ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনার প্রতি চপেটাঘাত

রে হানানিয়া | May 09, 2020 06:38 am
ট্রাম্প

ট্রাম্প - সংগৃহীত

 

 

মার্কিন প্রসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনা সম্ভবত কখনো বাস্তবায়ন করার মতো প্রকৃত সুযোগ আসবে না। নেতানিয়াহুর ১২ বছরের রাজত্ব প্রমাণ করেছে, সত্যিকার অর্থে তিনি কখনো ফিলিস্তিনিদের সাথে শান্তি চাননি। তাই ফিলিস্তিনিদের নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখার জন্য তিনি সম্ভাব্য সব কিছু করেছেন। কিন্তু ২ মার্চ অনুষ্ঠিত নির্বাচনের পর প্রেসিডেন্ট রিউভেন রিভলিন কর্তৃক প্রতিদ্বন্দ্বী বেনি গান্টজকে সরকার গঠনের ম্যান্ডেট প্রদানের মাধ্যমে ওই সব গতি প্রকৃতি পাল্টে দিয়েছে। গান্টজকে ইসরাইলের চরম ডানপন্থী বেইতিনু পার্টি ও পার্টির নেতা আভিগদোর লিবারম্যান এবং আহমদ তিবি ও আইমান ওদেহ’র বামপন্থী ‘আরব জয়েন্ট লিস্ট’ সমর্থন দিয়েছে। নির্বাচনী ফলাফল নেতানিয়াহুর সর্বনাশ ডেকে এনেছে। তিনি তিনটি দুর্নীতির অভিযোগে এখন বিচারের সম্মুখীন।

এই নির্বাচনের মাধ্যমে তিনি এবং তার পূর্বসূরি অ্যারিয়েল শ্যারন এবং আইজ্যাক শামিরের নেতৃত্বে ফিলিস্তিনিদের অধিকারের বিরুদ্ধে দীর্ঘ দিনের যুদ্ধের অবসান ঘটল। তারা ট্রাম্পের পরিকল্পনারও সর্বনাশ করেছেন। ওই পরিকল্পনার মাধ্যমে একটি রাষ্ট্র গঠনের জন্য ফিলিস্তিনিদের ক্ষমতা ও সামর্থ্যকে দুর্বল করে দেয়া হয়েছিল এবং ইসরাইলকে যা চায় তার সব কিছুই দেয়া হয়েছিল। সুতরাং নতুন এই পরিবর্তনের যুগে আরবদের অবশ্যই কী করতে হবে? তাদের কি একটি ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে ইতিবাচকভাবে? ফিলিস্তিনিদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, তারা সবসময় ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ব্যাপারে দুর্বল। যখন তারা ইয়াসির আরাফাতের নেতৃত্বে পিলও’র মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল তখন তারা নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার বহু দূর এগিয়ে গিয়েছিল। পিলওর অধীনে বিশ্ব ফিলিস্তিনবিরোধী অনেক নীতি পাল্টে দিয়েছিল। বিশ্ব তার আগে ফিলিস্তিনিদের অস্তিত্বকে অস্বীকার করেছিল এবং তাদের ছাড়াই মধ্যপ্রাচ্য শান্তিপ্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে চেয়েছিল। ইতোমধ্যে বিশ্বের শত শত রাষ্ট্র ও সরকার ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের ন্যায়সঙ্গত অধিকারের বিষয়টি স্বীকার করে নিয়েছে। জাতিসঙ্ঘে আরাফাতকে ন্যায়বিচারের ভিশন নিয়ে কথা বলার জন্য একটি প্লাটফর্ম দেয়া হয়েছিল। এরপর দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান হয়ে ওঠে শান্তির মন্ত্র।

দুর্ভাগ্যক্রমে আরাফাতের বয়স এবং অসুস্থতার কারণে তার নেতৃত্ব দুর্বল হয়ে পড়ায় ফিলিস্তিনিদের ঐক্য ভেঙে যায় এবং তারা ব্যক্তিগত স্বার্থে সম্পৃক্ত হয়ে পড়ে। ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস ধর্মনিরপেক্ষ সরকারের প্রতি সমর্থন না দেয়ার কারণে তাদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি হয়।

নেতানিয়াহুর পরাজয়ের পরিপ্রেক্ষিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে ফলাফল বেরিয়ে এসেছে, সেটি হলোÑ ইসরাইলে চরমপন্থার অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। এ অবস্থা কত দিন বজায় থাকবে তা আমরা জানি না। কিন্তু এটা অব্যাহত থাকলে, শান্তিপ্রক্রিয়া পুরোদমে এগিয়ে যাওয়ার একটি ভালো সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এতে সত্যিকারভাবে দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের দিকে ফিরে যাওয়ার একটি শক্তিশালী অবস্থান তৈরি হয়েছে। দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের মাধ্যমে প্রথমে স্বায়ত্তশাসন প্রদান এবং এর মাধ্যমে একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হবে।

অদূরভবিষ্যতে গান্টজ কোনো শান্তিচুক্তিতে স্বাক্ষর করবেন কি না তা স্পষ্ট নয়। তার পরও অবস্থার পরিবর্তনের ফলে একটি নতুন ও আরো ভালো ফল বেরিয়ে আসবে বলে আশাবাদের সৃষ্টি হয়েছে। এই ইতিবাচক প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকলে ইসরাইলিরা চরম ডানপন্থা থেকে প্রগতিশীল বামপন্থার দিকে ফিরে যেতে পারে। এর অর্থ হলো, শিগগির এমন একটি ইসরাইলি সরকার গঠন হতে পারে যারা অধিকতর ভারসাম্যপূর্ণ ‘দুই রাষ্ট্র সমাধান’কে সমর্থন দেবে। ট্রাম্পের চুক্তির প্রতি নৈতিক চপেটাঘাতের অর্থ হচ্ছে ট্রাম্পের সফল একক ঘোষণার একটি তাৎপর্যপূর্ণ বিপর্যয়। শান্তির লক্ষ্যে আলোচনায় নতুন গতি সঞ্চারের জন্য সব কিছু এখন আলোচনার টেবিলে। কোনো অবস্থায় ইসরাইল পূর্ব জেরুসালেমের নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দেবে বলে মনে হয় না। তবে তারা হয়তো শহরের একটি অংশ, বিশেষভাবে খ্রিষ্টান ও মুসলিমদের ধর্মীয় স্থানগুলো ফিলিস্তিনিদের নিয়ন্ত্রণে ছেড়ে দিতে পারে এবং ট্রাম্প প্রশাসন যখন ইসরাইলের সব অবৈধ বসতিকে বৈধ বলে স্বীকৃতি দিয়েছে, তখন একটি নতুন শান্তি উদ্যোগের মাধ্যমে ওই ঘোষণাকে অকার্যকর করা হবে। ভবিষ্যৎ শান্তি সমঝোতা হবে অধিকতর উদার; যেখানে নতুন ইসরাইলি সরকার এবং ফিলিস্তিনিরা এমন একটি পরিস্থিতি দেখতে পাবে, যেখানে অর্ধেক অবৈধ বসতি হয় ভেঙে ফেলা হবে অথবা ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে ফিরিয়ে দেয়া হবে।

কখনো ফিলিস্তিনিদের অধিকার পুরোপুরি ফিরিয়ে দেয়ার বিষয়টি বাস্তবায়িত হবে না। তবে এমন দৃশ্য দেখা যেতে পারে যেখানে সীমিতসংখ্যক ফিলিস্তিনি শরণার্থী (এক লাখ অথবা এমনকি আড়াই লাখ পর্যন্ত ফিলিস্তিনি) ইসরাইলি ভূখণ্ডে ফিরে আসতে পারে। একটি শান্তিচুক্তির আওতায় ফিলিস্তিনিরা ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেবে; সেখানে দেশটিতে বেশি ফিলিস্তিনি থাকলে ও সেটি ইসরাইলের অস্তিত্বের প্রতি হুমকি সৃষ্টি করবে না। গান্টজের বিজয় হলো প্রথম পদক্ষেপ। আরব জয়েন্ট লিস্ট এবং তাদের ১৫ জন নেসেট সদস্যের সাথে অংশীদারিত্বের সিদ্ধান্ত ইসরাইলে সম্মান জানানোর নতুন পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। এর অর্থ হলো, যেকোনো কিছু ঘটতে পারে। এখন আরব বিশ্বের নীতি এবং তাদের আচার আচরণেও পরিবর্তনের সময় এসেছে। ইসরাইলের সম্ভাবনাময় নতুন সরকারের সাথে কাজ করতে হবে তাদেরকে। ‘জয়েন্ট লিস্ট’ ন্যায়সঙ্গতভাবে শান্তি এবং ফিলিস্তিনিদের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সোচ্চার। ইসরাইল ফিলিস্তিনিদের স্বীকৃতি দেবেÑ এই শর্তে ফিলিস্তিনিরাও ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেবে। ইসরাইল ফিলিস্তিনিদের অধিকারের স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হলে তারা আরব বিশ্বের অধিকারের প্রতিও কার্যকরভাবে স্বীকৃতি দেবে। একে অপরের সহযোগিতা ছাড়া কেউ চলতে পারবে না।

লেখক : পুরস্কার বিজয়ী ও সাবেক ‘শিকাগো সিটি হল’-এর রাজনৈতিক প্রতিবেদক এবং কলামিস্ট
‘আরব নিউজ’ থেকে ভাষান্তর

মুহাম্মদ খায়রুল বাশার


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us