করোনা সঙ্কটে সত্যিকারের নেতা

নিজস্ব প্রতিবেদক | May 03, 2020 06:59 pm
নিউ জিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী

নিউ জিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী - সংগৃহীত

 

নেতৃত্বের সংজ্ঞা নির্ণয় করা কঠিন হতে পারে, তবে সঙ্কটের সময় সহজেই চেনা যায়। মহামারিটি ভয়, রোগ ও মৃত্যু ছড়িয়ে দিতে থাকায় বিশ্বজুড়ে জাতীয় নেতারা ভয়াবহভাবে পরীক্ষিত হচ্ছেন। কেউ কেউ পারেননি, অনেক সময় ভয়াবহভাবে ব্যর্থ হয়েছেন। তবে এমন নেতাও আছেন যারা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেছেন, দৃঢ়সংকল্প, সাহসিকতা প্রদর্শন করেছেন, বিজ্ঞানের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেছেন, শিষ্টাচার দেখিয়েছেন এবং এর মাধ্যমে জনগণের ওপর থেকে এই রোগের প্রভাব হ্রাস করেছেন।

নিউজিল্যান্ডের ৩৯ বছর বয়স্কা প্রধানমন্ত্রী জ্যাসিন্দা আর্ডেন দুর্দান্তভাবে সাড়া দিয়েছিলেন। ২১ মার্চ যখন নিউজিল্যান্ডের মাত্র ৫২ জন লোক মাত্র শনাক্ত বলে ঘোষিত হয়েছিল, তখনই তিনি তার দেশবাসীকে সরকারের করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা জানিয়ে দিয়েছিলেন। তার বার্তা ছিল পরিষ্কার : এসব সিদ্ধান্তের ফলে নিউজিল্যান্ডবাসীর চলাচলতে আধুনিক ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি তাৎপর্যপূর্ণ বিধিনিষেধ আরোপ করবে। কিন্তু ভাইরাসটির বিস্তার ঠেকানো ও জীবন রক্ষায় এটিই সবচেয়ে ভালো ব্যবস্থা। তিনি সহানুভূতিপূর্ণও ছিলেন : প্লিজ, দৃঢ় থাকুন, সদয় থাকুন এবং কোভিড-১৯-এর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকুন।
তারপর লিবারেল আর্ডেন হাত মিলিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ার কনজারভেটিভ প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসনের সাথে তাদের দ্বীপপুঞ্জ থেকে ভাইরাসটি দূর করতে যৌথ উদ্যোগ গ্রহণ করতে।

আরো যেসব দেশ দ্রুত ও দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিল রোগটি দূর করতে ও জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে তাদের মধ্যে রয়েছেন এশিয়ার দক্ষিণ কোরিয়া ও তাইওয়ান, ইউরোপের জার্মানি, গ্রিস ও আইসল্যান্ড। বিশ্বের জাতীয় নেতাদের মধ্যে সংখ্যালঘু হিসেবে বিরাজমান নারীরা তাদের মধ্যে সবচেয়ে কার্যকর ও সংশয়হীনভাবে কাজ করেছেন।
আর্ডেনের মতো জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেল শুরুতেই ও শান্তভাবে জার্মানদের হুঁশিয়ার করে বলেছিলেন যে তাদের অনেকে করোনাভাইরাসের শিকার হতে পারেন এবং তাদের দ্রুত পরীক্ষা করা হবে। একইভাবে তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইঙ-ওয়েন নতুন বিপদের লক্ষণ দেয়ামাত্র সাড়া দিয়ে ভাইরাসটিকে নিয়ন্ত্রণে রাখেন। এর ফলে তিনি যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে মিলিয়ন মিলিয়ন মাস্ক পাঠাতে সক্ষম হন। আইসল্যান্ডে প্রধানমন্ত্রী কাট্রিন জ্যাকোবসডোটির সবার জন্য বিনা মূল্যে করোনাভাইরাস পরীক্ষার ব্যবস্থা করেন, শনাক্তকরণ ব্যবস্থার আয়োজন করেন।
ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী মেত্তে ফ্রেডেরিকসেন, ফিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্র সানা মারিন (৩৪ বছর বয়সী, বিশ্বের তরুণতম নেতাদের অন্যতম) ও নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী আর্না সোলবার্গ (তারাও নারী) সঙ্কট মোকাবিলায় দক্ষতার জন্য দেশে ও বিদেশে প্রশংসা কুড়িয়েছেন।

বিস্ময়ও রয়েছে। সবচেয়ে বড়টি সুইডেনে। দেশটি প্রায় পুরোপুরি স্বাভাবিক ছিল। বয়স্কদের বাসায় থাকতে বলা হয় এবং তরুণদের সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়। তাদের উদ্যোগ ছিল অন্যান্য দেশের চেয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন। এতে সফলতা পাওয়া যায় কিনা তা দেখার বিষয়।
মহামারিতে ইউরোপের মধ্য সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ইতালি। আইনবিদ গুইসেপে কঁতে ছিলেন অ্যান্টি-এস্টাবলিশমেন্ট পার্টিগুলোর এক তালগোল পাকানো জোটের প্রধান। কিন্তু তিনি অনেক নিয়মতান্ত্রিক সরকার প্রধান হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছেন। কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ ও জনগণের পরিচর্যায় তিনি নিবেদিতপ্রাণ ভূমিকা গ্রহণ করেছেন।

গ্রিসকে বিবেচনা করা হয় ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সবচেয়ে দুর্বল দেশ। কিন্তু এই দেশটি করোনার মোকাবিলায় প্রত্যাশার চেয়ে ভালো করেছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী কিরিয়াকোস মিতসোতাকিস দারুণ সক্ষমতা প্রদর্শন করেছেন।
যেসব নেতা তাদের জনগণের শ্রদ্ধা ও মনোযোগ আকর্ষণ করতে পেরেছেন, যারা রোগটির প্রভাব হ্রাস করতে সফল হয়েছেন তারা সবাই নির্দিষ্ট কিছু বৈশিষ্ট্যের অধিকারী।
তারা দ্রুততার সাথে সাহসী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন, এমনকি রাজনৈতিক ঝুঁকি পর্যন্ত গ্রহণ করেছেন। এই সঙ্কটে তারা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র প্রকাশ করেছেন। প্রমাণ হয়েছে যে চীনের মহামারিটি গোপন করার চেষ্টা কিংবা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দীর্ঘ সময় পর্যন্ত অবজ্ঞা করা ছিল বিপর্যয়কর। অন্যদিকে আর্ডেনের ঘোষণা ছিল, কঠোর হতে হবে, দ্রুত কাজ করতে হবে।

কার্যকর নেতৃত্বের অন্যান্য উপাদানের মধ্যে রয়েছে বিজ্ঞানের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞঅপন, স্বচ্ছতার বার্তা দেয়া, বাস্তব অবস্থা সম্পর্কে সার্বক্ষণিক হালনাগাদ থাকা, আর্থিক সহায়তার আশ্বাস প্রদান করা। অবশ্য তারা যে অবস্থা থেকে ওঠে এসেছেন, সেটাও এতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। মেরকেল ছিলেন বিজ্ঞানী, আয়ারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী লিও ভারাদকার চিকিৎসক। ফলে তারা খুব সহজেই পরিস্থিতি অনুধাবন করে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পেরেছেন।
আবার রাজনীতি, অর্থনীতি ও বিজ্ঞানের ঊর্ধ্বেও কিছু ছিল। সহানুভূতির মতো উপাদানগুলো ছাড়া জনসাধারণের মধ্যে থাকা ভয়, নিরাপত্তাহীনতা থেকে রক্ষা করা যেত না। মেরকেলের কথাই বলা যায়। ইউরোপের নেতাদের মধ্যে তিনি সবচেয়ে কম চটকদার, ক্যারিশমেটিক বা সাবলীল। কিন্তু তার ভদ্রতা নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলতে পারে না। তাই তার টেলিভিশনে ‘নিজের যত্ন নিন, প্রিয়জনের যত্ন নিন’ বলার মধ্যে গাম্ভীর্যতা আর আন্তরিকতাই ফুটে ওঠে।

সূত্র : নিউ ইয়র্ক টাইমস


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us