লিপুলেখ নিয়ে ভারত-নেপাল নতুন উত্তেজনা
লিপুলেখ নিয়ে ভারত-নেপাল নতুন উত্তেজনা - সংগৃহীত
নেপাল কমিউনিস্ট পার্টির চেয়ার ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী পুস্প কমল দহল বলেছেন, দিল্লি যদি কূটনৈতিক চ্যানেল অগ্রাহ্য করে তবে লিপুলেখের রোড লিঙ্কসহ ভারতের সাথে সীমান্ত বিরোধ নিষ্পত্তিতে নেপালের কোন পথ অবলম্বন করা উচিত, সে ব্যাপারে কাঠমান্ডুর একটি সিদ্ধান্তে আসা উচিত।
রোববার স্টেট অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড গুড গর্ভানেন্সের এক সভায় বক্তৃতাকালে দহল বলেন, অবশ্য নেপালের প্রথমে উচিত হবে এই সমস্যা সমাধানের জন্য উচ্চ পর্যায়ের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক চ্যানেলগুলো ব্যবহার করা।
আইনপ্রণেতাদের প্রশ্নের জবাবে দহল সভায় বলেন, এতেও যদি ইস্যুটির সমাধান না হয়, তবে নেপাল কী করতে পারে, সে ব্যাপারে সিদ্ধান্তে আসতে হবে।
লিপুলেখের সাথে একটি রোড লিঙ্ক ভারত সম্প্রতি উন্মুক্ত করেছে। নেপাল একে তার নিজের ভূখণ্ড মনে করে। এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্যই হাউস কমিটি আমন্ত্রণ জানিয়েছিল দহলকে।
লিপুলেখ হলো নেপালের উত্তর-পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত এক টুকরা জমি। এটির অবস্থান নেপাল, ভারত ও তিব্বতের সংযোগস্থলে। কেউ কেউ একে ‘ট্রাই-জংশন’ বললেও নেপাল গিরিপথটির দক্ষিণ অংশ নিজের বলে দাবি করে এবং একে ‘ট্রাই-জংশন’ হিসেবে অভিহিত করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছে।
ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় শুরুবার জানায়, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং ধরচুলা থেকে লিপুলেখ পর্যন্ত লিঙ্ক রোড উদ্বোধন করেছেন। তারা লিপুলেখকে চায়না করিডোর’ হিসেবে অভিহিত করে।
শনিবার নেপালের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি প্রেস নোট ইস্যু করে ভারতের ‘একতরফা কাজে’ আপত্তি জানিয়ে বলে যে দুই দেশের সর্বোচ্চ রাজনৈতিক পর্যায়ে কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে সীমান্ত বিরোধের সমাধানের ব্যাপারে প্রতিষ্ঠিত সমঝোতার খেলাফ।
ভারত ও চীন ২০১৫ সালে লিপুলেখ দিয়ে বাণিজ্য রুট চালু ও সম্প্রসারণে একমত হয়েছিল।
নতুন প্রেক্ষাপটে নেপাল এখন বিষয়টি চীনের কাছেও উত্থাপন করবে। তবে এ নিয়ে ভারত অবশ্যই চীনের সাথে আলোচনা করেছে। কারণ এই সড়কটির লক্ষ্য ভারতের ধরচুলার সাথে তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের কৈলাশ-মানসসরোবরের সংযোগ ঘটানো।
রোববারের সভায় দহল বলেন, এটি তিন দেশের সাথে সম্পৃক্ত একটি ইস্যুতে পরিণত হওয়ায় এ নিয়ে চীনের সাথেও নেপালের আলোচনা করা দরকার।
দহলের মতে, লিপুলেখের ব্যাপারে তিন দেশকেই একটি সমাধানে আসতে হবে। তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতির প্রশংসা করলেও কাজ করার ওপর জোর দেন।
তবে এই পর্যায়ে ইস্যুটিকে আন্তর্জাতিককরণের যেকোনো পদক্ষেপ গ্রহণের সম্ভাবনা প্রত্যাখ্যান করেন তিনি।
ইন্টারন্যাশনাল রিলেশন্স কমিটির সভায় বক্তৃতাকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রদীপ গায়ওয়ালি বলেন, রোড লিঙ্কটি নির্মাণের সময় ভারত প্রায় ১৯ কিলোমিটার নেপালি ভূখণ্ড দখল করেছে।
পরে রোববার আইনপ্রণেতারা বিষয়টি পার্লামেন্টেও উত্থাপন করেন।
সরকার ও বিরোধী উভয় দলের সদস্যদের মধ্যে ভীম রাওয়াল, গগন থাপা, সুরেন্দ্র পান্ডে, জনার্দন শর্মা, রাজেন্দ্র লিঙ্কদেন, দুর্গা কারকি ও প্রেম সুয়াল নিস্ক্রিয়তার জন্য সরকারের সমালোচনা করেন। কারণ সড়কটি কয়েক বছর ধরে নির্মাণ করা হলেও সরকার কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।
আইনপ্রণেতাদের প্রশ্নের জবাবে গায়ওয়ালি বলেন, সরকার বিশ্বাস করে যে কূটনৈতিক চ্যানেলের মাধ্যমে ইস্যুটির সমাধান করা যাবে। কারণ ভারতীয় পক্ষ ইতোমধ্যেই জানিয়েছে যে কোভিড-১৯ সঙ্কট কেটে যাওয়া মাত্র তারা আলোচনায় বসবে।
নেপালি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিক্রিয়ার জবাবে ভারতের পররাষ্ট্র দফতরের এক মুখপাত্র বলেন, নির্মাণ করা রাস্তাটি ভারতীয় ভূখণ্ডে পড়েছে। শনিবার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ওই মুখপাত্র বলেন, ভারত অবশ্য কূটনৈতিক সংলাপের মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
এদিকে সাবেক নেপালি প্রধানমন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন দরের আন্তর্জাতিক বিভাগের প্রধান মাধব কুমার নেপালও নেপালি ভূখণ্ড দিয়ে মানসসরোবরগামী রাস্তা উদ্বোধনের ব্যাপারে আপত্তি জানান।
নেপাল বলেন, এই পদক্ষেপ দ্বিপক্ষীয় সমঝোতা ও চুক্তির মারাত্মক লঙ্ঘন এবং নেপালের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতার প্রতি আক্রমণ। তিনি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অবিলম্বে ভারতের সাথে সংলাপ শুরুর আহ্বান জানান।
কাঠমান্ডু পোস্ট