ভারতের জাতিসঙ্ঘ ভ্রান্তি
ভারতের জাতিসঙ্ঘ ভ্রান্তি - সংগৃহীত
জাতিসঙ্ঘ হলো গত শতকের চল্লিশের দশকে বসে ‘আমেরিকান সেঞ্চুরি কায়েম’- এমন এক হবু দুনিয়া সম্পর্কে আমেরিকার স্বপ্ন, আইডিয়া ও ইমাজিনেশনের প্রকাশ; আর বিশেষ করে তা ব্যক্তি হিসেবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট রুজভেল্টের আইডিয়া। আর ইউরোপের সাথে এই আইডিয়ার সম্পর্ক হলো- ইউরোপ এর সাথে একমত হয়ে গেলে, মানে রুজভেল্টকে নেতা মেনে নিলে হিটলারের হাতে বেঘোরে মারা যাওয়া এবং সমূলে ধ্বংসের হাত থেকে বেঁচে যাওয়ার একটা পথ হতে পারে। এ কারণে জাতিসঙ্ঘ জন্মের প্রধান তাৎপর্য হলো, মার্কিন নেতা ফ্রাঙ্কলিন রুজভেল্টের সাহায্য পাওয়ার লোভে ইউরোপ হিটলারকে পরাজিত করার পরবর্তী দুনিয়াতে নিজেদের কলোনি দখল-ব্যবসা ত্যাগ করবে, এই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।
কিন্তু জওয়াহের লাল নেহরুসহ ভারতীয় রাজনীতিবিদরা না এই ফ্যাক্টস জেনেছিলেন বা এর তাৎপর্য বুঝেছিলেন। এ নিয়ে এখনো কোনো মহলের স্টাডি আছে বলে জানা যায় না। তবে অজানা থাকার বড় প্রমাণটা হলো- ভারতের এখনো কাশ্মিরকে ভারতের বলে দাবি করার ভিত্তি তদানীন্তন রাজা হরি সিংয়ের স্বাক্ষর, তিনি অ্যাকসেশন (ভারতে অন্তর্ভুক্তি হতে দলিলে স্বাক্ষর) চুক্তিতে স্বাক্ষর দেয়া। জাতিসঙ্ঘের গঠনভিত্তি যে নীতি বা বাক্যের ওপরে দাঁড়ানো সে মূলনীতি অনুসারে, রাজা হরি সিংয়ের স্বাক্ষর মূল্যহীন বা কাশ্মিরের হয়ে কথা বলার আসল বা বৈধ কোনো অথরিটিই তিনি নন। কারণ, নীতি অনুসারে- যেকোনো ভূখণ্ডের বাসিন্দা জনগোষ্ঠী সম্মিলিত মতামতই একমাত্র অথরিটি যারা বৈধ প্রতিনিধি হিসেবে নির্ধারণ করবে তারা কিভাবে শাসিত হতে চান, কোথায় যুক্ত হতে চান অথবা আলাদা থাকতে চান কিনা।
সার কথাটা হলো- কলোনিমুক্তিতে ১৯৪৭ সালে জন্ম থেকেই ভারত জাতিসঙ্ঘের ভিত্তিনীতি জানে না বা সে অনুসারে আমল করেনি। তাই, ১৯৪৮ সাল থেকে কাশ্মির দখল করে আছে অথচ প্রধানমন্ত্রী নেহরু নিজেই জাতিসঙ্ঘের কাছে মীমাংসা করে দিতে ইস্যুটা নিয়ে গিয়েছিলেন। অথচ জাতিসঙ্ঘ নিজের জন্মভিত্তি অনুসারে কাশ্মির ইস্যু মীমাংসার জন্য গণভোট করার রায় দিয়েছিল। অর্থাৎ, জাতিসঙ্ঘ যে এমন রায়ই তো দেবে, নেহরু এটা জানতেনই না। মানে জাতিসঙ্ঘের জন্মনীতি তার জানা ছিল না বলেই তো তিনি জাতিসঙ্ঘে গিয়েছিলেন। সেই থেকে জাতিসঙ্ঘ সংক্রান্ত ‘বুঝাবুঝি’ সারা ভারতের একাডেমিক, রাজনীতিবিদসহ সবার কাছে ‘নিজের চায়ের কাপ নয়’ হয়ে আছে। অর্থাৎ, কথিত দেশপ্রেম যেটা আসলে হিন্দু-জাতিপ্রেমে হাবুডুবু খাওয়া, গড়াগড়িতে ডুবে আছে বা বলা যায়, সব চিন্তাভাবনা তলায় চাপা পড়ে আছে। কারণ জাতিসঙ্ঘের ভিত্তি বুঝতে গেলে নিজ দেশের কাশ্মির নীতি ভুল এবং তা জাতিসঙ্ঘের মূল নীতিবিরোধী বলে অবস্থান নিতে হবে।
মজার কথা হলো- ওই জাতিসঙ্ঘেরই স্থায়ী ভেটো সদস্যপদ লাভের জন্য ভারত প্রবল আকাঙ্ক্ষী। যত তীব্র তার আকাঙ্ক্ষা, ততই তীব্র ও গভীর তার অজানা হলো- ভেটো সদস্যপদ পাওয়া যায় কী করে! জাতিসঙ্ঘের জন্মের সময় ওই পাঁচ রাষ্ট্র তা পেয়েছিলই বা কী করে, তা কখনো জানা হয়নি।