করোনাভাইরাস : দক্ষিণ এশিয়ায় সংক্রমণ কম থাকার রহস্য!
করোনাভাইরাস : দক্ষিণ এশিয়ায় সংক্রমণ কম থাকার রহস্য! - সংগৃহীত
সাপ্তাহিক সাউথ এশিয়ান ব্রিফে স্বাগতম। দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে করোনাভাইরাস সংক্রমণ কেন এত কম, তা ব্যাখ্যা করার চেষ্টা চালাব আমরা। এর সাথে থাকবে আফগানিস্তানে আরেকটি প্রাণঘাতী হামলা, শ্রীলঙ্কায় বাড়তে থাকা সাংবিধানিক সঙ্কট এবং বলিউডের দুই কিংবদন্তির মৃত্যু।
দক্ষিণ এশিয়ায় কেন করোনাভাইরাসে আরো বেশি সংক্রমণ হলো না?
আসুন আমরা বিষয়টি দেখি : প্রত্যেকেই আরো খারাপ কিছুর শঙ্কা করেছি। দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে করোনাভাইরাস প্রথম শনাক্ত হওয়ার পর এখন পর্যন্ত মাত্র ৬০ হাজারের মতো নিশ্চিত রোগী পাওয়া গেছে। একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে ছিল ১০ লাখের বেশি, স্পেন ও ইতালিতে দুই লাখের বেশি। আরেকভাবেই হিসাবটি করা যেতে পারে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলাতে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার চার ভাগের এক ভাগ বাস করে। কিন্তু এখানে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মাত্র ২ ভাগ। কেন?
সংখ্যাটি বিশ্লেষণ করা যাক। দক্ষিণ এশিয়ায় সংখ্যাটি কম হওয়াটা একটি ধাঁধা, বিশেষ করে এখানকার লোকসংখ্যার ঘনত্ব ও দুর্বল স্বাস্থ্য পরিচর্যা ব্যবস্থার কথা বিবেচনা করি। তাছাড়া পরীক্ষা করার সক্ষমতাই কতটুকু আছে? ভারত মাত্র ৮৩০,২০১টি পরীক্ষা করতে পেরেছে, অর্থাৎ প্রতি ১০ লাখে ৬১৪টি। এটি হলো বিশ্বে সবচেয়ে কম পরীক্ষার হার। কম পরীক্ষার জন্য যদি ব্যাপক বিস্তারের চিত্র গোপন করে থাকে, তবে তা অন্যান্য উপায়ে প্রকাশ পেতে পারে। ভারতে মাত্র চার ভাগ করোনাভাইরাস টেস্ট পজেটিভ এসেছে। অথচ যুক্তরাষ্ট্রে তা প্রায় ১৭ ভাগ। এতে বোঝা যায়, ভারতে ভাইরাসটি কম ছড়িয়েছে।
ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়াটা আরেকভাবে প্রকাশ পেতে পারত। তা হলো মৃত্যুর সংখ্যা। কিন্তু এখানেও দক্ষিণ এশিয়ায় তুলনামূলক কম লোক মারা গেছে। যুক্তরাষ্ট্রে মারা গেছে ৬০ হাজারের বেশি, অথচ ভারতে মাত্র ১,০৭৯ জন। তবে এই সংখ্যা আরো বেশি হতে পারত। ভারতে মোট মৃত্যুর মাত্র এক পঞ্চমাংশের সনদপত্র দেয়া হচ্ছে। কিন্তু সব মিলিয়েও যদি ধরি, তবুও সংখ্যাটি খুব বড় হয় না।
ভারতের ডাটাই যদি এই অঞ্চলের উদাহরণ হিসেবে বিবেচনা করা হয, তবে বলতে হবে যে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চল ভাইরাসটি সংক্রমণ রোধ করতে পেরেছে কিংবা মহামারি ছড়িয়ে পড়ার প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে তা। দ্বিতীয়টির বেলায় বলা যায়, বর্তমান লকডাউন ভাইরাসের দ্রুত বিস্তার হতে দেয়নি।
সফল পদক্ষেপ? দক্ষিণ এশিয়া সফল হয়েছে, আর পাশ্চাত্যের দেশগুলো ব্যর্থ হয়েছে? পাশ্চাত্যের চেয়ে কঠোর লকডাউন প্রয়োগ করেছে ভারত ও বাংলাদেশ। অন্যান্য দেশের তুলনায় এখানকার দেশগুলো অনেক আগেই লকডাউন করেছে। পাকিস্তান ছাড়া এই অঞ্চলের অন্য সব দেশ আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় ফ্লাইটও বন্ধ করে দেয়। পাকিস্তান চীনের সাথে ফ্লাইট চালু রাখে।
কিন্তু তাও সংক্রমণের হার কম হওয়ার পুরো ব্যাখ্যা দেয় না। কারণ এমনকি সীমান্ত বন্ধ করে দেয়ার পরও অভ্যন্তরীণ সংক্রমণ বেড়েছে। তাছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো বেশ কিছু ভুল করেছে। ভারত দেশব্যাপী লকডাউন জারি করেছিল কোনো নোটিশ না দিয়েই। এর ফলে লাখ লাখ অভিবাসী শ্রমিক বাস্তুচ্যুত ও অসহায় হয়ে পড়ে। পুরো অঞ্চলেই ধর্মীয় গ্রুপগুলো মার্চ মাসের প্রথম দিকে সভা সমাবেশ করায় করোনাভাইরাসের ক্লাস্টার দেখা দেয়।
তবে কর্তৃপক্ষ ধন্যবাদ পেতে পারে এ জন্য যে তারা তাদের শনাক্ত করে কোয়ারেন্টিন করতে সক্ষম হয়। আরেকটি তত্ত্ব প্রচলিত রয়েছে যে এই অঞ্চলের তরুণতর জনসংখ্যার কারণে সুবিধা পেয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ভারতের লোকদের গড় বয়স ২৮, অথচ যুক্তরাষ্ট্রে ৩৮। আফগানিস্তান, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের যথাক্রমে ১৮, ২৬, ২৪। সেটা না হয় মানা গেল, কিন্তু এখানকার বয়স্ক লোকদের মধ্যে কেন সংক্রমণের হার কম?
অন্যান্য যুক্তিও ধোপে টেকে না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, যক্ষ্মায় ব্যবহৃত ব্যাসিলিয়াস কামেটি গুইরিন ভ্যাকসিন করোনাভাইরাসের ব্যাপারে অব্যর্থ ওষুধ ভাবা যায় না। তাছাড়া উষ্ণতর আবহাওয়ায় করোনাভাইরাস কম ছড়ায়, তাও প্রমাণিত নয়।
বিশ্বে যতক্ষণ পর্যন্ত না ভ্যাকসিন আবিষ্কৃত হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত মহামারিটির অবসান হবে না। ফলে কোন দেশের কৌশল সফল, তা বলার সময় এখনো আসেনি। আর এখানেই দক্ষিণ এশিয়ার জন্য আসল সমস্যা নিহিত রয়েছে। এখানকার দেশগুলো ইতোমধ্যেই কিছু কিছু বিধিনিষেধ তুলে নিয়েছে। ভারত সরকার দোকানপাট খোলার অনুমতি দিয়েছৈ, এমনকি নির্মাণ, কৃষি, ম্যানুফেকচারিং কাজের অনুমতিও দিয়েছে। বাংলাদেশ কিছু পোশাক কারখানা খুলেছে। এসব কারণে সংক্রমণ বাড়তে পারে।
ফরেন পলিসি