করোনায় মৃতদের দাফন নিয়ে জটিলতা, এবার রায়েরবাগে কবর
করোনায় মৃতদের লাশ রায়েরবাজার কবরস্থানে দাফন করা হচ্ছে - সংগৃহীত
করোনাভাইরাস সংক্রমণে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের লাশ খিলগাঁও তালতলা কবরস্থানে দাফন করা হচ্ছে না। এখন থেকে রায়েরবাজার শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধের পেছনের কবরস্থানে দাফনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। স্থানীয় লোকজনের আপত্তির কারণে ঢাকা সিটি করপোরেশন (উত্তর-দক্ষিণ) এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, করোনাভাইরাস সংক্রমণে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের লাশ খিলগাঁও তালতলা কবরস্থানে দাফন করতে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন সিদ্ধান্ত নেয় কিন্তু খিলগাঁও এলাকার বাসিন্দাদের প্রতিবাদের মুখে সেই সিদ্ধান্ত থমকে যায়। ফলে করোনাভাইরাস সংক্রমণে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের লাশ দাফন নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়।
খিলগাঁও তালতলা কবরস্থানে করোনায় মারা যাওয়া ব্যক্তিদের লাশ কবর না দেয়ার ব্যাপারে স্থানীয়দের পক্ষ থেকে নোটিশ টাঙিয়ে দেয়া হয়। এমনকি এনিয়ে তারা এলাকায় মিছিলও হয়। সম্প্রতি স্থানীয়দের প্রতিবাদের মুখে করোনায় মারা যাওয়া একজনের লাশ এই কবরস্থানে দাফনে বাধাগ্রস্ত হন সংশ্লিষ্টরা। একপর্যায়ে পুলিশের মধ্যস্থতায় ওই ব্যক্তির লাশ অন্য কবরস্থানে দাফন করা হয় বলে সূত্র জানায়।
তবে এ ব্যাপারে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সহকারী সমাজ কল্যাণ কর্মকর্তা আসাদুর রহমান আসাদ জানান, খিলগাঁও কবরস্থানের মাটি এটেল হওয়ায় বৃষ্টি হলে সমস্যা হতো। কবর খোঁড়ার পর সেখানে পানি জমে যেত। আর জায়গাও তেমন নেই। এ জন্যই রায়েরবাজার কবরস্থানে দাফনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, করোনাভাইরাসে মারা যাওয়া এক ব্যক্তির লাশ দাফনে এলাকাবাসী বাধা দেয়ার পরে ঢাকার অপর একটি কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। এরপর বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এলাকাবাসীর টাঙিয়ে দেয়া ব্যানারের ছবিসহ নানা মতামত ভাইরাল হয়। আবার কেউ কেউ লিখেছেন, স্থানীয় কেউ যদি করোনায় মারা যান, তবে তার লাশ কোথায় দাফন করা হবে?
খিলগাঁওয়ের এক বাসিন্দা জানান, সম্প্রতি একদিন রাতে এলাকার মানুষ মিছিল করে কবরস্থানের দিকে যায়। করোনায় মারা যাওয়া কাউকে যেন এই কবরস্থানে দাফন করা না হয় সেজন্য তারা মিছিল করেন।
সুমন নামে এক ব্যক্তি জানান, খিলগাঁও তালতলা কবরস্থানে করোনায় মারা যাওয়া ব্যক্তিদের লাশ দাফন করা হলে এলাকায় করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে যেতে পারে বলে তারা আশঙ্কা করছেন। শুধু তাই নয়, স্থানীয়রা একটি ব্যানারও কবরস্থানে গেটে টাঙিয়ে দিয়েছিলেন। ওই ব্যানারটিতে লেখা ছিল, সাধারণ জনগণের নিরাপত্তার স্বার্থে ‘করোনাভাইরাসে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের লাশ খিলগাঁও তালতলা কবরস্থানের পরিবর্তে ঢাকার বাইরে বা অন্য স্থানে নিরাপদ স্থানে দাফন করার ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করছি।’
এলাকাবাসীর এ ধরনের আপত্তির কারণে সিটি করপোরেশন তালতলা কবরস্থানে করোনায় মারা যাওয়া ব্যক্তিদের লাশ দাফনের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে বলে সূত্র জানায়।
ঢাকায় করোনায় মারা যাওয়া ব্যক্তির লাশ দাফন ও দাফনে নিয়োজিত বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আল মারকাজুল ইসলামের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হামজা ইসলাম গণমাধ্যমে বলেন, রায়েরবাজার কবরস্থানে করোনায় মারা যাওয়া ব্যক্তির লাশ দাফন করা হচ্ছে। গত ৩০ এপ্রিল থেকে ঢাকা সিটি করপোরেশনের পরামর্শক্রমে তারা রায়েরবাজার কবরস্থানে করোনায় আক্রান্ত বা সন্দেহে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের লাশ দাফন করছেন। রায়েরবাজার শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধের পেছনের কবরস্থানটি দেশের সবচেয়ে বড় কবরস্থান। এই কবরস্থানে এক লাখ লাশ কবর দেয়ার ব্যবস্থা রয়েছে।
জানা গেছে, ২০১৬ সালের ২৫ মার্চ রায়েরবাজার কবরস্থানের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রক শুরু করা হয়। গত বৃহস্পতিবার করোনাভাইরাস সংক্রমনে মারা যাওয়া দুই ব্যক্তির লাশ দাফনের মধ্য দিয়ে সেখানে করোনায় মারা যাওয়া ব্যক্তিদের লাশ দাফন প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, খিলগাঁও তালতলা কবরস্থানে এ পর্যন্ত দুই শতাধিক করোনায় আক্রান্ত কিংবা করোনা সন্দেহে মারা ব্যক্তির লাশ দাফন হয়েছে। আর পোস্তগোলা ও নারায়ণগঞ্জে ২৫ জন হিন্দুর লাশ সৎকার করেছে আল মারকাজুল ইসলাম নামক প্রতিষ্ঠানটি। দাফনের কাজে আল মারকাজুল ইসলামের ১৫ জন পুরুষ ও ৩ জন নারী সদস্য সার্বক্ষণিকভাবে নিয়োজিত রয়েছেন। তারা যথাযথ স্বাস্থ্য সতর্কতা মেনেই এসব লাশ দাফন ও সৎকারের কাজ করছেন। এখন পর্যন্ত তাদের কোনো দাফন কর্মী করোনায় আক্রান্ত হননি বলে জানা গেছে।