করোনার সময়ে চীনা স্বার্থ হাসিলে মিয়ানমারকে চাপ!
শি ও সু চি - সংগৃহীত
মিয়ানমারে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত বুধবার মিয়ানমারে বেইজিংয়েল গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করার জন্য মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে। করোনাভাইরাস মহামারির জন্য উভয় দেশ যখন ব্যাপক মাত্রায় স্থবিরতা বিরাজ করছে, তখন এই উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে।
রাষ্ট্রদূত চেন হাই ও মিয়ানমারে পরিকল্পনা, অর্থ ও শিল্পবিষয়ক উপমন্ত্রী ইউ সেট আং বুধবার জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিঙের সফরে সময় সম্মত প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন নিয়ে গভীর আলোচনা করেছেন বলে মিয়ানমারে চীনা দূতাবাস জানিয়েছে।
চীনা দূতাবাস জানায়, মিয়ানমার সরকারের কোভিড-১৯ অর্থনৈতিক ত্রাণ পরিকল্পনার ভিত্তিতে মিয়ানমারে চীনের উচ্চাভিলাষী প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে আলোচনা করেন। যেসব প্রকল্প নিয়ে আলোচনা করা হয় সেগুলোর মধ্যে রয়েছে নিউ ইয়াঙ্গুন সিটি, কিযাকফু ডিপ-সি পোর্ট ও শিল্প জোন ও চীন-মিয়ানমার বোর্ডার ইকোনমিক কোঅপারেশন জোন।
নতুন প্রকল্প ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে করোনা মহামারীর অর্থনৈতিক সঙ্কট প্রশমনের জন্য গত সপ্তাহে সিইআরপি প্রণয়ন করা হয়। এসবের মধ্যে রয়েছে কৌশলগত অবকাঠামো প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করা, বিলম্বের মুখে পড়া বহুল আলোচিত আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগে হওয়া প্রকল্পগুলো অনুমোদন।
ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড পলিসির (আইএসপি) চীনা ডেস্কের প্রধান দাও খিন খিন কাউ কিয়ে ইরাবতীকে বলেছেন, শির মিয়ানমার সফরের সময় এই তিন প্রকল্প ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। চীনের জন্য এগুলো কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ। শির সফরে হওয়া চুক্তিগুলো সত্যিকারের বাস্তবায়ন চীনের ভাবমূর্তির জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করা হচ্ছে।
দাউ খিন খিন বলেন, মহামারির সময়ে ও এর পরের সময়ের কথা বিবেচনা কর সিইআরপিকে রোডম্যাপ মনে করা হচ্ছে। এখন সিইআরপিতে আরো প্রকল্প যোগ করা হলে সেগুলো অগ্রাধিকারমূলক প্রকল্প হিসেবে বিবেচিত হবে। এ কারণে চীন চাচ্ছে সিইআরপিতে তাদের প্রকল্পগুলো অন্তর্ভুক্ত করতে।
মিয়ানমারে শির সফরের সময় এসব প্রকল্পকে চীন-মিয়ানমার অর্থনৈতিক করিডোরের (সিএমইসি, এটি আবার চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের অংশবিশেষ) তিনটি স্তম্ভ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
জানুয়ারিতে শির সফরের সময় দুই দেশ ছাড়যুক্ত চুক্তি হয় এবং কিয়াকফু স্পেশাল ইকোনমিক জোনের জন্য শেয়ারহোল্ডার সমঝোতা হয়।
চীনা দূতাবাস জানায়, মহামারীর ফলে বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক অর্থনীতি মন্দার মুখে পড়েছে। অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও জনগণের জীবিকা উন্নত করার জন্য সিএমইসি এগিয়ে নিতে চীন ও মিয়ানমারকে এখন অবশ্যই সহযোগিতা জোরদার করতে হবে।
বিশ্বব্যাংক হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছে, বর্তমান অর্থবছরে মিয়ানমারের জিডিপি প্রবৃদ্ধি দুই থেকে তিন শতাংশ হতে পারে। আর মহামারীতে দেশর গরিব ও অসহায় পরিবারগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
বিআরআই হলো শির সিগনেচার পররাষ্ট্রনীতি প্রকল্প। ২০১৩ সালে ঘোষিত এই প্রকল্পটি সিল্প রোড ইকোনমিক বেল্ট এবং ২১ শতকের মেরিটাইম সিল্ক রোড নামেও পরিচিত। এটি মধ্য এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, রাশিয়ার মাধ্যমে চীন থেকে ইউরোপের অন্তত ৭০টি দেশকে যুক্তকারী সড়ক, রেলরোড ও শিপিং লেন প্রকল্প। এর মাধ্যমে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
সিএমইসি প্রতিষ্ঠার জন্য ২০১৮ সালে সমঝোতা স্মারকে সই করে মিয়ানমার। ১৭ শ’ কিলোমিটারের করিডোরটি চীনের ইউনান প্রদেশের রাজধানী কুনমিংকে সংযুক্ত করবে মিয়অনমারের মান্দালঢ থেকে শুরু করে কিয়াকফু অর্থনৈতিক জোনসহ বেশ কয়েকটি অর্থনৈতিক হাবকে।
২০১৮ সালের নভেম্বরে উচ্চাভিলাষী কিয়াকফু অর্থনৈতিক জোনের চুক্তি হয়। এই প্রকল্পের ৩০ ভাগ অংশের মালিক মিয়অনমার। প্রকল্পটি স্থলবেষ্টিত ইউনান প্রদেশের উন্নয়ন নিশ্চিত করবে এবং সেইসাথে ভারত মহাসাগরে সরাসরি যাওয়ার সুযোগ ঘটবে চীনের। ফলে চীনকে আর মালাক্কা প্রণালী অতিক্রম করতে হবে না।
নিউ ইয়াঙ্গুন সিটি একটি বিতর্কিত প্রকল্প। ২০১৮ সালে ইয়াঙ্গুন নদীজুড়ে নতুন নগরী নির্মাণের জন্য চুক্তি হয়। এটির আকার হবে সিঙ্গাপুরের দ্বিগুণ।
অধিকন্তু চুক্তি শান ও কাচিন রাজ্যের সীমান্তজুড়ে আন্তঃসীমান্ত অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোন প্রতিষ্ঠা করবে।
দি ইরাবতী