মার্কিন প্রত্যাহারকে সামনে রেখে আফগানিস্তানে ভূমিকা বাড়াচ্ছে চীন
ট্রাম্প ও শি - সংগৃহীত
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও এর মিত্ররা আফগানিস্তান থেকে তাদের বাহিনী চূড়ান্ত প্রত্যাহার শুরু করতে থাকার প্রেক্ষাপটে চীন দৃশ্যত দেশটিতে তার ভূমিকা ও প্রভাব বাড়াচ্ছে।
বেইজিং সক্রিয়ভাবে কাবুলে আফগান সরকার ও তালেবানের সাথে তাদের সম্পর্ক জোরদার করছে, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে সমঝোতা প্রতিষ্ঠার প্রয়াস চালাচ্ছে। গরিব দেশটিতে বৃহত্তর বাণিজ্য ও বিনিয়োগে সম্ভাবনা নিয়েই চীন তার কূটনৈতিক তৎপরতা পরিচালনা করছে।
লন্ডনভিত্তিক আফগান নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ আরিফ সাহার মনে করছেন, মার্কিন প্রত্যাহার-পরবর্তী সময়ে আফগানিস্তানে কিছু গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হাসিলের চেষ্টা করছে চীন।
তিনি রেডিও ফ্রি আফগানিস্তানে বলেন, আফগানিস্তানের বিশাল প্রাকৃতিক সম্পদ ভূরাজনৈতিক ও লজিস্টিক কারণে দূরের প্রতিবেশীদের চেয়ে নিকট প্রতিবেশীদের মাধ্যমে বেশি কাজে লাগানো যেতে পারে। চীন আরো ইঙ্গিত দিচ্ছে যে এই অঞ্চলে একমাত্র তাদেরই এমন আর্থিক ও অর্থনৈতিক সক্ষমতা আছে যা দিয়ে তারা নির্ভরযোগ্য মিত্র হতে পারে।
তিনি বলেন, বেইজিং তালেবানের সাথেও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে। আফগান শান্তিপ্রক্রিয়ার প্রতি চীন সমর্থন ঘোষণা করার পাশাপাশি তারা তালেবানের সাথে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তাদের নিরাপত্তা স্বার্থও রক্ষার চেষ্টা করছে। উত্তর-পূর্ব আফগানিস্তানের একটি প্রত্যন্ত এলাকা চীনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় জিনজিয়াঙের সাথে যুক্ত। এখানকার অস্থিরতা ও সহিংসতাকে বেইংজিং একটি বড় হুমকি মনে করে।
এধরনের স্বার্থের কারণেই আফগানিস্তানের সাথে সম্পর্ক জোরদার করতে চায় চীন। গত কয়েক সপ্তাহে বেশ কয়েকজন সিনিয়র চীনা কর্মকর্তা আফগান কর্মকর্তাদের সাথে কথাও বলেছেন।
চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইয়ি আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ হানিফ আতমারের সাথে টেলিফোনে কথা বলঅর পর ২৭ এপ্রিল যে বিবৃতি দিয়েছেন তাতে বলা হয়েছে যে আফগানিস্তানের প্রতিবেশী ও বন্ধু হিসেবে আফগান জনগণের নিজস্ব উন্নয়ন পথ ও অবস্থানের প্রতি সমর্থন দেয় চীন। তাদের শান্তিপ্রক্রিয়া ও সমন্বয়প্রক্রিয়ার প্রতিও সমর্থন রয়েছে চীনের।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, সম্প্রীতিপূর্ণ আফগানিস্তান-পাকিস্তান সম্পর্ক দেখতে অন্য যে কারো যে চীন বেশি আগ্রহী।
তিন দেশের মধ্যে সহযোগিতা জোরদার করার জন্য কাবুল ও ইসলামাবাদের মধ্যে সংলাপ আয়োজনের প্রস্তাবও দিয়েছে বেইজিং।
চীনে সূচিত করোনাভাইরাসের মধ্যে বেইজিংয়ের মাস্ক কূটনীতির অংশও আফগানিস্তান। কোভিড-১৯ মোকাবিলায় এই দেশটির ফেজ মাস্ক, সুরক্ষা সরঞ্জাম, ভেন্টিরেটরের মারাত্মক প্রয়োজন রয়েছে।
বেইজিং ২০১৪ সালে আফগানিস্তান থেকে ন্যাটোর বেশির ভাগ সৈন্য প্রত্যাহারের সময় আফগানিস্তানকে এড়ানোর যে নীতি গ্রহণ করেছিল, তা থেকে এখন সরে এসেছে। বর্তমানে আফগানিস্তানের সবচেয়ে বড় বিনিয়োগকারী হলো চীন। চীনা কোম্পানিগুলো তামা খনি ও তেল আরোহণে কোটি কোটি বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। আফগানিস্তানের অবকাঠামো ও উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতেও জড়িত রয়েছে চীনা অনেক কোম্পানি।
কূটনৈতিক দিক থেকে আফগানিস্তানের সমন্বয় প্রক্রিয়াকে সমর্থন করে চীন। তালেবান ও আফগান সরকারের মধ্যে অনানুষ্ঠানিক সভার আয়োজন করেছে বেইজিং। তাছাড়া সিনিয়র তালেবান নেতা মোল্লা আবদুল গনি বারাদরের মতো নেতাদের স্বাগত জানিয়েছে। দোহায় যুক্তরাষ্ট্র ও তালেবানের মধ্যে যে চুক্তি হয়েছে, সেটিকেও স্বাগত জানিয়েছে চীন।
তবে আফগানিস্তানে চীনের ভূমিকাতে সন্তুষ্ট নয় যুক্তরাষ্ট্র। সম্প্রতি অবসর গ্রহণকারী দক্ষিণ এ মধ্য এশিয়াবিষয়ক মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যালিস ওয়েলস নভেম্বরে চীনের সমালোচনা করে বলেছিলেন যে চীন বড় ধরনের কোনো মঞ্জুরি সহায়তা দেয় না। তারা কেবল বিনিয়োগ করে, বিশেষ করে তামার খনিতে, কিন্তু তামার খনির উন্নয়নের কাজটি কখনো করে না।
অবশ্য সাহার মনে করেন, চীন আগ্রাসী পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করে কেবল পাশ্চাত্যকেই ব্যর্থ করছে না, প্রতিবেশী ও আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের অবস্থানও দুর্বল করে তুলছে।
লন্ডনভিত্তিক আফগান বিশ্লেষক ভ্যালে আর্য বলেন, আফগানিস্তানে চীনা প্রয়াস তার নিকট প্রতিবেশী দেশের অর্থনীতি, সামরিক, কূটনৈতিক ও গুপ্তচরভিত্তিক সুবিধা কাজে লাগানোর অংশবিশেষ।
সূত্র : এসএএম