কোন সাবানে কতটা জীবাণু ধ্বংস করে

ডঃ অমিতাভ ভট্টাচার্য | May 06, 2020 06:03 am
কোন সাবানে কতটা জীবাণু ধ্বংস করে

কোন সাবানে কতটা জীবাণু ধ্বংস করে - সংগৃহীত

 

যে রোগে মৃত্যুর হার শতকরা মাত্র পাঁচ ভাগ, সেই রোগটাকে নিয়ে কী শুরু হয়েছে বলুন তো! গুজব আর আতঙ্কে তো কান পাতাই দায়। এলাকায় কারো করোনা ধরা পড়ার পর, যে ধরনের অসভ্যতা শুরু হয়ে যায়, মনে হয় কোনও আতঙ্কবাদী ধরা পড়েছে! সেদিন আবার শুনলাম, সাবান না স্যানিটাইজার, নাকি দুটোই- এই নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। সাবান হলে কোন সাবান? ডেটল- স্যাভলন সাবান, না নিম সাবান, না কার্বলিক সোপ , নাকি সুগন্ধি চন্দন সাবান , না গ্লিসারিন সাবান!

বিস্তারিত আলোচনায় যাবার আগে একটা কথা পরিষ্কার জানিয়ে দেই, শুধু করোনা নয়, যেকোনো ধরনের ভাইরাস - ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ আটকাতে সাবানের কোন বিকল্প নেই। কেন নেই বলছি। সাবানের অণুগুলো দেখতে অনেকটা পেরেকের মতো। যার মাথার দিকটা হাইড্রোফিলিক বা জলাকর্ষী আর লেজের মতো বাকি অংশ ওলেওফিলিক বা তৈলাকর্ষী। এই তৈলাকর্ষী হওয়ার ফলে লেজের মতো অংশটির ভাইরাসের লিপিড আস্তরণের প্রতি একটা আসক্তি থাকে। এই লিপিড অণুগুলোর পারস্পরিক বন্ধন খুব দৃঢ় নয়। তাই সাবানের লেজের মতো তৈলাকর্ষী অংশটি শাবলের ফলার মতো ভাইরাসের বাইরের আবরণটিকে ভেঙে দেয় এবং জিনের উপাদানগুলোকে নিষ্ক্রিয় করে দেয়। ভাইরাসের এই নিষ্ক্রিয় অংশগুলো পানিতে দ্রবীভূত হয়ে বেরিয়ে যায় । এজন্য সময় লাগে কুড়ি সেকেন্ডের মতো ।

সাবান একটি রাসায়নিক পদার্থ , ফ্যাটি আ্যসিডের লবণ । সোডিয়াম সল্ট অফ স্টিয়ারিক আ্যসিড অর্থাৎ স্টিয়ারিক আ্যসিডের সোডিয়াম লবণ । সরকারি নির্দেশ আছে এই লবণের পরিমাণ যে কোন সাবানে শতকরা ৭৬ ভাগ হতে হবে । দামে সস্তা বলে সাবানে পশুর চর্বি বা আ্যনিম্যাল ফ্যাট ব্যবহার করা হয়ে থাকে । সাবানের কাজ দেহত্বক পরিষ্কার করা । কথায় কথায় জীবাণুনাশক সাবান ব্যবহার করলে দেহত্বকের ক্ষতি হয় । আমাদের দেহত্বকে অসংখ্য আণুবীক্ষণিক জীবাণু রয়েছে দেহের পক্ষে যারা অতি প্রয়োজনীয় । জীবাণুনাশক সাবানের ঠেলায় তারা মারা পড়লে দেহত্বকের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গিয়ে চর্মরোগ দেখা দেবে অর্থাৎ হিতে-বিপরীত । জীবাণুনাশক সাবান তখনই ব্যবহারের প্রশ্ন আসবে যখন দেহত্বকের জন্য তার প্রয়োজন হবে ।

যেকোনো জীবাণুনাশক সাবান এর দাম বাজারি অন্যান্য যেকোনো সাবানের থেকে অনেক বেশি । কিন্তু সত্যি তাদের জীবাণুনাশক ক্ষমতা কতটা? নিম সাবান কি চন্দন সাবানের শুধু নিম বা চন্দনের গন্ধটুকুই পাওয়া যায়। একটা সাবানের যে সামান্য পরিমাণ নিম বা চন্দন থাকে তা দিয়ে জীবাণু নাশ হয় না। কার্বলিক সোপ সম্বন্ধেও একই কথা। জীবাণু নাশ করতে গেলে একটা সাবানে যে পরিমাণ কার্বলিক অ্যাসিড মেশাতে হবে, তাতে চামড়া পুড়ে যাবে।

শীতকালে আমরা গ্লিসারিন সাবান মাখি। গ্লিসারিন দেহ ত্বককে মসৃণ করে, জলীয়বাষ্প ধরে রেখে দেহত্বকের ফাটা রোধ করে। কিন্তু একটা সাবানের গ্লিসারিন বা ল্যানোলিন জাতীয় পদার্থ যদি শতকরা দুই ভাগের বেশি হয় তবে সাবান এর কার্যকারিতা অর্থাৎ ময়লা পরিষ্কার করার ক্ষমতাই নষ্ট হয়ে যাবে। আবার মাত্র দুই ভাগ গ্লিসারিন বা ল্যানোলিন আর দেহত্বকের কতটা উপকার করতে পারে ! কাজেই এরচেয়ে ভালো যেকোনো সাধারণ সাবান দিয়ে গা পরিষ্কার করার পর গায়ে গ্লিসারিন লাগানো, এতে খরচও অনেক কম পড়ে।

কাজেই আপনি ঠিক করুন বিজ্ঞাপনের ধন্দে পড়ে গ্যাটের কড়ি বেশি খরচ করে জীবাণুনাশক সাবান মাখবেন, না এমনি সাবান?

শুধু করোনা নয়, যেকোনো রোগ জীবাণু তাড়াতে সাবানের কোনো বিকল্প নেই। সাবানটায় যেন প্রচুর ফেনা হয়, সেটা খেয়াল রাখবেন। কোন কোম্পানি খেয়াল রাখা দরকার নেই। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, স্যানিটাইজারের চেয়ে সাধারণ সাবান করোনার কোভিড ১৯ নিধনে অনেক বেশি কার্যকরী।

সূত্র : বর্তমান


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us