মেয়েলি রোগ ডিজমেনোরিয়া
মেয়েলি রোগ ডিজমেনোরিয়া - সংগৃহীত
নারী দেহের কতগুলো মেয়েলি সমস্যার মধ্যে ডিজমেনোরিয়া অন্যতম। প্রত্যেক মহিলাই ঋতুকালীন তলপেটে সামান্য ব্যথা এবং কিছুটা অস্বস্তিবোধ করেন। কিন্তু এই ব্যথা যদি খুব তীব্র হয় এবং স্বাভাবিক কাজকর্মে ব্যাঘাত ঘটে, চিকিৎসার প্রয়োজন পড়ে; তাহলে একে বলে ডিজমেনোরিয়া।
অল্পবয়সী মেয়েদেরই এই সমস্যা হয়। এই ব্যথা তলপেট ও কোমর থেকে দুই উরুর উপরের অংশে বিস্তার করে। বমিভাব বা বমি, মাথাব্যথা ও ক্লান্তি লাগতে পারে। ঘন ঘন প্রস্রাব এবং পাতলা পায়খানা হতে পারে। বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে ব্যথার তীব্রতা কমে যেতে থাকে। কোনো কোনো মেয়ের পিরিয়ড হওয়ার দুই-এক বছরের মধ্যে তেমন কোনো ব্যথা হয় না। কিছুদিন পর যখন ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বাণু নির্গমন হয়, তখন ব্যথাটা বাড়তে থাকে। এই ব্যথার সঠিক কারণ জানা যায়নি তবে সম্ভাব্য কতগুলো কারণে ডিজমেনোরিয়া হয়ে থাকে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-
বয়ঃসন্ধিকালে মেয়েদের চাঞ্চল্য এবং বাড়তি মানসিক চাপ। * জরায়ুর অস্বাভাবিক গঠন এবং জরায়ুর মুখ সরু হওয়ার জন্য মাসিকের রক্ত ঠিকমতো বের হতে না পারলে জরায়ু পেশীর প্রবল সঙ্কোচনে পেটে ব্যথা হয়। * জরায়ুর এন্ডোমেট্রিয়ামে অতিরিক্ত পরিমাণ প্রজেস্টেরন হরমোন এবং প্রোস্টাগ্লান্ডিন নিঃসরণ হলে। * যেসব মেয়ের শারীরিক গঠন দুর্বল ও স্পর্শকাতর এবং আবেগি তাদের এ ধরনের ব্যথা বেশি হতে দেখা যায়।
চিকিৎসা : * চিকিৎসার জন্য প্রথমেই রোগিনীকে আশ্বস্ত করতে হবে যে এটি কোনো জটিল সমস্যা নয়। * ওজন কম বা ভগ্ন স্বাস্থ্য হলে পুষ্টিকর খাবার এবং পরিমিত বিশ্রাম নিতে হবে। * অল্পবয়সী মেয়ে হলে তাকে ধৈর্য ধরতে হবে। কারণ, বিয়ে বা সন্তান লাভের পর এ সমস্যা আপনা থেকেই চলে যায়। * পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন এবং জীবাণুমুক্ত প্যাড বা কাপড় ব্যবহার করতে হবে। * নিয়মিত ব্যায়ামের অভ্যাস করতে হবে। হাল্কা কাজকর্ম বা হাঁটাহাঁটি করলে ব্যথা খানিকটা কমে যায়। * অবহেলা না করে কোনো স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী অবশ্যই চিকিৎসা করাতে হবে।
লেখক : জেনারেল প্রাকটিশনার (মহিলা ও শিশু), মুক্তাগাছা, ময়মনসিংহ।
গর্ভাবস্থায় ত্বকের সমস্যা
ডা: সাদিয়া নাসরিন
গর্ভধারণ মাতৃত্বের সীমাহীন আনন্দ। এ সময় গর্ভবতী মায়ের পুষ্টি ও পরিচর্যার গুরুত্ব অনেক। গর্ভাবস্থায় ত্বক সমস্যা প্রথম প্রেগনেন্সির শেষের দিকে হতে পারে। সারা শরীরে বিশেষ করে পেট ও হাতের চুলকানি এবং লাল হয়ে যাওয়া একে পলিসরফিক ইরাপশন অব প্রেগনেন্সি বা পিউপিপি বলে বা পিউপিপি। এ রকম চুলকানির ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে, গর্ভবতীর জন্ডিস আছে কি না দেখে নেয়া উচিত। তবে সাধারণত ক্যালামাইনযুক্ত লোশন ব্যবহার করলে চুলকানির হাত থেকে অনেকটাই রেহাই পাওয়া যায়। প্রসবের পর এটি আপনা থেকেই মিলিয়ে যায়। এ নিয়ে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই।
আবার অনেক সময় প্রেসন্যান্সির চার-পাঁচ মাস থাকাকালীন অবস্থায় তলপেট, থাই ও বুকে ফাটা এবং লম্বা কুঁচকানো দাগ দেখা যায় একে স্ট্রেচ মার্ক বা স্ট্রোয় বলে। এই রকম দাগ হঠাৎ মোটা হলেও হতে পারে, আবার বয়ঃসন্ধিতেও দেখা দিতে পারে। ত্বকে টান পড়ার জন্য এ রকম ফাটা দাগের সৃষ্টি হয়। এটি কোনো অসুখ নয়। এটি হলো একটি কসমেটিক সমস্যা। ভিটামিন-ই, অ্যালোভেরা, ট্রেটিনাইসযুক্ত মলমের সাহায্যে এর উপশম হতে পারে। প্রেগনেন্সির দ্বিতীয় ভাগে পানি নিয়ে ফুলে উঠে হারপিস ইনফেকশনের মতো দেখতে চুলকানি থাকে। এ রকম ইনফেকশনকে ‘হারপিস জেসটেশন’ বলে। এ রোগের সাথে হারপিস ভাইরাস ইনফেকশনের কোনো সম্পর্ক নেই।
এ ক্ষেত্রে চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া উচিত।