ব্যর্থতা থেকে সফলতা : আব্রাহাম লিঙ্কনের উদাহরণ
আব্রাহাম লিঙ্কন - সংগৃহীত
আমরা সাধারণ মানুষ যত সহজে ব্যর্থতায় কাবু হয়ে যাই, যত সহজে লক্ষ্যহারা হয়ে পড়ি, তা হওয়া ঠিক নয়, একেবারেই ঠিক নয়। ওই আমেরিকার ওই বড় মানুষটার জীবনে বিশাল বিশাল সফলতা রয়েছে, তারপরও কিন্তু :
জীবনে মাত্র আঠারো মাসের বেশি কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ার সুযোগ পাননি।
কোনো কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে কোনো ডিগ্রি দেয়নি।
ন’বছর বয়সে বিষ-মেশানো দুধ খেয়ে তাঁর মা মারা যান।
বাবার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ভালো ছিল না, মারা গেলে বাবার দাফন-কাফনেও তিনি অংশ নেননি।
ব্যবসা করতে গিয়ে প্রথমবার লালবাতি জ্বালান।
আমেরিকার সিনেট নির্বাচনে দাঁড়িয়ে দু’-দু’বার পরাজিত হন।
নির্বাচন করতে গিয়ে প্রথমবার প্রেসিডেন্সিয়াল টিকেট পাননি।
ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচন করে একবার ব্যর্থ হন।
জীবনে দু’বার মরতে মরতে বেঁচে যান।
ডিগ্রি ছাড়া আইন ব্যবসায় নিয়োজিত ছিলেন, একবার সুপ্রিম কোর্টে মামলা চালাতে গিয়ে শোচনীয়ভাবে হারেন।
জীবনের একটা বড় অংশ জুড়ে ডিপ্রেশনের রোগী ছিলেন।
সরাসরি তাঁর কোনো বংশধর আজ আর বেঁচে নেই।
তিনি খুবই পশুপ্রেমিক ছিলেন, একবার হোয়াইট হাউসের আস্তাবলে আগুন লেগে তাঁর কয়েকটি অতি প্রিয় পশু মারা যায়।
আততায়ীর গুলিতে গুডফ্রাইডেতে তিনি মারা যান।
মারা গিয়েও তিনি শান্তি পাননি - কবর দেয়ার আগে তার কফিন পাঁচবার খোলা হয়।
তিনি মারা যাওয়ার এক বছর পর তাঁর প্রিয় কুকুরটাও মারা যায় - এক মাতাল ঘাতকের হাতে।
ডাকাতরা একবার তাঁর লাশটা কবর থেকে বের করে নিয়ে যেতে চেয়েছিল।
এত দুঃখ-কষ্ট, ব্যথা-বেদনা, ব্যর্থতা ও পরাজয়ের পরও তিনি হতোদ্যম হননি, তিনি পরাজয় মেনে নেননি। তিনি পথ খুঁজেছেন, পথ পেয়েছেন, ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। বায়ান্ন বছর বয়সে ১৮৬০ সালে তিনি আবার নির্বাচন করেছেন। এবার জিতেছেন। কোন পদে, শুনবেন? খোদ আমেরিকার প্রেসিডেন্ট পদে। তাঁর নাম কী জানেন? এতক্ষণে নিশ্চয়ই আপনারা বুঝে গেছেন, তিনি আর কেউ নন, আমেরিকার শ্রেষ্ঠতম প্রেসিডেন্টদের অন্যতম - আব্রাহাম লিঙ্কন।
ভেবে দেখুন, আপনি নিজেকে কখন ব্যর্থ বলবেন? ধরুন, আপনি কোনো কাজে একবার ব্যর্থ হলেন, আবার ব্যর্থ হলেন, বারবার ব্যর্থ হলেন, তারপর কী করবেন? একা একা ঘরের কোণে বসে নীরবে কাঁদবেন? না, কক্ষনও না। মনে রাখুন, আপনি এখনো ব্যর্থ হননি, আপনার মাথার ওপর এখনো আকাশ ভেঙ্গে পড়েনি, বরং আপনি কাজের মাঝেই আছেন, চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছেন, চেষ্টা ছেড়ে দেবেন না। আপনার সফলতার এখনো আশা আছে, এবং ষোল আনাই, কিন্তু হতাশা যদি আপনাকে একবার পেয়ে বসে, আপনি যদি অধৈর্য হয়ে নিরাশায় হাল ছেড়ে দেন, তাহলে ব্যর্থতার পথে কয়েক কদম কিন্তু এমনিতেই এগিয়ে গেলেন, আর যদি পরাজয় মেনে নিয়ে হাত-পা গুটিয়ে দু’চোখে শুধু সরষে ফুল দেখতে থাকেন, তাহলে মনের অজান্তে নিজের হাতে গাঁথা ব্যর্থতার মালাখানা নিজেই গলায় তুলে নিলেন।
এ অবস্থায় আত্মীয়স্বজন বন্ধু-বান্ধব কেউ আপনার কাছে ভিড়বে না, এমন কী দূর থেকে খোঁজখবরও রাখতে চাইবে না, যদি কিছু চেয়ে বসেন - এই ভয়ে! কেঁদেকেটে যদিও বা কাউকে আপনার ভাঙ্গা মন্দিরে আনতে পারেন, সে এসে শুধু করুণা আর উপদেশ খয়রাত করবে। বলবে, ‘তোমার এটা করা উচিৎ ছিল, ওটা করা উচিৎ ছিল’, ইত্যাদি, ইত্যাদি। সে সময় সে যদি আপনাকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য না করে তাহলে বুঝে নেবেন, আপনি অনেক ভাগ্যবান! আপনি যদি এমন ভাগ্য চান, তাহলে তো কথা নেই, আর যদি না চান, তাহলে আপনাকে মনটা শক্ত করে শিরদাঁড়া খাড়া করে উঠতে হবে। ভয়-ডর ঝেড়ে ফেলে দিন, মনে সাহস রাখুন, হা-হুতাশের কাছে দিয়েও যাবেন না, ধীরস্থিরভাবে চিন্তা করুন, আপনি লক্ষ্য বদল করুন, নতুন কৌশল নিন, নব উদ্যমে নতুনভাবে কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ুন, নিশ্চয়ই সফল হবেন। একবার না হয়, বারবার চেষ্টা করুন, বিচক্ষণ ও অভিজ্ঞ লোকদের পরামর্শ নিন, বিভিন্নভাবে কোশেশ জারি রাখুন, মকসুদে মঞ্জিলে একদিন পৌঁছবেনই। আর না পৌঁছলেই বা কী? জগতে কত মানুষই তো ব্যর্থতার মাঝে জন্মায় এবং সফলতার মুখ না দেখেই দুনিয়া ছেড়ে চলে যায়।