ফ্রান্সে করোনা নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য
ফ্রান্সে করোনা নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য - সংগৃহীত
ডিসেম্বর মাসেই মারণ করোনার সংক্রমণ ছড়িয়েছিল ফ্রান্সে। নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত এক রোগীর স্বাস্থ্য পরীক্ষার স্যাম্পেল ফের পরীক্ষা করার পর এই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। মাইক্রোবিয়াল এজেন্টের একটি আন্তর্জাতিক জার্নালে বিষয়টি প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, প্যারিসের উত্তরভাগের একটি হাসপাতালে গত বছরের ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের জানুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত নিউমোনিয়া নিয়ে বেশ কিছু রোগী ভর্তি হয়েছিল। তাদের মধ্যে ১৪ জনে স্বাস্থ্য পরীক্ষার পুরনো নমুনা আবার পরীক্ষা করা হয়েছিল। এর মধ্যে আলজেরিয়ার ৪২ বছর বয়সি এক মাছ ব্যবসায়ীর করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে। ২৭ ডিসেম্বর ওই ব্যক্তির থেকে যে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল, তাতেই মারণ ভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া গিয়েছে। তার বিদেশে যাওয়ারও কোনো রেকর্ড ছিল না। বিষয়টি সামনে আসতেই তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। কারণ, সরকারিভাবে ইউরোপের প্রথম করোনা আক্রান্তের কথা জানুয়ারির শেষ দিকে জানানো হয়েছিল। সেক্ষেত্রে নতুন এই তথ্যে অনেক হিসেব-নিকেশ বদলে যেতে পারে।
বিষয়টি সামনে এনে হইচই ফেলে দিয়েছেন ফরাসি গবেষক ডা: ওয়াইভেস কোহেন ও তাঁর সহযোগীরা। যদিও একাধিক বিজ্ঞানী বিষয়টি নিয়ে দ্বিমত পোষণ করেছেন। নটিংহ্যাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মলিকিউলার ভাইরোলজির অধ্যাপক জোনাথন বল জানিয়েছেন, পরীক্ষাগারে সংক্রমণের কারণেও স্যাম্পেলটি সংক্রমিত হতে পারে। তাই হয়তো ফলাফল পজিটিভ এসেছে। তিনি আরও বলেন, ডিসেম্বর থেকেই ফ্রান্সে করোনার সংক্রমণ ছড়ালে আরও বেশি মানুষ আক্রান্ত হওয়ার কথা ছিল। আরও বেশ কয়েকজন বিজ্ঞানীরাও প্রায় একই মতামত প্রকাশ করেছেন। উল্লেখ্য, ইতালির চিকিৎসকেরাও একইভাবে পুরনো স্যাম্পেলের মধ্যে করোনার অস্তিত্বের প্রমাণ পেয়েছিলেন।
এদিকে, ব্রিটেনে সম্ভাব্য করোনায় আক্রান্ত হয়ে ৩২ হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। মঙ্গলবার প্রকাশিত এক রিপোর্টে এই তথ্য জানানো হয়েছে। জাতীয় পরিসংখ্যান দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, করোনায় আক্রান্ত হয়ে ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত ২৯ হাজার ৬৪৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। স্কটল্যান্ড ও নর্দান আয়ারল্যান্ড জুড়লে সরকারি হিসেবে মৃতের সংখ্যা ৩২ হাজার ৩১৩। প্রাণহানির নিরিখে ইউরোপের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ ইতালির থেকেও যা অনেক বেশি। যদিও এরমধ্যে সম্ভাব্য আক্রান্তদের সংখ্যা যোগ করা হয়নি।
অন্যদিকে, বিশ্বজুড়ে মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। ইতিমধ্যেই প্রাণহানির সংখ্যা আড়াই লক্ষ ছাড়িয়ে গিয়েছে। সবমিলিয়ে মঙ্গলবার পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ২ লক্ষ ৫৩ হাজার ১৬৬ জনের। পাশাপাশি, ৩৬ লক্ষ ৬৯ হাজারের বেশি মানুষ মারণ করোনার শিকার হয়েছে। দেশের নিরিখে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আমেরিকা। ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেশে মৃতের সংখ্যা ৭০ হাজার ছুঁই ছুঁই। সেই সঙ্গে করোনা পজিটিভ রোগীর সংখ্যাও ১২ লক্ষ ১৩ হাজার ছাড়িয়েছে।
এরমধ্যেই সরকারের অভ্যন্তরীণ এক খসড়া রিপোর্টে হাড় হিম করা সম্ভাব্য পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ১ জুন থেকে দেশে দৈনিক ৩ হাজার মানুষের মৃত্যু হতে পারে। পাশাপাশি, প্রতিদিন প্রায় ২লক্ষ মানুষ মারণ ভাইরাসে আক্রান্ত হবে।
এই খসড়া রিপোর্টের পরিসংখ্যান অনেকের রাতের ঘুম উড়িয়ে দেবে বলে মত সংশ্লিষ্ট মহলের।যদিও এই রিপোর্টের সত্যতা উড়িয়ে দিয়েছে হোয়াইট হাউস ও সেন্ট্রাল ফর ডিজিস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন। অন্যদিকে, একটানা লকডাউনের জেরে মার্কিন অর্থনীতিতে জোড়ালো ধাক্কা লেগেছে। তাই পরিস্থিতি সামাল দিতে এপ্রিল-জুন ত্রৈমাসিকের জন্য ২.৯ লক্ষ কোটি মার্কিন ডলার ধার করতে চলেছে রাজস্ব বিভাগ।
এদিকে, চীন ও কোরিয়ার আক্রান্তের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় চীনে মাত্র একজন করোনা পজিটিভ রোগীর খবর মিলেছে। ন্যাশনাল হেল্ফ কমিশন জানিয়েছে, ৩৯৫ জন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। সেই সঙ্গে, উপসর্গহীন প্রায় সাড়ে ন’শো আক্রান্তকে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। পাশাপাশি, মারণ ভাইরাসকে হারিয়ে সদ্য সেরে ব্যক্তিদের শরীরে থাকা অ্যান্টিবডি এবং টি সেল ভ্যাকসিন তৈরিতে কার্যকরী হবে বলে দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরা। অন্যদিকে, দক্ষিণ কোরিয়ায় শেষ ২৪ ঘণ্টায় ৪টি নতুন কেস সামনে এসেছে। নেপালেও এদিন সাতজন করোনা পজিটিভ রোগীর খোঁজ পাওয়া গিয়েছে। সবমিলিয়ে সেখানে আক্রান্তের সংখা ৮২-তে পৌঁছে গিয়েছে। অপরদিকে, সিঙ্গাপুরে ৬৩২ জনের করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে। সব মিলিয়ে দেশে আক্রান্তের সংখ্যা ১৯ হাজার ৪১০। এদিকে, করোনা সংক্রান্ত বিধিনিষেধ ভাঙার দায়ে ভারতীয় বংশোদ্ভূত এক মহিলাকে দোষী সাব্যস্ত করেছে সিঙ্গাপুর প্রশাসন। ওই মহিলার নাম পরমজিত কৌর। অপরদিকে, হংকং, তাইওয়ান, বিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, অষ্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডে বিগত দু’দিনে কোনও করোনা পজেটিভ রোগী পাওয়া যায়নি।
এদিকে, করোনা পরিস্থিতিতে স্পেনে কাজ হারিয়েছে প্রায় ৩৮ লক্ষ মানুষ। গত চারবছরের নিরিখে যা সর্বোচ্চ। এরমধ্যে প্রায় ২ লক্ষ ৮৩ হাজার মানুষ সরকারি সুবিধা পাওয়ার আশায় কর্মহীন হিসেবে নাম নথিভুক্ত করেছে। স্পেনের শ্রমদপ্তর এই তথ্য জানিয়েছে। এদিকে, মঙ্গলবার সেদেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ১৮৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। সার্বিকভাবে মৃতের সংখ্যা ২৫ হাজার ৬১৩ জন।
সূত্র : বর্তমান