'নিয়তি'
লিও টলস্টয় - সংগৃহীত
ফ্রান্স ও ইতালির সীমান্তের কাছে ভূমধ্যসাগরের উপকূলে ছোট্ট একটি রাজ্য। নাম মোনাকো। এ রাজ্যে যত লোক আছে, অনেক ছোট দেশের একটি শহরেও তার চেয়ে বেশি লোক বাস করে। রাজ্যটির লোকসংখ্যা মাত্র সাত হাজার। রাজ্যে যে পরিমাণ জমি আছে তা যদি সবার মধ্যে ভাগ করে দেয়া হয় তাহলে মাথাপিছু এক একরও ভাগে পড়বে না। এ খুদে রাজ্যটিতে প্রকৃতই একজন রাজা আছেন, তার প্রাসাদ আছে, সভাসদবৃন্দ আছেন, মন্ত্রীরা আছেন, একজন বিশপ আছেন, জেনারেলরা আছেন ও একটি সেনাবাহিনীও আছে।
সেনাবাহিনী বড় নয়। সৈন্যসংখ্যা মাত্র ষাটজন। তারপরও তা সেনাবাহিনী বটে। অন্য দেশের মতো এখানেও জনগণের ওপর কর আছে : তামাক, মদ ও স্পিরিট ও নির্বাচন কর। যদিও অন্যান্য দেশের মতো এ রাজ্যের লোকজনও মদ খায় ও ধূমপান করে, কিন্তু তাদের সংখ্যা এতই কম যে, তিনি যদি রাজস্ব আয়ের একটি নতুন ও বিশেষ উৎস না পেতেন তাহলে তার সভাসদ ও কর্মকর্তাদের এমনকি নিজের খরচও জোগাতে পারতেন না। এ বিশেষ রাজস্ব আসত একটি জুয়ার হাউজ থেকে। লোকজন সেখানে রুলেত খেলে। লোকেরা সেখানে খেলে, আর তারা হারুক বা জিতুক, খেলার আয় থেকে হাউজের কিপার একটি অংশ পায়। তার লাভ থেকে একটা বড়সড় ভাগ সে রাজাকে দেয়। সে যে রাজাকে এত টাকা দেয় তার কারণ হলো ইউরোপে জুয়া খেলার এটাই একমাত্র জায়গা। জার্মানির কিছু সার্বভৌম খুদে শাসক এ ধরনের জুয়ার হাউজ চালাতেন। কিন্তু কয়েক বছর আগে সেগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। কারণ সেগুলো খুব ক্ষতি করছিল। লোকজন জুয়ার হাউজে ভাগ্য পরীক্ষা করতে আসত। তার কাছে যে অর্থ থাকত তার সবই হারত সে। তারপর নেশার বশে টাকা ধার করত এবং সেটাও হারাত। তারপর হতাশাগ্রস্ত হয়ে হয় ডুবে মরত আর নয় আত্মহত্যা করত। সে কারণে জার্মান সরকার তার শাসকদের এভাবে অর্থ উপার্জন নিষিদ্ধ করে। কিন্তু মোনাকোর রাজাকে থামানোর কেউ ছিল না। তিনি একচেটিয়াভাবে এ ব্যবসায় চালিয়ে যাচ্ছিলেন।
সুতরাং জুয়া খেলতে ইচ্ছুক সবাই মোনাকো যায়। তারা জিতুক বা হারুক, তাতেই মোনাকোর রাজার লাভ। প্রবাদে বলে ‘সৎপথের পয়সা দিয়ে পাথরের প্রাসাদ তৈরি করা যায় না।’ মোনাকোর রাজা জানতেন এটা একটা নোংরা ব্যবসা, কিন্তু তার করার কিছু ছিল না। তাকেও তো বাঁচতে হবে! তামাক ও মদের ওপর থেকে রাজস্ব আদায়ও কোনো ভালো কাজ নয়। তবু এভাবেই তিনি চলছিলেন ও রাজ্য চালাচ্ছিলেন, টাকা আদায় করছিলেন এবং একজন প্রকৃত রাজার সব আনুষ্ঠানিকতাসহ রাজদরবার বজায় রেখেছিলেন।
তার রাজ্যাভিষেক হতো, তিনি রাজপ্রতিনিধিদের স্বাগত জানাতেন, পুরস্কার দিতেন, দণ্ড দিতেন, ক্ষমা করতেন। তিনি সেনাবাহিনী পরিদর্শন করতেন, তার মন্ত্রিপরিষদ ছিল, আইন ছিল ও বিচারের আদালত ছিল। অর্থাৎ অন্য রাজাদের যা ছিল তারও তাই ছিল, তবে ছোট আকারে।
কয়েক বছর আগে এ ছোট্ট রাজ্যটিতে একটি খুনের ঘটনা ঘটে। রাজ্যের মানুষ ছিল শান্তিপ্রিয়। আগে কখনো এখানে খুনের ঘটনা ঘটেনি। বিচারকেরা খুব দায়িত্বশীলতার সাথে বিচারকাজ শুরু করলেন। বিচারের সব রীতিনীতি মেনে বিচারকাজ চলতে থাকল। বিচারকরা, কৌঁসুলিরা, জুরিবৃন্দ ও ব্যারিস্টারদের নিয়ে চলল বিচার। যুক্তি-প্রমাণ ও তা বিচার-বিশ্লেষণ করা হলো। অবশেষে ঘোষণা হলো রায়। আইন মোতাবেক অপরাধীর শিরশ্ছেদ করার দণ্ড দিলেন বিচারকেরা। ঠিক বিচারই হয়েছে। পরে দণ্ডাদেশ পেশ করা হলো রাজার কাছে। রাজা রায় অনুমোদন করলেন; যদি অপরাধীকে শিরশ্ছেদ করতে হয়, তবে তা করা হোক।
এ ব্যাপারটায় একটাই শুধু সমস্যা ছিল। মোনাকো রাজ্যে শিরশ্ছেদ করার জন্য যেমন গিলোটিন ছিল না, তেমনি আবার কোনো জল্লাদও ছিল না। মন্ত্রীরা বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় বসলেন। অপরাধীর শিরশ্ছেদ করার জন্য ফরাসি সরকার তাদের একটি গিলোটিন ও একজন জল্লাদ ধার দিতে পারে কি না, আর সেটা করলে কী পরিমাণ খরচ পড়বে তা ফরাসিরা দয়া করে জানাবে কি না; তা জানতে চেয়ে চিঠি লেখার সিদ্ধান্ত হলো। পাঠানো হলো চিঠি। এক সপ্তাহ পর জবাব এলো চিঠির : একটি মেশিন ও একজন শিরশ্ছেদ বিশেষজ্ঞ পাঠানো যেতে পারে, খরচ পড়বে ১৬ হাজার ফ্রাংক। তা আবার রাজার সামনে পেশ করা হলো। তিনি ভাবতে থাকলেন। ১৬ হাজার ফ্রাংক! দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তির মূল্যও তো এত নয়। আরো কমে করা যায় না? ১৬ হাজার ফ্রাংক রাজ্যের সব মানুষকে মাথাপিছু ২ ফ্রাংক করে দেয়ার পরও অবশিষ্ট থাকে। রাজ্যের লোকেরা এটা মানবে না, দাঙ্গা বেধে যেতে পারে।
সুতরাং করণীয় নির্ধারণের জন্য মন্ত্রিসভার বৈঠক ডাকা হলো। অনেক আলাপ-আলোচনার পর ইতালির কাছেও একই রকম অনুরোধ পাঠানোর পক্ষে মত দিলো সবাই। ফরাসি সরকার প্রজাতন্ত্রী, তাই রাজাদের প্রতি তাদের সম্মানবোধ নেই। কিন্তু ইতালিতে আছেন ভ্রাতৃপ্রতিম রাজা, তাই সস্তায় কাজটি করেও দিতে পারেন। দ্রুত চিঠি লেখা হলো। জবাবও পাওয়া গেল দ্রুতই।
ইতালি সরকার জানাল তারা আনন্দের সাথেই একটি মেশিন ও সাথে একজন বিশেষজ্ঞকে পাঠাবে এবং তাদের সফর খরচসহ এ জন্য ব্যয় হবে ১২ হাজার ফ্রাংক। এ খরচ তুলনামূলকভাবে কম হলেও অনেক বেশি। অপরাধীর জন্য এত টাকা ব্যয় করা অযৌক্তিক। এ অর্থ এখনো জনগণের মাথাপিছু দেড় ফ্রাংক। মন্ত্রিসভার আরেকটি বৈঠক ডাকা হলো। আরো কম খরচে কাজটি কিভাবে করা যায় তা নিয়ে বিশদ আলোচনা ও বিভিন্ন প্রস্তাব বিবেচনা করে দেখা হলো। কথা উঠল যে, সৈনিকদের কেউ কি দেশীয় প্রথা অনুযায়ী এ কাজটি করতে পারে না? সেনাবাহিনীর জেনারেলকে তলব করা হলো। তাকে জিজ্ঞেস করা হলো : সৈন্যদের মধ্যে কি এমন কেউ নেই যে, অপরাধীর শিরñেদের কাজটি করতে পারে? যুদ্ধের সময় তো তারা মানুষ হত্যা করতে দ্বিধা করে না। আসলে সে জন্যই তো তারা প্রশিক্ষণ লাভ করেছে।
জেনারেল তার সৈন্যদের সাথে কথা বললেন। তাদের মধ্যে কেউ এ কাজটি করতে রাজি আছে কি না জানতে চাইলেন। কিন্তু সৈন্যদের কেউই এতে রাজি হলো না। তারা সবাই বলল : না, এটা কিভাবে করতে হয় আমরা জানি না। তা ছাড়া এ রকম প্রশিক্ষণ আমাদের দেয়া হয়নি।
এখন কি করা যায়? আবার মন্ত্রিসভার বৈঠক বসে। সবাই নানা প্রস্তাব বিবেচনা-পুনর্বিবেচনা করেন। একটি কমিশন গঠন করা হয়। তারপর কমিটি, সাবকমিটি। অবশেষে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যে, সবচেয়ে ভালো পন্থা হলো দণ্ডিত অপরাধীর শিরচ্ছেদের বদলে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হোক। তাহলে রাজার ক্ষমা প্রদর্শনও হবে, অন্য দিকে বিপুল অর্থ ব্যয় থেকেও রক্ষা পাওয়া যাবে।
রাজা এতে রাজি হলেন। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সব ব্যবস্থা করা হয়। এখানে একমাত্র সমস্যা হলো যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত কয়েদিকে রাখার মতো কোনো কারাগার রাজ্যে ছিল না। একটি মাত্র ছোট হাজতখানা ছিল যেখানে আটক লোকদের সাময়িকভাবে রাখা হতো। কিন্তু শক্তপোক্ত কোনো স্থায়ী কারাগার তৈরি করা হয়নি। যাহোক, এ ধরনের একটি জায়গা খুঁজে বের করা হলো। সেখানে যুবক অপরাধীকে আটক রাখা হলো। তাকে পাহারা দেয়ার জন্য নিয়োগ করা হলো একজন প্রহরী। সে তাকে পাহারা দেয়ার পাশাপাশি রাজপ্রাসাদের রান্নাঘর থেকে তার জন্য খাবারও এনে দিত।
কারাগারে মাসের পর মাস কাটে বন্দীর। এভাবে এক বছর পেরিয়ে যায়। এক বছর পর রাজা এক দিন তার আয়-ব্যয়ের হিসাব দেখছিলেন। তিনি ব্যয়ের ক্ষেত্রে একটি নতুন খাত দেখতে পেলেন। এটা ছিল বন্দীর জন্য ব্যয় যা একেবারে কম ছিল না। এর মধ্যে ছিল বিশেষ প্রহরী ও বন্দীর খাবার বাবদ ব্যয়। এর পরিমাণ ছিল বছরে ৬ শ’ ফ্রাংকেরও বেশি। এখানে সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় ছিল, বন্দীটি ছিল যুবক বয়সী এবং কমপক্ষে তার পঞ্চাশ বছর বাঁচার সম্ভাবনা রয়েছে। ততদিন তার পেছনে অনেক টাকা ব্যয় হয়ে যাবে। বিষয়টি গুরুতর হয়ে দাঁড়াল রাজার কাছে। এভাবে চলতে পারে না। রাজা আবার মন্ত্রিদের তলব করলেন। সভায় তাদের উদ্দেশে তিনি বললেন : এ বদমাশটার জন্য খরচ কমানোর একটা পথ খুঁজে বের করুন আপনারা। কারণ বর্তমান যে ব্যবস্থা চলছে তা খুব ব্যয়বহুল।
মন্ত্রীরা আবার বৈঠকে বসলেন। তারা নানা প্রস্তাব বিবেচনা ও পুনর্বিবেচনা করলেন। অবশেষে এক মন্ত্রী বললেন : ভদ্রমহোদয়গণ! আমার প্রস্তাব হলো প্রহরীকে রাখা দরকার নেই। তাকে বাদ দেয়া হোক।
অন্যরা চিৎকার শুরু করলেন
: তা কী করে হয়! বন্দী তো পালিয়ে যাবে।
প্রথম মন্ত্রী বললেন
: বেশ তো, সে যদি পালিয়ে যায়, যাক। তখন তাকে ধরে ফাঁসি দেয়া যাবে।
এরপর তারা তাদের আলোচনার ফলাফল রাজাকে অবহিত করলেন। রাজা তাদের সাথে একমত হলেন। প্রহরীকে বরখাস্ত করা হলো। এরপর কী ঘটে তা দেখার অপেক্ষায় রইলেন তারা। ঘটনা যা ঘটল তা হলো এই যে রাতের খাবার সময় হলে অপরাধী বাইরে বেরিয়ে এলো। প্রহরীকে দেখতে না পেয়ে সে তার খাবার সংগ্রহের জন্য সোজা রাজার রান্নাঘরে হাজির হলো। তাকে যে খাবার দেয়া হলো তা নিয়ে সে ফিরে এলো কারাগারে। তারপর নিজেই দরজা বন্ধ করে দিলো ভেতর থেকে। পরদিনও একই ঘটনা ঘটল। সে সময়মতো গিয়ে তার খাবার নিয়ে এলো রান্নাঘর থেকে। কিন্তু পালানোর সামান্যতম ইচ্ছাও তার মধ্যে লক্ষ করা গেল না।
এবার কী করা যায়! মন্ত্রীরা আবার বৈঠকে বসলেন। সবাই একমত হলেন যে তাকে সোজাসুজি বলে দেয়া হোক যে তুমি বিদায় হও। তার ব্যয় বহন করা সম্ভব নয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে বিচারমন্ত্রী অপরাধীকে ডেকে পাঠালেন। তাকে জিজ্ঞেস করলেন
: তুমি পালাচ্ছ না কেন? তোমাকে পাহারা দেয়ার প্রহরী নেই। তোমার যেখানে খুশি চলে যাও, রাজা কিছু মনে করবেন না।
অপরাধী জবাব দেয়;
: আমারও ধারণা যে রাজা কিছু মনে করবেন না। কিন্তু আমার কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। আমি কী করতে পারি? আপনারা দণ্ড দিয়ে আমার জীবনটাকে ধ্বংস করে দিয়েছেন। আমাকে দেখলে লোকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। শুধু তাই নয়, আমার কাজও করার উপায় নেই। আপনারা আমার সাথে খারাপ আচরণ করেছেন। এটা ঠিক নয়। প্রথমে আপনারা আমাকে শিরশ্ছেদের দণ্ড দিলেন। সেটা কার্যকর করা উচিত ছিল। কিন্তু আপনারা তা করলেন না। এটা হলো একটি বিষয়। আমি এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ করিনি। এরপর আপনারা আমাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিলেন এবং আমাকে পাহারা দেয়া ও খাবার এনে দেয়ার জন্য একজন প্রহরী মোতায়েন করলেন। কিন্তু পরে তাকে আপনারা সরিয়ে নিলেন। ফলে আমাকে নিজেই খাবার এনে খেতে হচ্ছে। তবু আমি কোনো অভিযোগ করিনি। কিন্তু আপনারা সত্যিই চান যে, আমি চলে যাই। আমি এতে রাজি নই। আপনারা যা খুশি করতে পারেন, কিন্তু আমি এখান থেকে যাবো না।
কী করা যায়! আবার বৈঠকে বসলেন মন্ত্রীরা। কোন পথ গ্রহণ করলে ভালো হয়? অপরাধী এখান থেকে যাবে না। তারা গোটা বিষয় আবার পর্যালোচনা ও বিবেচনা করলেন। শেষে তারা সিদ্ধান্তে পৌঁছলেন যে, তাকে পেনশন দেয়াই হচ্ছে তার হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার একমাত্র উপায়।
রাজাকে তাদের সিদ্ধান্তের কথা জানালেন তারা। এ ক্ষেত্রে পেনশন কোনো বিষয় নয়Ñ বিষয় হলো তার হাত থেকে যেভাবেই হোক মুক্তি পেতে হবে। তার পেনশনের পরিমাণ ধরা হলো ৬ শ’ ফ্রাংক। অপরাধীকে সে কথা জানিয়ে দেয়া হলো।
: ঠিক আছে, শোনার পর বলল সে। আপনারা যদি নিয়মিত আমাকে টাকাটা দেন তাহলে আমার কোনো আপত্তি নেই। আমি আপনাদের প্রস্তাবে রাজি।
অতএব ব্যাপারটার সমাধান হয়ে গেল। পেনশনের এক-তৃতীয়াংশ টাকা এককালীন অগ্রিম দেয়া হলো অপরাধীকে। তারপর সে রাজার এলাকা ছেড়ে চলে গেল। ট্রেনে মাত্র পনের মিনিটেই সীমান্তে পৌঁছে যায় সে। তারপর সীমান্ত পেরিয়ে প্রবেশ করে অন্য রাজ্যে। সীমান্তের ঠিক অপর পাড়েই এক টুকরো জমি কিনে সে বাড়ি নির্মাণ করে। সেখানে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে একটি বাগান তৈরি করেছে। এখন সুখেই দিন কাটে তার। নিয়মিতভাবে যথাসময়ে গিয়ে পেনশনের টাকা তুলে আনে। সেই টাকা নিয়ে গিয়ে বসে জুয়ার টেবিলে। দুই বা তিন ফ্রাংকের বাজি ধরে। কখনো জেতে, কখনো হারে। তারপর বাড়ি ফিরে আসে। শান্তিপূর্ণ জীবনে ভালোই আছে সে।
তার ভাগ্য ভালো ছিল যে, সে এমন একটি দেশে অপরাধ করেছিল যে দেশের কর্র্তৃপক্ষ তার শিরñেদ কিংবা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের ব্যয় বহন করতে রাজি ছিল না।
* লিও টলস্টয় : তার পুরো নাম কাউন্ট লেভ নিকোলায়েভিচ টলস্টয়। লিও টলস্টয় নামে সারা বিশ্বে পরিচিত। ১৮২৮ সালের ৯ সেপ্টেম্বর তৎকালীন রাশিয়ার তুলা অঞ্চলের ইয়াস্নায়া পলিয়ানা গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। ১৮৪৪ সালে ১৬ বছর বয়সে আইন ও প্রাচ্য ভাষা বিষয়ে পড়ার জন্য কাজান বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। কিন্তু শিক্ষকেরা তাকে পড়াশোনায় অযোগ্য ও অনিচ্ছুক সাব্যস্ত করায় তিনি বিশ্ববিদ্যালয় ত্যাগ করেন। তার শিক্ষাজীবনের সেখানেই ইতি ঘটে। ১৮৫১ সালে তিনি সৈন্যদলে ভর্তি হন ও চেচনিয়ায় যুদ্ধ করেন। তখন থেকেই তার লেখালেখির শুরু। তার সাহিত্যে কোনো কল্পনা বিলাস নেই, পুরোটাই অভিজ্ঞতার সাহিত্যিক রূপায়ণ। তিনি ছিলেন রুশ সেনাবাহিনীর একজন সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট। যুদ্ধের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা রূপায়িত হয়েছে তার সুবিখ্যাত ‘ওয়ার অ্যান্ড পিস’ উপন্যাসে। তার আরেক বিখ্যাত উপন্যাস ‘আনা কারেনিনা’। এ দু’টি উপন্যাসই বিশ্ব সাহিত্যের অন্যতম সেরা সৃষ্টি হিসেবে স্বীকৃত। ১৯১০ সালের ২০ নভেম্বর রাশিয়ার অস্তাপোভো নামের এক রেলস্টেশনে তিনি মারা যান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮২ বছর। বর্তমান গল্পটি রুশ ভাষা থেকে ‘টু ডিয়ান’নামে ইংরেজিতে অনূদিত হয়। এটি টলস্টয় ১৮৯৭ সালে রচনা করেন।
অনুবাদ : হোসেন মাহমুদ