করোনাভাইরাস : এক নারী গবেষককে ঘিরে তোলপাড়
চীনা গবেষক শি ঝেংলি - ছবি নিউ ইয়র্ক পোস্টের সৌজন্যে
নাম, শি ঝেং লি। উহান ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজির (ডব্লুআইভি) গবেষক। সেই গবেষণাগার যেখান থেকে কোভিড-১৯ ছড়িয়ে পড়ার অভিযোগ তুলেছে আমেরিকা। আর শি হলেন সেই গবেষক, যিনি ২০১৫ সালেই বাদুড় থেকে সার্সের মতো বিপজ্জনক ভাইরাস মানুষের মধ্যে সংক্রামিত হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন ‘নেচার’ জার্নালে। সম্প্রতি, আরো একটি গবেষণাপত্রে তিনি করোনার উত্স হিসেবে চীনের বাদুড়কেই দায়ী করেছেন। গত ডিসেম্বর মাস থেকে খোঁজ মিলছিল না ‘ব্যাট উইম্যান’ নামে পরিচিত শি’র।
সোশ্যাল মিডিয়ায় কানাঘুষো শোনা যাচ্ছিল, ডব্লুআইভির এই ডিরেক্টর প্যারিসে মার্কিন দূতাবাসের হাতে গোপন গবেষণার তথ্য তুলে দিয়েছেন। অবশেষে শনিবার চীনের সোশ্যাল মিডিয়া উইচ্যাটে যাবতীয় জল্পনা উড়িয়ে দিয়েছেন শি জেঙ্গলি। সাফ জানিয়েছেন, ‘আমি এবং আমার পরিবার ভালোই রয়েছি। পরিস্থিতি যতই কঠিন হোক না কেন, দেশের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা কখনো করব না। আমরা কোনো ভুল করিনি। বিজ্ঞানের প্রতি প্রবল বিশ্বাস রেখে বলছি, সঙ্কটের কালো মেঘ কেটে যাবে।’ সম্প্রতি তিনি কী করছিলেন, তার ৯টি ছবি পোস্টও করেছেন শি।
গত কয়েক দিন ধরেই গুজব নিয়ে বিরক্ত চীনা ‘ব্যাট উইম্যান’। স্বয়ং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও করোনার জন্য ডব্লুআইভির দিকে আঙুল তুলেছেন। সন্দেহ করছেন অন্য বিশ্বনেতারাও। এরই মধ্যে গত বছর ডিসেম্বর মাস থেকে তার খোঁজ মিলছিল না। ঠিক একই সময় থেকে করোনার সংক্রমণও শুরু হয় চীনে। এমনও খবর পাওয়া যাচ্ছিল যে মারণ ভাইরাসের জিনগত গঠন আবিষ্কারের পরেই গত ২ জানুয়ারি শি’র মুখ বন্ধ করে দিয়েছে বেইজিং।
পাশাপাশি, উঠে এসেছিল দেশের বিরুদ্ধে গিয়ে আমেরিকায় দ্বারস্থ হওয়ার সম্ভাবনাও। চীনের সরকারি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, এর আগেও শি উইচ্যাটে একাধিক জল্পনা খারিজ করেছেন। গত ২ ফেব্রুয়ারি তিনি জানিয়েছিলেন, ‘মানুষের অপরিচ্ছন্ন জীবনযাপনকে প্রকৃতির দেওয়া শাস্তি হল নোভেল করোনা ভাইরাস। আমি শপথ করে বলছি, এই ভাইরাসের সঙ্গে ল্যাবের কোনো সম্পর্ক নেই।’ ভারতীয় বিজ্ঞানীদের একটি গবেষণাপত্রের পরিপ্রেক্ষিতেই একথা জানিয়েছিলেন তিনি।
সম্প্রতি, মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাও (সিআইএ) করোনাকে মানব সৃষ্ট নয় বলে জানিয়েছে। তারপরেও চীনে তদন্তকারীদের পাঠাতে চাপ দিচ্ছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বেইজিং সেই চাপ সামলাতে পারে কিনা সেটাই দেখার।
করোনাভাইরাসে এ পর্যন্ত আড়াই লাখের বেশি লোক মারা গেছে, আক্রান্ত হয়েছে ৩৬ লাখ ৪১ হাজার মানুষ। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের। এই দেশটিতে আক্রান্ত হয়েছে ১২ লাখ ১২ হাজার মানুষ আর মারা গেছে প্রায় ৭০ হাজার। কারো কারো আশঙ্কা মৃত্যুর সংখ্যা আনায়াসেই লাখ ছাড়াবে।
আর চীনে মারা গেছে ৪ হাজার ছয় শ' জন, আক্রান্ত হয়েছে প্রায় ৮৩ হাজার।
সূত্র : বর্তমান