মহানবী (সা.) সর্বপ্রথম হোম কোয়ারেন্টিন চালু করেছিলেন : রাশেদা কে চৌধুরী

ইকবাল মজুমদার তৌহিদ | May 11, 2020 06:26 pm
রাশেদা কে চৌধুরী

রাশেদা কে চৌধুরী - সংগৃহীত

 

করোনাভাইরাসের বিস্তারের এই সময়ে মার্কেট শর্তসাপেক্ষে খুলে দেয়ার সরকারি সিদ্ধান্তের ব্যাপারে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী নয়া দিগন্তকে বলেছেন, গত দুই দিনে আগের চেয়ে বেশি করোনা পজিটিভ রোগী পাওয়া গেছে। এর একটি অবশ্য কারণ আছে। কারণ আগের চেয়ে বেশি সংখ্যায় টেস্ট করা হচ্ছে। আমার মনে হয় টেস্টের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হলে আক্রান্তের সংখ্যা আরো বাড়বে। আমি যতটুকু জানি ৩০ ভাগ লোকের কোনো সিম্পটম থাকে না। তাই আমি বলব সবচেয়ে বড় কথা আমরা ঝুঁকি কেন নেব? এক্ষেত্রে জীবিকার কথা বলা হচ্ছে। এটা যদিও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তবে জীবনের চেয়ে বেশি নয়। জীবন না থাকলে জীবিকা দিয়ে কী হবে? তাই আমাদের উচিত জীবনের ঝুঁকি কমিয়ে জীবিকার ব্যবস্থা করা। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক এই উপদেষ্টা আরো বলেন, আমরা যদি বিদেশের ফ্লাইটগুলো আরো আগে বন্ধ করে দিতাম তাহলে এতো রোগি আসত না। আমি বলব বিনা শুল্কে আমরা ইতালি-ফ্রান্স থেকে এই ভাইরাসটি বয়ে এনেছি।

রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, মানুষের কাছে টাকা নেই তাহলে মার্কেটগুলোতে কারা যাচ্ছে? এতে কাদের পারপাস সার্ভ হলো? একটা ঈদে মার্কেট না করলে কী হবে? জীবনের চেয়ে কি শপিং করা বড়? সরকারের জরিমানা করা এক জিনিস আর নিজের বিবেক আরেক জিনিস এটা আমাদের বুঝতে হবে। তাই আমি বলব, সব ক্ষেত্রে সরকারের দোষ দেয়া যাবে না। অনেক ক্ষেত্রে সরকারের নির্দেশনা মানা হচ্ছে না। বিশেষ করে গ্রাম-গঞ্জে সচেতনতার অভাবে মানুষ বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। তিনি বলেন, মসজিদগুলো কখনো বন্ধ করা উচিত নয়। তবে সরকার প্রথম যে সিদ্ধান্ত দিয়েছিল সে সিদ্ধান্ত মেনে নামাজ আদায় করা উচিত ছিল। এটা বলা উচিৎ না তবুও বলছি গ্রামের অনেক হুজুর মনে করেন যে মসজিদে অনেক বেশি লোক জড়ো হয় ইবাদত করলে রোগ ব্যাধি চলে যাবে। কিন্তু তারা এটা জানেন না যে চৌদ্দ শ' বছর আগে মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাহু আলাইহিস সালাম সর্বপ্রথম হোম কোয়ারেন্টাইন ব্যবস্থা চালু করেছিলেন। তখনকার সময় তিনি ও ইসলাম কতটা সায়েন্টেফিক ছিলেন তা বোঝা যায় এতে। এখন যা হচ্ছে তা তাদের অজ্ঞতা ও বই পুস্তক না পড়ার ফল। সর্বশেষ আমি বলব পরিস্থিতিটা মোটেও ভালো নয়। তাই খুব সাবধানতার সাথে সকল সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে মূর্খদের মাধ্যমে সমাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। ক্ষতিগ্রস্ত হয় শিক্ষিত মানুষের মূর্খ আচরণের জন্য।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার নয়া দিগন্তকে বলেন, এরকম পরিস্থিতিতে লকডাউন শিথিল করার ব্যাপারে সরকারের কারিগরি ও অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা উচিৎ ছিল। আমি যতটুক জানি, সরকারের যে কারিগরি টিম করা হয়েছে এ ব্যাপারে তাদের সাথেও পরামর্শ করা হয়নি। বরং বিশেষজ্ঞরা মনে করেন লকডাউন শিথিল করার কারণে সংক্রমণ বাড়বে। এরকম পরিস্থিতি কী করণীয় জানতে চাইলে সুজন সম্পাদক বলেন, যে সকল স্থানে এখনো পর্যন্ত লকডাউন শিথিল করা হয়নি সেসব স্থানের ব্যাপারে আরো সাবধানতা অবলম্বন করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যে সকল স্থানে লকডাউন শিথিল করা হয়েছে সে সকল স্থানে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সকল কার্যক্রম পরিচালিত হয় সেজন্য মনিটরিং করতে হবে। আর যারা সংক্রমিত হবে তাদের চিকিৎসার খরচ সরকারকে বহন করতে হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন নয়া দিগন্তকে বলেন, সরকার সারাদেশে লকডাউন নয়, শুধুমাত্র সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। তবে কিছু কিছু আক্রান্ত এলাকায় লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। তবে সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয় এটা যে যখন করোনা সংক্রমকের সংখ্যা দেশে সবচেয়ে বেশি তখন সরকার লকডাউন শিথিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সরকারের তথ্য অনুযায়ী গতকালকে আক্রান্তের সংখ্যা ও মৃতের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি ছিল। তিনি আরো বলেন, কোনো দেশে যখন আক্রান্তের সংখ্যা নিচের দিকে নামতে থাকে তখন লকডাউন শিথিল করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কিন্তু আমাদের সরকার যখন আক্রান্তের সংখ্যা উপরের দিকে বাড়ছে তখন লকডাউন শিথিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটা আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত ছাড়া আর কিছু নয়। জনগণ খুব শিগগিরই সেটা বুঝতে পারবে। আমি মনে করি এই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে আরো কড়াকড়িভাবে লকডাউন আরোপ করার সরকারের হাতে এখনো সময় আছে।

বর্তমান পরিস্থিতিতে লকডাউন শিথিল করলে করোনা প্রকোপ বৃদ্ধি পাবে কিনা জানতে চাইলে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য নয়া দিগন্তকে বলেন, আমি নিশ্চিত না যে কোনো বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ এর মাধ্যমে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষণ, অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ না বাণিজ্যিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে সেটি আমি নিশ্চিত না। আমার এই বিষয়টা জানার খুব আগ্রহ। তিনি বলেন, আমি লকডাউন শিথিলের বিপক্ষে। লকডাউন শিথিল করার মতো পরিস্থিতি এখনো তৈরি হয়নি। এজন্য আরো সময় নেয়া প্রয়োজন আছে।


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us