আরো সহজে যেভাবে পেনশন পাবেন সরকারি চাকুরেরা
আরো সহজে যেভাবে পেনশন পাবেন সরকারি চাকুরেরা - সংগৃহীত
অবসরে যাওয়া সরকারি চাকুরেদের পেনশন প্রাপ্তি আরো সহজ করা হলো। এ লক্ষ্যে ‘সরকারি কর্মচারীদের পেনশন সহজীকরণ আদেশ, ২০২০’ আদেশের কিছু সংশোধন আনা হয়েছে। এতে করে সঠিক কাগজ জমা দিলে ৭ থেকে ১৫ দিনের মধ্যেই পেনশন পাওয়া যাবে।
এতে বলা হয়েছে, ‘সরকারি কর্মচারীদের পেনশন সহজীকরণ আদেশ, ২০২০’ এর ৪.০৯ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীর নিজের এবং তার মৃত্যুর পর তার পরিবারের পারিবারিক পেনশন প্রাপ্তির আবেদনে সংশোধিত পেনশন আবেদন ফরম, সনদ ও কাগজপত্রাদি ব্যবহার সংক্রান্ত পরিপত্র জারি করা হয়েছে। সংশোধনীটি গত ১৯ মার্চ পরিপত্র আকারে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা স্বাক্ষর করলেও গত মঙ্গলবার তা নোটিশ আকারে জারি করা হয়েছে।
পেনশন প্রাপ্তির ক্ষেত্রে ‘সরকারি কর্মচারীদের পেনশন সহজীকরণ আদেশ, ২০২০’ জারি করে সরকার চলতি বছর জানুয়ারি মাসে। এতে যে সব তথ্য সংযোজন করা হয় তাতে কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়েছে। এর মধ্যে, প্রত্যাশিত শেষ বেতনপত্র (ইএলপিসি) (সংযোজনী-১), প্রাপ্তব্য পেনশনের বৈধ উত্তরাধিকারী ঘোষণাপত্র (সংযোজনী-২), উত্তরাধিকার সনদপত্র ও নন-ম্যারিজ সার্টিফিকেট (সংযোজনী-৩), পেনশন ফরম ২.১ (সংযোজনী-৪) পারিবারিক পেনশন ফরম ২.২ (সংযোজনী-৫), নমুনা স্বাক্ষর ও হাতের পাঁচ আঙুলের ছাপ (সংযোজনী-৬), আনুতোষিক ও অবসর ভাতা উত্তোলন করার জন্য ক্ষমতা অর্পণ ও অভিভাবক মনোনয়নের প্রত্যয়নপত্র (সংযোজনী-৭), না-দাবি প্রত্যয়নপত্র (সংযোজনী-৮)। সংশোধনী পরিপত্রে বলা হয়েছে, বর্তমানে এ সব ফরম, সনদ ও কাগজপত্র মুদ্রণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এসব ফরম, সনদ, কাগজপত্রাদি অর্থ বিভাগের িি.িসড়ভ.মড়া.নফ ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড করেও ব্যবহার করা যাবে।
অবসরগ্রহণকারী সরকারি কর্মচারী ও সরকারি কর্মচারীর মৃত্যুর ক্ষেত্রে তাহাদের পরিবারবর্গের অবসরজনিত সুবিধাদি সঠিক সময়ে নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অর্থ বিভাগ ২০০৯ সালের ২ জানুয়ারি ‘বেসামরিক সরকারি কর্মচারীদের পেনশন মঞ্জুরি ও পরিশোধ সংক্রান্ত বিধি/পদ্ধতি অধিকতর সহজীকরণ আদেশ, ২০০৯ নি¤œরূপ আদেশ দ্বারা প্রতিস্থাপন করার জন্য সরকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে যা ‘সরকারি কর্মচারীদের পেনশন সহজীকরণ আদেশ, ২০২০’ নামে অভিহিত হবে। এটি চলতি বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশিত হয়।
পেনশন মঞ্জুরির প্রয়োজনীয় ফরম, সনদ ও কাগজপত্রাদি : ক. কর্মচারীর নিজের অবসরগ্রহণের ক্ষেত্রে : আনুতোষিক ও অবসর ভাতা পাওয়ার জন্য নি¤œবর্ণিত ১ থেকে ১০ নম্বর ক্রমিকে উল্লিখিত ফরম, সনদ ও কাগজপত্রসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ বরাবর আবেদন করতে হবে এবং ওই ফরম, সনদ ও কাগজপত্রাদির ভিত্তিতে প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ কর্তৃক জারিকৃত পেনশন মঞ্জুরির আদেশসহ ১-১০ নম্বর ক্রমিকে উল্লিখিত কাগজপত্র হিসাবরক্ষণ অফিসে দাখিল করতে হবে। হিসাবরক্ষণ অফিস এর অতিরিক্ত কোনো ফরম, সনদ ও কাগজপত্র চাইতে পারবে না।
পেনশন আবেদন ফরম, নন-গেজেটেড কর্মচারীদের ক্ষেত্রে সার্ভিস বুক/গেজেটেড কর্মচারীদের ক্ষেত্রে সর্বশেষ ৩ বছরের চাকরির বিবরণী/এলপিসি, অবসর ও পিআরএল-এ গমনের মঞ্জুরিপত্র (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে), প্রত্যাশিত শেষ বেতনপত্র/শেষ বেতনপত্র (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে), ৪ কপি সত্যায়িত ছবি, জাতীয় পরিচয়পত্র, চাকরি স্থায়ীকরণের/নিয়মিতকরণের আদেশ (উন্নয়ন প্রকল্প হতে রাজস্ব খাতে স্থানান্তরিত আত্তীকরণের মাধ্যমে যোগদানকৃত, অ্যাডহক ভিত্তিতে নিয়োগকৃতদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, প্রাপ্তব্য পেনশনের বৈধ উত্তরাধিকার ঘোষণাপত্র, নমুনা স্বাক্ষর ও হাতের পাঁচ আঙুলের ছাপ এবং না-দাবির প্রত্যয়নপত্র।
একজন সরকারি কর্মকর্তা অবসরে যাওয়ার পর তাদের অবসর ভাতা বা পেনশনের টাকা তুলতে আগে যে হয়রানির শিকার হতে হতো ‘সরকারি কর্মচারীদের পেনশন সহজীকরণ আদেশ, ২০২০’ জারি হওয়ার পর তা অনেক সহজ হয়ে গেছে। ফলে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তারা হয়রানির হাত থেকে রক্ষা পেয়েছেন।
এ বিষয়ে অডিটর জেনারেল (এজি) অফিসের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে গতকাল এই প্রতিবেদককে বলেন, আমার অভিজ্ঞতায় দেখতে পেয়েছি, অনেক সরকারি কর্মচারী অবসরে যাওয়ার পর পেনশন তুলতে হয়রানির শিকার হন। কিন্তু ‘সরকারি কর্মচারীদের পেনশন সহজীকরণ আদেশ, ২০২০’ জারি হওয়ায় হয়রানি থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।
নতুন নিয়মে একজন সরকারি কর্মচারী অবসরে যাওয়ার পর তার সব কাগজপত্র ঠিক থাকলে কত দিনে তিনি তার পেনশন ভাতা তুলতে পারবেনÑ জানতে চাইলে তিনি বলেন, সব ঠিক থাকলে এক মাসের মধ্যে বা তারও কম সময়ের মধ্যে তার পেনশন ভাতা তুলতে পারবেন।
তিনি বলেন, পেনশন নিয়ে হয়রানি বন্ধ করতে ১৯৯৪ সালে প্রথম উদ্যোগ নেয়া হয়। এরপর ২০০১ সালেও কিছুটা অগ্রগতি হয়। তবে সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সময়ে ২০০৯ সালে পেনশন সহজীকরণের কাজ অনেকটা অগ্রগতি হয়। কারণ তিনি অবসরে যাওয়ার পর তার অবসর ভাতা উত্তোলন করতে গিয়ে যে হয়রানির শিকার হয়েছিলেন সেই অভিজ্ঞতা থেকে তিনি এ উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তবে বর্তমান অর্থসচিব আবদুর রউফ তালুকদার পেনশন সহজীকরণে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন । তার আগে সাবেক অর্থসচিব মুসলিম চৌধুরীও পেনশন সহজীকরণে চেষ্টা করেছেন।