এবার ভারত-নেপাল বিরোধ কৈলাস-মানস সরোবরের নতুন রাস্তা নিয়ে
এবার ভারত-নেপাল বিরোধ কৈলাস-মানস সরোবরের নতুন রাস্তা নিয়ে - সংগৃহীত
মাত্র দু’দিন আগেই কৈলাস-মানস সরোবরের সংযোগকারী রাস্তার উদ্বোধন করেছেন ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। কিন্তু উদ্বোধনের পরের দিনই ওই রাস্তা নিয়ে আপত্তি তুলল প্রতিবেশী নেপাল। তাওয়াঘাট থেকে চীন সীমান্তের লিপুলেখ পাস পর্যন্ত ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়ক দু’দেশের মধ্যে সীমান্ত-চুক্তির বিরোধী বলে উল্লেখ করেছে কাঠমান্ডু। কালাপানি পয়েন্টে ভারতের অবস্থান নিয়ে আপত্তির পর এবার এখানেও আপত্তি জানালো নেপাল।
তবে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তড়িঘড়ি টুইটারে জানিয়ে দিয়েছে, এই সড়ক পুরোটাই ভারতের সীমান্তের মধ্যে দিয়ে গেছে। এর মধ্যে বিতর্কের কিছু নেই।
শুক্রবার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কৈলাস-মানস সরোবর যাত্রার লিঙ্ক রোডের সূচনা করেন রাজনাথ। কিন্তু পরের দিনই নেপালের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের ওয়েবসাইটে এ নিয়ে আপত্তি তুলে দাবি করে, ‘‘প্রধানমন্ত্রী স্তরে পারস্পারিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে দু’দেশের সীমান্ত সমস্যা মেটানোর কথা বলা হয়েছে। কিন্তু একতরফা (ভারতের) এই সিদ্ধান্ত দু’দেশের পারস্পারিক সহযোগিতার সম্পর্কের পরিপন্থী।’’
জবাব দিতে দেরি করেনি ভারতও। শনিবারই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে টুইটারে বলা হয়েছে, ‘‘উত্তরাখণ্ডের পিথোরাগড় জেলার অন্তর্ভুক্ত সম্প্রতি উদ্বোধন হওয়া এই রাস্তা ভারতীয় সীমান্তের মধ্যে পড়ছে। এই রাস্তায় আগেও কৈলাস-মানস সরোবরে যেতেন পুণ্যার্থীরা। বর্তমান প্রকল্পে শুধুমাত্র সেই রাস্তাকেই তীর্থযাত্রী, স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীদের জন্য যাতায়াতের যোগ্য করে তোলা হয়েছে।’’
ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আরো বক্তব্য, ‘‘সীমান্ত সমস্যা মেটানোর জন্য ভারত ও নেপালের মধ্যে নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া রয়েছে। নেপালের সঙ্গে এই সমস্যা মেটানোর প্রক্রিয়া নিরন্তর। নেপালের সঙ্গে ভারতের যে বন্ধুত্বপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক, তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই কূটনৈতিক স্তরে আলোচনার মাধ্যমে সীমান্ত সমস্যা মেটাতে আগ্রহী ভারত।’’
ভারত থেকে তিব্বতের কৈলাস-মানস সরোবর যাওয়ার তিনটি রুট রয়েছে—সিকিম হয়ে, উত্তরাখণ্ড দিয়ে অথবা নেপালের কাঠমান্ডু হয়ে। সবকটি পথই সুদীর্ঘ এবং প্রচুর কষ্টসাধ্য। এর মধ্যে উত্তরাখণ্ড দিয়ে যাওয়ার রাস্তাটিই তুলনায় সহজগম্য। কিন্তু এই পথের আবার তিনটি ভাগ রয়েছে। প্রথম ভাগে যেতে হয় পিথোরাগড় থেকে তাওয়াঘাট, যার দূরত্ব ১০৭.৬ কিলোমিটার। দ্বিতীয় পর্যায়ে যাত্রা শুরু হয় তাওয়াঘাট থেকে। ১৯.৫ কিলোমিটার রাস্তা পায়ে হেঁটে পৌঁছতে হয় ঘটিয়াবগড়। শেষ ধাপে রয়েছে ঘটিয়াবগড় থেকে চীন সীমান্ত লাগোয়া লিপুলেখ পাস পর্যন্ত ৮০ কিলোমিটার রাস্তা। এই দ্বিতীয় ধাপের রাস্তাকেই সম্প্রসারণ ও সংস্কার করে যানবাহন চলাচলের উপযুক্ত করেছে বর্ডার রোড অর্গানাইজেশন। এর ফলে তাওয়াঘাট থেকে সরাসরি লিপুলেখ পর্যন্ত গাড়িতে পৌঁছে যাওয়া যাবে।
কালাপানির কাছে লিপুলেখ পাস ভারতের পশ্চিম সীমান্তের শেষ প্রান্ত বলে ধরা হয়। কিন্তু এই কালাপানি এলাকায় সীমান্ত নিয়ে ভারত ও নেপালের মধ্যে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। যদিও দুই দেশই দাবি করে কালাপানি তাদের ভূখণ্ডের অন্তর্ভুক্ত। ভারতের দাবি, কালাপানি উত্তরাখণ্ডের পীথোরগড় জেলার অন্তর্গত। নেপালের পাল্টা দাবি, তাদের দেশের ধারচুলা জেলার অভ্যন্তরে পড়ে এই কালাপানি।
সিকিমের সীমান্তে ভারত-চীন সেনা সংঘর্ষে উত্তেজনা
সিকিমে ভারত-চীন সীমান্তে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। শনিবার উত্তর সিকিমের নাকুলায় সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে দুই দেশের সেনাবাহিনী। হাতাহাতি এবং ঘুষোঘুষিতে দু’পক্ষের বেশ কয়েক জন আহতও হন। তবে সংঘর্ষ বড় আকার ধারণ করতে পারেনি। স্থানীয় স্তরেই শেষ পর্যন্ত ঝামেলা মিটে যায় বলে জানা গিয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সেনাবাহিনীর দুই কর্মকর্তা এই ঘটনার কথা সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ করেছেন। তাঁরা জানান, মুগুথাং পেরিয়ে পাঁচ হাজার ফুট উচ্চতায় নাকুলা সেক্টরে দু’পক্ষের প্রায় ১৫০ সেনার মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। তাতে চার ভারতীয় জওয়ান ও চীনা বাহিনীর সাতজন আহত হন।
বিষয়টি নিয়ে একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের তরফে সেনাবাহিনীর সদর দফতরে যোগাযোগ করা হলেও, এ ব্যাপারে কিছু জানা নেই বলে সেখান থেকে বার্তা দেওয়া হয়। নাকুলায় এই ধরনের ঘটনা সাধারণত ঘটে না বলে জানান সেনাবাহিনীর সাবেক এক সেনাকর্তা।
তবে ভারত ও চীনা বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা নতুন নয়। ২০১৭-র অগস্টে লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার কাছে প্যাংগং লেক এলাকায় পরস্পরের সঙ্গে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন দু’পক্ষের জওয়ানরা। ঘুষোঘুষির পাশাপাশি একে অপরকে লক্ষ্য করে পাথরও ছোড়া হয় সেখানে।ডোকলামে টানা ৭৩ দিন ধরে দুই দেশের সেনা যখন মুখোমুখি অবস্থান করছিল, ঠিক সেইসময়ই এই ঘটনা ঘটে। তাতে ভারত-চীন দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক তলানিতে এসে ঠেকে। তবে শেষমেশ শান্তিপূর্ণ ভাবেই অবস্থান উঠে যায়।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা