করোনা চিকিৎসায় কার্যকর ওষুধ আবিষ্কারের দাবি হংকংয়ের
করোনা চিকিৎসায় কার্যকর ওষুধ আবিষ্কারের দাবি হংকংয়ের - সংগৃহীত
করোনাভাইরাসের লক্ষণ প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে যদি তিনটি ওষুধের অ্যান্টি-ভাইরাল ককটেল দিয়ে চিকিৎসা করা যায়, তবে রোগীরা দ্রুত সেরে উঠবেন। এবার এমনই দাবি করলেন হংকংয়ের গবেষকরা। শুক্রবার ‘ল্যানসেট’ ম্যাগাজিনে প্রকাশিত গবেষণাপত্রে এই ফলাফলকে ‘প্রাথমিক কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ’ বলে উল্লেখ করেছেন তারা। গবেষণার নেতৃত্বে থাকা হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কোভাক-ইয়ুং ইউয়েন বলেন, ‘আমাদের পরীক্ষায় দেখা গেছে, তিনটি অ্যান্টিভাইরাল ওষুধের সংমিশ্রণে তৈরি কম্বোতে হালকা থেকে মাঝারি কোভিড-১৯ রোগীর প্রাথমিক চিকিৎসায় শরীরে ভাইরাসের সংক্রমণ দ্রুত দমন করা যেতে পারে।’ গবেষক কোভাক-ইয়ুং দাবি করেছেন, এই পদ্ধতি রোগীর জন্য নিরাপদ বলে মনে হয়েছে। রোগের উপসর্গ নির্মূল করে সাফল্য পাওয়া গেছে।
হংকংয়ের গবেষণায় সেখানকার ৬টি হাসপাতালের ১২৭ জন প্রাপ্তবয়স্ক রোগীকে পর্যবেক্ষণ করা হয়। তাদের মধ্যে ৮৬ জনকে দু’সপ্তাহের কোর্সে তিনটি ওষুধ— ইন্টারফেরন বিটা-১বি, এইচআইভির চিকিৎসায় ব্যবহৃত লোপিনাভির-রিটোনাভির ও হেপাটাইটিসের ওষুধ রিবাভিরিন দেওয়া হয়। ৪১ জনকে নিয়ন্ত্রিত পদ্ধতিতে লোপিনাভির-রিটোনাভির দেয়া হয়।
উপসর্গ দেখা দেয়ার দিন পাঁচেক পর থেকে অক্সিজেন থেরাপিসহ চিকিৎসা করা শুরু হয়। এরপর গবেষকরা কত দিন পর তাদের ফলাফল নেগেটিভ আসে, সোয়াব টেস্টের মাধ্যমে তা পরীক্ষা করেন। এতে দেখা যায়, যারা তিনটি ওষুধের কম্বো পেয়েছিলেন, তারা গড়ে ৭ দিনে (৫ থেকে ১১ দিন) সুস্থ হয়েছেন। অন্যদিকে কন্ট্রোল গ্রুপের ক্ষেত্রে গড়ে ১২ দিন সময় লেগেছে। অর্থাৎ, এই পদ্ধতিতে অনেক কম সময়ে রোগী সুস্থ হতে পারেন। গবেষণায় দেখা গেছে, কন্ট্রোল গ্রুপের তুলনায় কম্বো ওষুধ পাওয়া গ্রুপের রোগীদের শরীরের উপসর্গ ৪ দিনে চলে গেছে। কন্ট্রোল গ্রুপের ক্ষেত্রে লেগেছে ৮ দিন। হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের নিয়ে ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০ মার্চ এই পরীক্ষা করা হয়।
গবেষকরা জানান, তাদের গবেষণায় কিছু সীমাবদ্ধতা ছিল। রোগীরা আগে থেকে জানতেন কী ওষুধ তারা পাচ্ছেন। যাদের উপসর্গ ৭ দিনের বেশি, তাদের এই পরীক্ষার আওতায় আনা হয়নি। ৩৪ জনকে নিয়ে পরীক্ষায় লোপিনাভির-রিটোনাভির ও রিবাভিরিন দেয়া হয়। এদের মধ্যে ১৭ জন ছিলেন নিয়ন্ত্রিত গ্রুপে। এই দুই গ্রুপের ক্ষেত্রেই সেরে উঠতে দীর্ঘ সময় লেগেছে। এ থেকে বোঝা যায়, উপসর্গ দেখা দেয়ার প্রথম সপ্তাহের মধ্যে ইন্টারফেরন কাজ করে।
গবেষণার ‘সাফল্য’ সম্পর্কে প্রতিক্রিয়ায় লন্ডন স্কুল অব হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিকাল মেডিসিনের ফার্মাকোপিডেমিওলজি বিভাগের অধ্যাপক স্টিফেন ইভান্স বলেন, পরীক্ষার জন্য যথাযথ, প্রমাণভিত্তিক, প্রতিশ্রুতিবদ্ধ চিকিত্সার তালিকায় ইন্টারফেরন বিটা যুক্ত করার বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। দীর্ঘ অভিজ্ঞতা থেকে এটা পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে, এইচআইভির বিভিন্ন ড্রাগের সংমিশ্রণে সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা করা যায় এবং এটি কোভিড-১৯ এর ক্ষেত্রেও হতে পারে।
সূত্র : বর্তমান