা যায়। ২০১৬ সালে গ্লোবাল বার্ডেন অফ ডিজিজ স্টাডি অনুসারে, অনুমান করা হয়েছিল যে বিশ্বে ৩৩৯ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ এই দীর্ঘস্থায়ী রোগে ভুগেছে। অ্যাজমায় ভুগে মৃত্যুর হার উল্লেখযোগ্য। তবে করোনাভাইরাস তথা কোভিড-১৯ সঙ্কটের মধ্যে অ্যাজমা দিবসের গুরুত্ব সাধারণ সব মানুষের কাছেই বিশেষ হয়ে দাঁড়িয়েছে। করোনভাইরাস হাঁপানি রোগীদের যে ঝুঁকির মুখে ফেলে এবং এই অবস্থায় অবশ্যই যে প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপগুলো অনুসরণ করতে হবে সে সম্পর্কেই দেখে নেওয়া যাক এক ঝলকে।
হাঁপানির আক্রমণে রোগীর শ্বাসনালীর আস্তরণে ফোলাভাব দেখা দেয় যা শ্বাসনালীকে সঙ্কুচিত করে তোলে এবং পরিবেশে উপস্থিত ধুলো এবং অন্যান্য দূষক শ্বাসনালীকে সহজেই আক্রমণ করে। এই ধরনের আক্রমণের সময়, একজন রোগীর শরীরে ফুসফুসের ভিতরে এবং বাইরে বায়ু প্রবাহে হ্রাস ঘটে। ওষুধ ও ইনহেলার ব্যবহার করে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গড়েই হাঁপানিকে কাবু করা যায়।
করোনা ভাইরাসে উদ্ভূত ঝুঁকি এবং প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলি দেখে নিন
করোনা ভাইরাস হাঁপানির রোগীদের জন্য প্রাণঘাতী হয়ে উঠছে। দীর্ঘদিন ধরে যারা এই রোগে আক্রান্ত এবং যাদের প্রতিরোধ ক্ষমতা কম সেই রোগীদের মধ্যেই সংক্রমণের ঝুঁকি ও তীব্রতা বেশি বলে মনে করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত হাঁপানির আক্রমণ এবং করোনা ভাইরাস সংক্রমণের মধ্যে চিকিৎসাগতভাবে কোনো নিশ্চিত সংযোগ পাওয়া যায়নি, তবে দুই'ই মানুষের শ্বাসযন্ত্রকে প্রভাবিত করে বলে আশঙ্কা থেকেই যায়। এছাড়াও, ফ্লু ও করোনা ভাইরাস রোগের মতো ভাইরাসজনিত সংক্রমণের মতো অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিন্ড্রোম (সার্স) হাঁপানির রোগীদের আরো ঝুঁকির মধ্যে ফেলে।
কোভিড -১৯ : হাঁপানি রোগীদের প্রতিরোধের পদক্ষেপ
সাধারণ পরিস্থিতিতে, হাঁপানি স্টেরয়েড স্প্রেয়ের মতো মৌখিক ইনহেলার দিয়ে কাবু করা যায়। রোগীরা নির্ধারিত ওষুধ নিয়মিত খেলে হাঁপানি নিয়ন্ত্রণে থাকে। ওষুধের ব্যবহার হঠাৎ বন্ধ হওয়ার ফলে রোগীদের তীব্রতর হাঁপানিতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। এই জাতীয় ঘটনা করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ঝুঁকিও বাড়িয়ে তুলতে পারে। সুতরাং, রোগীদের জন্য পরামর্শ, নিয়মিত ওষুধ চালিয়ে যেতে হবে, তবে নিজেকে সুরক্ষিত এবং প্রস্তুত রাখতে নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করতে হবে।
১. হাঁপানির রোগীদের অবশ্যই সমস্ত সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে যেমন গণ পরিবহন এড়ানো বা জনসাধারণের ভিড়ের জায়গায় ঘুরে বেড়ানো বন্ধ করতে হবে।
২. অন্য ব্যক্তির থেকে দুই মিটার বা তার বেশি দূরত্বে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা দরকার।
৩. বর্তমান সময় বাড়ির বাইরে কোনো অপ্রয়োজনীয় কাজে বেরনো এড়ানো উচিত।
৪. এমনকি কোনো লকডাউন বা কার্ফু না থাকলেও মহামারী নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত বাড়িতে থেকেই কাজ করা জরুরি।
৫. আরেকটি বড় সতর্কতা হ'ল আপনার অবস্থার তীব্রতা সম্পর্কে ভালভাবে সচেতন হওয়া।
৬. হাত ধোয়ার স্বাস্থ্যবিধি এবং বসবাসের জায়গার স্যানিটেশনের মতো আরও পদক্ষেপগুলিও মেনে চলতে হবে।
করোনা ভাইরাসের মহামারি চলাকালীন হাঁপানি পরিচালনা করার পদক্ষেপ
ইনহেলার ব্যবহার করুন : আপনার অবস্থা নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং আক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে মহামারি চলাকালীন নিয়মিত আপনার ইনহেলার ব্যবহার করুন।
নিজের শরীর নিজে বুঝুন : অ্যাজমা এক একজনকে এক একভাবে আক্রমণ করে। কেউ কেউ ঠাণ্ডা হাওয়াতে আক্রান্ত হন, অন্যরা দূষক ও ধূলিকণায় এবং এমনকি গন্ধেও আক্রান্ত হন; বিভিন্ন খাবার বা পানীয় এই সমস্যা আরো বাড়িয়ে তোলে। সুতরাং, নিজের শরীর সম্পর্কে সচেতন হন এবং বর্তমান সময়ে সেগুলো এড়িয়ে চলুন।
রেকর্ড রাখুন : হাঁপানি, বুকে ব্যথা এবং শ্বাস নিতে সমস্যা ইত্যাদির মতো অনেক হাঁপানির লক্ষণ করোনা ভাইরাসেও দেখা যায়। হাঁপানির রোগীরা সাধারণত তাদের শ্বাসনালীতে শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি নির্ধারণের জন্য পিক ফ্লো মিটার ব্যবহার করেন। ফ্রিকোয়েন্সি এবং ওষুধের ধরণ এবং অন্যান্য বিভিন্ন বিবরণ সাবধানে নথিভুক্ত করা উচিত, এবং সবসময় ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত।
সঠিক ইনহেলার প্রস্তুত রাখুন : অবস্থার উপর নির্ভর করে ইনহেলারগুলোতে ব্যবহৃত ওষুধের কম্পোজিশন বা ডোজ আলাদা হতে পারে। জরুরি ক্ষেত্রে কোন ইনহেলার ব্যবহার করতে হবে সে সম্পর্কে আপনাকে সচেতন থাকতে হবে। ইনহেলারটি মেয়াদোত্তীর্ণ না হয়েছে তা নিশ্চিত করবেন।
সূত্র : এনডিটিভি