ভারতের স্বপ্ন কি পূরণ হবে?
শি ও মোদি - সংগৃহীত
কোভিড-১৯-পরবর্তী বিশ্বে চীন থেকে সরে আসারা সহ বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার প্রয়াসে জমি আরো সহজে প্রাপ্তি, দ্রুত ছাড়পত্র, শিথিল শ্রম আইন ও কর অবকাশ নিশ্চিত করা ইত্যাদি অনেক প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে ভারত।
কয়েকটি ভারতীয় রাজ্য ইতোমধ্যেই নিজস্ব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য তামিল নাড়ু ও অন্ধ্র প্রদেশ জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, সিঙ্গাপুর, জার্মানি ও যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার জন্য একটি টাস্ক ফোর্স গঠন করেছে।
তামিল নাড়ুর টাস্ক ফোর্সের প্রধান এন মরুগনান্দম বলেন, আমরা ওষুধ, ইলেকট্রনিক্টস, গাড়ির খুচরা যন্ত্রাংশ ও মোবাইল ফোন নির্মাণ খাত জোরদার করছি। আমরা এসব খাতে বিনিয়োগকারী আশা করছি। তিনি বলেন, এক জরিপে দেখা গেছে, চীনের শেনঝেনের চেয়ে তামিল নাড়ুর শ্রীপেরুমবুদরে বেতন ৩০ ভাগ কম। অবকাঠামো ও নির্মাণের দিক থেকে ভারতে তামিল নাড়ুর অবস্থান বেশ উঁচুতে।
অন্ধ্র প্রদেশও এবার আশাবাদী। উল্লেখ্য, গত বছর নীতিগত সমস্যা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে দীর্ঘসূত্রতার কারণে এখান থেকে একটি সিঙ্গাপুরি প্রতিষ্ঠান সরে গিয়েছিল। অন্ধ্রপ্রদেশের শিল্পমন্ত্রী গৌতম রেড্ডি বলেন, আমাদের রয়েছে স্বচ্ছ প্রশাসন, পরিষ্কার সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া।
তিনি বলেন, এই রাজ্যের বিদ্যুৎ উদ্বৃত্ত তুলনামূলকভাবে পিছিয়ে থাকলেও দীর্ঘ উপকূলীয় রেখা একে নৌ ও পেট্রোক্যামিক্যাল করিডোর হিসেবে উপযোগী করে তুলেছে।
উত্তর প্রদেশ সরকার প্রধানত জাপানি প্রতিষ্ঠানের দিকে নজর দিয়েছে। তারা তাদের জন্য বিশেষ সহায়তা ডেস্ক চালু করেছে। এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রায় ২৫ হাজার হেক্টর জমি আলাদা করে রাখা হয়েছে।
উত্তর প্রদেশের বিনিয়োগ ও রফতানি মন্ত্রী সিদ্ধার্থ নাথ সিং শুক্রবার টুইট করে জানান যে রাজ্যটি চীন থেকে সরে আসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে আকৃষ্ট করার জন্য কাজ করছে। তারা জাপানিদের জন্য খুবই সহায়ক পরিবেশের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। চীন থেকে প্রতিষ্ঠানগুলোকে সরিয়ে আনতে জাপান ২.২ বিলিয়ন ডলারের অর্থনৈতিক প্রণোদনা প্যাকেজের কথা ঘোষণা করেছে।
রাজ্য পর্যায়ের এসব প্রয়াস তদারকি করছে কেন্দ্রীয় সরকার। ৩০ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সভাপতিত্বে একটি সভায় বিদেশী বিনিয়োগকারীদের ভারতে আকৃষ্ট করার কৌশল নিয়ে আলোচনা হয়।
একটি শিল্প সংস্থার প্রধান, তিনি নাম প্রকাশ করতে চাননি, বলেন যে ভারতে বিনিয়োগ জোরদার করার জন্য কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সাথে তিনি কাজ করছেন। তিনি বলেন, শিগগিরই কাজ শুরু হবে এবং কিছু সাহসী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তিনি স্ট্রেইটস টাইমসকে বলেন, আমরা ইতোমধ্যেই কিছু উদ্যোগ দেখছি। তিনি শিথিল শ্রম আইন প্রণয়নের কথা উল্লেখ করেন।
ভারত সরকার ২১ মার্চ দেশে ইলেকট্রনিক্স ম্যানুফেকচারিং (বিশেষ করে মোবাইল ফোন) খাতে ৪০৯.৯৫ বিলিয়ন রুপি (৭.৬৬ বিলিয়ন ডলার) বরাদ্দ করার কথাও ঘোষণা করেছে।
সরকার এসব উদ্যোগ গ্রহণের প্রেক্ষাপটে কোম্পানিগুলো লাল ফিতার দৌরাত্ম্য হ্রাস, অনিশ্চয়তাপূর্ণ নীতি পরিবর্তন, উৎপাদন ও করের উচ্চ মূল্যের মতো বিষয়গুলোর সংশোধন দাবি করছে। ২০১৮ সালের এপ্রিল থেকে ২০১৯ সালের আগস্ট পর্যন্ত ৫৬টি প্রতিষ্ঠান চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার বাণিজ্য বিরোধের সময় চীন থেকে অন্যান্য দেশে চলে গেছে। এসবের মধ্যে ভিয়েতনামে গেছে ২৬টি, তাইওয়ানে গেছে ১১টি, থাইল্যান্ডে গেছে আটটি। মাত্র তিনটি কোম্পানি গেছে ভারতে।
ছয় বছর ধরে ভিয়েতনামে সক্রিয় ভারতীয় ব্যবসায়ী উপদেষ্টা কৃতিজ চৌধুরী বলেন, ভিয়েতনাম যেসব প্রস্তাব দিচ্ছে, সেগুলোর সাথে তাল মেলাতে হলে ভারতকে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে।
তিনি বলেন, কোম্পানিগুলো দীর্ঘ মেয়াদের কথা চিন্তা করে ভিয়েতনামে যাচ্ছে।
দিল্লিভিত্তিক ইতিহাসবিদ ও কৌশলবিদ ড. জোরাওয়ার দৌলেত সিং বলেন, কোভিড-১৯-পরবর্তী বিশ্বে বৈশ্বিক ম্যানুফেকচারিং খাতে দ্রুত বাজার ধরার ভারতের ধারণাটি অতিরঞ্জিত। কারণ গত দশকে ভারতের শিল্প অর্থনীতি দুর্বল হয়ে পড়েছে, প্রশিক্ষণ ও শিক্ষার অভাবে দেশের শ্রমশক্তির মান বেশ নাজুক হয়েছে।
তিনি বলেন, এখন যে অবস্থা তাকে ভারতের পক্ষে চীনের বিকল্প হওয়া সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, ভারতের পুনর্গঠন প্রক্রিয়া এবং দক্ষিণ এশিয়ার সাথে পূর্ব এশিয়াকে সংযুক্ত করার কাজে চীনের পাশাপাশি জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও অন্যান্য দেশকে অংশীদার বিবেচনা করা উচিত। তবে এর আগে ভারতের প্রয়োজন ব্যাপকভিত্তিক শিল্প কৌশলের রূপরেখা প্রণয়ন। ভারতীয় নীতি নির্ধারকদের অস্থায়ী সুযোগ সন্ধানী বাগাড়ম্বড়তায় কাজ হবে না।
স্ট্র্যাইটস টাইমস