আফগানিস্তান থেকে যেসব ফায়দা হাসিল করতে চায় পাকিস্তান
আফগানিস্তান থেকে যেসব ফায়দা হাসিল করতে চায় পাকিস্তান - সংগৃহীত
আফগান তালেবানের সাথে শান্তি আলোচনা শুরু হয় ২০১০ সালের নভেম্বরে এবং আরেকটি প্রয়াস দেখা যায় ২০১৫ সালে। আর কাবুলে জাতীয় ঐক্য সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর পাকিস্তান ও আফগানিস্তান একটি সমঝোতা স্মারকে সই করে, যাতে ইসলামাবাদ প্রতিশ্রুতি দেয় যে তালেবানকে আলোচনার টেবিলে আনার প্রয়াসকে সমর্থন করবে। তারপর ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও আফগান সরকারি কর্মকর্তারা তালেবানের সাথে বেশ কয়েক দফা আলোচনা করে। কিন্তু কোনোটাই ফলপ্রসূ হয়নি।
শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানের ওপর অব্যাহত মার্কিন চাপ এবং তালেবানকে ক্রমবর্ধমান প্রণোদনা প্রস্তাব করার পর গ্রুপটির সাথে যুক্তরাষ্ট্রের একটি শান্তিচুক্তি হয়। কিন্তু আন্তঃআফগান শান্তিপ্রক্রিয়ায় পাকিস্তানের ভূমিকা কী হবে এবং তা তাতে সহায়ক না বাধার সৃষ্টি করবে, তা প্রশ্ন হিসেবে দেখা দিয়েছে।
আফগান শান্তিপ্রক্রিয়ায় পাকিস্তানের প্রধান লক্ষ্যগুলো হচ্ছে-
মার্কিন চাপ হ্রাস
পাকিস্তান বারবার বলে আসছে যে সে আফগানিস্তানের যুদ্ধে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশ এবং ২০০১ সাল থেকে এজন্য ১২০ বিলিয়ন ডলারের বেশির ক্ষতির শিকার হতে হয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান সম্পর্ক তিক্ত হয়ে পড়ে এবং ২০১৮ সাল থেকে পাকিস্তানে মার্কিন অর্থনৈতিক ও সামরিক সহায়তা বন্ধ করা হয়েছে।
ইসলামাবাদ দৃশ্যত তালেবানের সাথে শান্তি আলোচনায় আরো বড় ভূমিকা পালন করার চেষ্টা করছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক বাড়ানোর চেষ্টা করছে। বস্তুত, শান্তিপ্রক্রিয়ায় পাকিস্তানের আরো ইতিবাচক ভূমিকা ইসলামাদের ওপর মার্কিন চাপ হ্রাস করবে।
পাকিস্তানের মধ্যস্ততাকারীর ভূমিকা সুফল দিতে পারে। এতে করে অর্থ পাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন নিয়ে মার্কিন অভিযোগ লাঘব করতে পারে, আন্তর্জাতিক সম্পর্কের পরিধি বাড়াতে পারে, মার্কিন অর্থনৈতিক সহায়তা আবার শুরু করতে পারে।
আরেকটি মাত্রায় পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের তার জনগণকে দেয়া একটি প্রতিশ্রুতিতে বলা হয়েছিল যে আফগানিস্তানসহ প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে সহযোগিতা সম্প্রসারণ করা হবে এবং আফগান সীমান্ত-সংলগ্ন প্রদেশগুলোতে সরকারি উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে। তালেবানের সাথে একটি শান্তিচুক্তি এসব নীতি বাস্তবায়নে সহায়ক হবে।
অন্যদিকে অভিবাসীদের চ্যালেঞ্জ পাকিস্তানের অর্থনীতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। আফগানিস্তানে মধ্যস্ততাকারীর ভূমিকা পালন করার মাধ্যমে আফগান উদ্বাস্তুদের দেশে ফেরত পাঠানোর পরিকল্পনা করতে পারে পাকিস্তান।
ভূ-রাজনৈতিক উদ্দীপনা
আফগানিস্তানে পাকিস্তানের উপস্থিতি ও প্রভাবের ইতিহাসও ভূরাজনীতি ও ঐতিহাসিক উপাদানে (পশতুস্তান ও ডুরান্ড নিয়ে সঙ্ঘাত) প্রভাবিত। গত কয়েক দশক ধরে পাকিস্তানি রাজনীতিবিদেরা তাদের জাতীয় স্বার্থের আলোকে আফগানিস্তানে সম্পৃক্ত এবং আফগানিস্তানে তালেবানকে সহায়তার মাধ্যমে এসব প্রয়াস তাদের সামরিক শক্তিকে সুসংহত করছে।
অন্যদিকে ভারতের বিরুদ্ধে দেশের কৌশল শক্তিশালী করা এবং ভরতের বিরুদ্ধে আঞ্চলিক মিত্রদের শক্তিশালী নেটওয়ার্ক তৈরী করা হবে আফগানিস্তানে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রনীতির আরেকটি প্রধান লক্ষ্য। ফলে তালেবানের সহায়তায় আফগানিস্তানে ভারতীয় অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা প্রভাব হ্রাস করার চেষ্টা করতে পারবে পাকিস্তান।
রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা উদ্দেশ্য
সন্দেহাতীতভাবেই বলা যায়, গত চার দশক ধরে আফগানিস্তানের রাজনৈতিক ও সামরিক ঘটনাপ্রবাহে পাকিস্তান বড় ধরনের প্রভাব রেখেছে। আন্তঃআফগান ও তালেবান-যুক্তরাষ্ট্র আলোচনা প্রক্রিয়ায় মধ্যস্ততাকারীর ভূমিকা পালনের মাধ্যমে কাবুলে একটি সহযোগিতামূলক সরকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দৃশ্যত আফগানিস্তানের রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব থেকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভূখণ্ডগত দাবি প্রতিরোধ সৃষ্টির চেষ্টা করছে পাকিস্তান।
ফলে আফগানিস্তানে তালেবান যদি পূর্ণ ক্ষমতা গ্রহণ করতে না পারলেও তারা শান্তিপ্রক্রিয়ার মাধ্যমে সরকার কাঠামো ও শক্তিতে অংশ নিতে পারবে। এটা পাকিস্তানের অন্যতম সেরা বিকল্প হতে পারে।
অধিকন্তু, কাবুলে আরো বড় রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করার লক্ষ্যে তালেবানকে সহায়তা করে আফগানিস্তানে পাকিস্তান তার স্বার্থ নিশ্চিত করার জন্য শান্তি আলোচনাকে ব্যবহার করছে।
বস্তুত, তালেবানের ওপর প্রভাবের আলোকে পাকিস্তানিরা তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী শান্তি আলোচনা ব্যবস্থাপনা করার চেষ্টা করছে। একইসাথে আফগাস্তিানে নিজের নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক সুবিধা হাতছাড়া করতে চায় না পাকিস্তান আফগাস্তিানে তালেবানের সাথে শান্তি চায় পাকিস্তান। তবে তা ইসলামাবাদের নিজস্ব হিসাবের আলোকে।
পাকিস্তানের জন্য আফগানিস্তানের শান্তিপ্রক্রিয়া এক ধরনের কৌশলও। এর মাধ্যমে প্রতিবেশী দেশটিতে ইসলাবাদের স্বার্থে সার্বিক কৌশল পূরণ হবে। এসব পরিস্থিতিতে আফগান শান্তিপ্রক্রিয়ায় পাকিস্তানের দৃষ্টিভঙ্গি তার নিজের জাতীয় স্বার্থের বিবেচনায় আলোচনায় বাধা সৃষ্টির বদলে তা বরং আরো ইতিবাচক হবে।
এশিয়া টাইমস