জেনারেল রাওয়াত ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীকে সার্কাসে পরিণত করেছেন?
জেনারেল রাওয়াত - সংগৃহীত
আমেরিকা আজ যা চিন্তা করে, আগামীকাল অবশ্যই ভারত তা চিন্তা করবে। এ কারণেই শুক্রবার চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ জেনারেল বিপিন রাওয়াতের (তিনি কখন ফিল্ড মার্শাল হবেন?) তিন বাহিনীর প্রধানকে নিয়ে করা সংবাদ সম্মেলন বিস্ময়ের কিছু ছিল না।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২৩ এপ্রিল ঘোষণা করেন যে মার্কিন বিমানবাহিনীর থান্ডার বার্ডস করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইরত মেডিক্যাল স্টাফদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করতে পুরো যুক্তরাষ্ট্রে আকাশে চক্কর দেবে। হোয়াইট হাউস ব্যাখ্যা করে জানায় যে এক স্কয়াড্রোনের প্রতি ঘণ্টায় উড্ডয়ন খরচ হবে ৬০ হাজার ডলার (ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছে, প্রতিটি এফ-১৬-এর উড্ডয়ন খরচ ঘণ্টায় ২০ হাজার ডলার)। তবে তা করদাতাদের জন্য বাড়তি কোনো বোঝা চাপাবে না। কারণ আগেই এর বাজেট করা হয়েছিল, কিন্তু মহামারিটির কারণে তা স্থগিত করা হয়েছিল।
ফলে শুক্রবার যখন নয়া দিল্লিতে বাহিনী প্রধানেরা জানালেন যে ভারতীয় বিমান বাহিনীর বিমানগুলো রোববার কাশ্মির থেকে কন্যাকুমারি এবং অরুনাচল প্রদেশ থেকে গুজরাট পর্যন্ত ফ্লাই পাস্ট করবে করোনা যোদ্ধাদের স্যালুট দিতে, তখন তাতে কোনো বিস্ময় ছিল না। ঘোষণা করা হয়, প্রায় প্রতিটি জেলার নির্বাচিত হাসপাতালে পাপড়ি বর্ষিত হবে এবং সেনাবাহিনীর ব্যান্ডদল বাজনা বাজাবে। আর ভারতীয় নৌবাহিনী তার জাহাজগুলো আলোকসজ্জা করবে, নৌ হেলিকপ্টার নির্ধারিত হাসপাতালে পাপড়ি বর্ষণ করবে।
এটাও সম্ভব যে সব ব্যয় আগেই চূড়ান্ত করা হয়েীছল এবং এতে ভাইরাসটি মোকাবিলা করতে কঠোর পরিশ্রম করতে থাকা মেডিক্যাল কর্মীদের মনোবল আসলেই বাড়িয়ে দেবে। তবে মেডিক্যাল কর্মীরা উদ্দীপ্ত হন বা না হন, যে অল্প কয়েকজন সেনা ও বিমানবাহিনীর অফিসারের সাথে আমি কথা বলেছি, তারা সবাই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এক তরুণ অফিসার বলেন, এটা আমাদের মনোবল বাড়াচ্ছে না। এটা রাজনৈতিক সুরের মতো মনে হচ্ছে এবং প্রতিরক্ষা বাহিনীকে ঘুঁটি হিসেবে ব্যবহার করাহ চ্ছে। আমরা বোকা বনে গেছি।
সাবেক কয়েকজন অফিসারের সাথে কথা বলার সময় আমি গত মসে দি টেলিগ্রাফে সুনন্দা কে দত্ত-রায়ের একটি প্রবন্ধের দিকে তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করি। করোনাভাইরাস মোকাবিলা করার জন্য চীন হুবেই প্রদেশে ১০ হাজার সৈন্য পাঠানো ও যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসকে সহায়তা করার জন্য ব্রিটিশ আর্মি ২০ হাজার সৈন্য মোতায়েনের কথা উল্লেখ করে তিনি পরামর্শ দিয়েছিলেন যে ভারতীয় সেনাবাহিনীর কিছু করার এটাই সময়।
তিনি বলেন, আটকে পড়া শ্রমিকদের জন্য সেনাবাহিনী তাঁবু খাটাতে পারে, ক্যাম্প স্থাপন করতে পারে। সামরিক ট্রাক ও লরিগুলো তাদের পুনর্বাসনে ব্যবহৃত হতে পারে। লঙ্গরখানার অভিজ্ঞতা সাশ্রয়ী খাবার রান্নায় কাজে লাগতে পারে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করতে সেনাবাহিনী এমনকি বস্তি এলাকায় নজরদারির দায়িত্বও পালন করতে পারে। তরবারিকে শান্তিপূর্ণ কাজে ব্যবহার করা সহজ নয়। তবে খবরে প্রকাশ পেয়েছে যে ইসরাইল, ফ্রান্স, মেক্সিকো ও সুইজারল্যান্ডেও সৈন্যরা শান্তিপূর্ণ কাজে নেমে পড়েছে।
আমি সাবেক কর্মকর্তাদের বললাম যে সেনাবাহিনী প্রতিটি জেলায় অস্থায়ী আইসোলেশন ওয়ার্ড স্থাপন করতে পারে। তারা কোভিড-১৯ রোগীদের কোয়ারেন্টিনে রাখার জন্য তাঁবু নগরী, বিশেষ হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করতে পারে।
তবে সাবেক কর্মকর্তাদের একজনের প্রতিক্রিয়ায় ছিল কষ্টদায়ক ক্রোধ। তিনি বললেন, যখন বেসামরিক লোকজন নিরাপদ অবস্থানে চলে যাবে, তখন আমাদের সৈন্যরা তাদের জীবনের ঝুঁকি নেবে? এমন করা হলে তাদের মনোবল ভেঙে যাবে। আমরা সবসময় বলে আসছি যে এটা আমাদের কাজ নয়। আপনারা যেসব বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছেন, তা পরিষ্কার করার দায়িত্ব আমাদের নয়।
কিন্তু অতীতে তো প্রাকৃতিক দুর্যোগে সৈন্যরা সহায়তা করেছে। এমনকি বিভিন্ন দেশে এখন সৈন্যরা স্বাস্থ্যকর্মীদের সহায়তা করছে। আমার এই যুক্তিতে আরেক সাবেক কর্মকর্তা উত্তেজিত হয়ে স্পষ্টভাবে বললেন, হাজার হাজার লোক যদি মারা যায়, কেউ যদি লাশগুলো তোলার না থাকে, তবে আমরাই প্রথম স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্ব নেব। কিন্তু আপনাদের কাজে আমাদের টানবেন না।
আমি যে কয়েকজন সাবেক কর্মকর্তা ও বর্তমানে চাকরিরত কর্মকর্তার সাথে কথা বলেছি, তারা সবাই চিফ অব ডিফেন্স সার্ভিসেস সম্পর্কে রূঢ় ও বিরূপ মন্তব্য করেছেন।
সবচেয়ে রূঢ় মন্তব্য ছিল, ‘জেনারেল রাওয়াত সেনাবাহিনীকে সার্কাসে পরিণত করেছেন।‘
আসলেই কী?
ন্যাশনাল হেরাল্ড