দেহঘড়ি সন্ধান করি
দেহঘড়ি সন্ধান করি - সংগৃহীত
আমাদের দেশের বাউল সাধকেরা (ফরহাদ মজহারের ভাষায় ‘ভাবুক’) দীর্ঘ দিন ধরেই বলে আসছেন, ‘যা আছে ভাণ্ডে, তা-ই আছে ব্রহ্মাণ্ডে।’ অর্থাৎ আমাদের দেহটাই পুরো মহাবিশ্ব। তারা এই দেহঘড়ি কোন মিস্ত্রি বানিয়েছেন, তা সন্ধান করতে বলেছেন। তবে রিডার্স ডাইজেস্ট পত্রিকায় আমাদের দেহটি কী আশ্চর্য পন্থায় কাজ করে, সে দিকে দৃষ্টি দিয়েছে। একটু দেখা যাক, আমাদের অজান্তে দেহঘড়িটি কিভাবে কাজ করছে।
২০ হাজার চিন্তা
১০০ বিলিয়ন নিউরনের (বা মস্তিষ্ক কোষ) প্রতিটি প্রতি সেকেন্ডে গড়ে পাঁচ থেকে ৫০ বার ‘আঘাত’ (একে অপরের সাথে কথা বলে) করে। এই তরঙ্গ ঘণ্টায় ৪৩৫ কিলোমিটারের মতো গতিতেও ছুটে চলে। আর এ কারণেই আমরা মুহূর্তেই কোনো বস্তু দেখি এবং সেটিকে চিনতে পারি : যেমন ১. এটা বিড়াল, ২. এটা কমলা, ৩. মনে পড়ে আজ হুমায়ূন আহমেদের নাটক আছে, ৪. হুমায়ূন আহমেদের নাটক আমার খুব প্রিয়।
আমরা খুব বেশি ঠাণ্ড হই না গরম হই না
আপনার দেহের অভ্যন্তরে থাকা থার্মোস্ট্যাটটি (তাপ সংরক্ষণ করার যন্ত্র) চমকপ্রদভাবে তাপ নিয়ন্ত্রণের কাজটি করে। মাত্র এক ডিগ্রির মতো সামান্য পরিবর্তনেও আপনার দেহে জীবনরক্ষাকারী অবস্থার সৃষ্টি হয়। প্রচণ্ড গরমের সময় আপনার ত্বকের রক্ত চলাচলকারী ধমনীগুলো দেহ থেকে তাপ বের করে দিতে থাকে। তাপমাত্রা কমে যাওয়া মাত্র লোপকূপগুলো বন্ধ হয়ে ঘাম ঝরানো প্রক্রিয়া থামিয়ে দেয়। আবার দেহের তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের কম হতে থাকলে উষ্ণতা বাড়ানোর কাজ শুরু করে দেয়।
প্রতি মিনিটে আপনার হৃৎকম্প ৬০ থেকে ১০০ বার
আপনি কল্পনা করে দেখুন তো আপনার বাহু দু’টি মিনিটে ৬০ থেকে ১০০ বার সঙ্কুচিত হচ্ছে। এভাবে সঙ্কুচিত হয় দিনে এক লাখ বার। সাধারণ মানুষ সারা জীবনে হয় তিন বিলিয়ন বার।
হৃৎপিণ্ডের সবচেয়ে অবাক করা কাজ হলো আপনার জীবনযাত্রার সাথে সে খাপ খাইয়ে নেয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আপনি যখন কঠোর পরিশ্রম করতে থাকেন, তখন হৃৎপিণ্ডের ৭০ ভাগ শ্রম ব্যয় হয় আপনার পেশিগুলোকে বাড়তি জ্বালানি দিতে। আবার আপনি যখন অলস সময় কাটান, তখন ব্যয় করে মাত্র ২০ ভাগ। পা থেকে মাথা পর্যন্ত আপনার দেহে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে মোট এক লাখ ৬১ হাজার কিলোমিটার লম্বা রক্তপ্রবাহের ধমনী আছে। প্রতিদিন আপনার হৃৎপিণ্ড সেগুলোতে প্রায় ৭,৫৭০ লিটার রক্ত পাম্প করে।
বিনা চেষ্টায় শ্বাস নেন ২৫ হাজার বার
আপনাকে যদি সজ্ঞানে শ্বাস-প্রশ্বাসের কাজ করতে হতো, তবে আপনি অন্য কোনো কাজই করতে পারতেন না, এমনকি ঘুমাতেও পারতেন না। চিন্তা করে দেখুন, আপনার মস্তিষ্ক এমন একটি ব্যবস্থা করে দিয়েছে, যার ফলে আপনি স্বয়ংক্রিয়ভাবেই শ্বাস-প্রশ্বাসের কাজটি করতে পারছেন। কেন এত ঘন ঘন শ্বাস নিতে হয় বা প্রশ্বাস ছাড়তে হয়, ভেবে দেখেছেন কি? মানুষের হজমপ্রক্রিয়া বেশ জটিল। এ জন্য মিনিটে প্রায় ২৫০ এমএল অক্সিজেন প্রয়োজন। আপনার বিপুল অক্সিজেনের চাহিদা পূরণ করার জন্য ফুসফুস দু’টি তৈরি হয়েই আছে। ফুসফুস দু’টিতে প্রায় ৩০০ মিলিয়ন অতিক্ষুদ্র বায়ু কোষ আছে। নাম আলভেওলি। দেহে অক্সিজেন জোগান দিতে এবং কার্বন-ডাই অক্সাইড বের করতে এসব কোষে ৭০ বর্গমিটার থেকে ১০০ বর্গমিটার (একটি টেনিস কোর্টের প্রায় অর্ধেকটার সমান প্রায়) জায়গা রয়েছে।