দীর্ঘ সময় পিপিই ব্যবহারে ক্ষতির মুখে চিকিৎসাকর্মীরা!
পিপিই - সংগৃহীত
করোনাভাইরাস রোগীর চিকিৎসা করার সময় যে পার্সোনাল প্রোটেকটিভ ইকুইপমেন্ট (personal protective equipment বা PPE) ব্যবহার করেন ডাক্তার, নার্স, ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী – যেমন মাস্ক, গগলস, মুখের ঢাল বা ফেস শিল্ড, এবং সুরক্ষা প্রদানকারী গাউন – তা থেকে জখম হতে পারে চামড়া। এর ফলে নানাবিধ সংক্রমণের শিকার হতে পারেন এই চিকিৎসা কর্মীরা। চীনা গবেষকদের একটি দল সম্প্রতি এই তথ্য জানিয়েছে, যা প্রকাশিত হয়েছে মেরি অ্যান লিবার্ট সংস্থা দ্বারা প্রকাশিত ‘অ্যাডভানসেস ইন উন্ড কেয়ার’ শীর্ষক মাসিক পত্রিকায়।
সর্বমোট ১৬১টি হাসপাতালে কর্মরত ৪,৩০৬ জন চিকিৎসাকর্মী অংশগ্রহণ করেছেন এই গবেষণায়। এদের সকলেই দৈনিক আট থেকে ১২ ঘণ্টা পিপিই ব্যবহার করছেন। এই কর্মীদের ৪২.৮ শতাংশ জানিয়েছেন, পিপিই ব্যবহার করার ফলে তাদের চামড়া গুরুতর জখম হয়েছে, বলছে সমীক্ষা। এর ফলে বিভিন্ন সংক্রমণের বর্ধিত ঝুঁকির দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে গবেষকরা লিখেছেন, “চিকিৎসা কর্মীদের মধ্যে চামড়ার ক্ষতি গুরুতর পর্যায়ের, এবং প্রতিরোধ ও চিকিৎসার যথেষ্ট ব্যবস্থা নেই।”
প্রধানত তিন রকমের পিপিই জনিত চামড়ার ক্ষতি চিহ্নিত করেছেন গবেষকরা : পিপিই-র চাপ থেকে সৃষ্ট ‘প্রেশার ইনজুরি’; আর্দ্রতা জনিত চামড়ার ক্ষতি; চামড়া উঠে যাওয়া বা কেটে যাওয়া।
কোভিড-১৯ আঘাত হানতে পারে ঘ্রাণশক্তিতেও?
এ সপ্তাহের গোড়ায় মার্কিন সংস্থা সিডিসি কোভিড ১৯-এর উপসর্গে ঘ্রাণ বা স্বাদের হানির প্রসঙ্গ যুক্ত করেছে। বেশ কিছু রোগের ক্ষেত্রে ঘ্রাণশক্তিহানি পরিচিত উপসর্গ হলেও শ্রবণশক্তি বা দৃষ্টিশক্তিহ্রাসের মতো তত সাধারণও নয়, এবং রোগীরা এ ব্যাপারে জ্বর বা গায়ে ব্যথার পরে উপলব্ধি করে থাকেন।
সিডিসি কী বলেছে?
তাদের বক্তব্য, “কোভিড ১৯-এর ব্যাপক উপসর্গ রয়েছে তা মৃদু থেকে মারাত্মক অসুস্থতা হতে পারে। ভাইরাস সংক্রমণের ২-১৪ দিন পর উপসর্গ দেখা দিতে পারে। এ ধরনের উপসর্গের সঙ্গে কাশি বা শ্বাসকষ্ট থাকলে তা কোভিড ১৯ হতে পারে।”
“ভ্যাকসিন তৈরির আগে আন্তর্জাতিক স্তরে লভ্যতার চুক্তি হওয়া উচিত”
এরই সঙ্গে তালিকায় যুক্ত করা হয়েছে, জ্বর, ঠান্ডা বোধ, ঠান্ডায় কাঁপুনি, পেশিতে ব্যথা, মাথাব্যথা, গলা ব্যথা এবং স্বাদ বা ঘ্রাণশক্তির নতুন করে হ্রাস পাওয়া। এর মধ্যে দুই বা তার বেশি উপসর্গ থাকলে ওই ব্যক্তির কোভিড-১৯ হতে পারে বলে জানাচ্ছে সিডিসি।
ঘ্রাণশক্তি হ্রাস গুরুত্বপূর্ণ কেন?
ইএনটি সহ বিভিন্ন বিশেষজ্ঞরা বেশ কিছুদিন ধরেই একে উপসর্গের তালিকায় যুক্ত করতে বলছেন।
কাঁপুনি ম্যালেরিয়ার মত আরও বেশ কিছু সংক্রমণের উপসর্গ, পেশীতে ব্যথা বা গায়ে ব্যথা সাধারণ সর্দিজ্বরের সঙ্গে যুক্ত। এসব কারণে স্বাস্থ্য বিশারদরা বারবার বলছেন উপসর্গ দেখে কোভিড-১৯ ও সাধারণ সর্দিজ্বরের মধ্যে তফাৎ করা যাচ্ছে না।
ঘ্রাণশক্তি হ্রাস তুলনায় কম পরিলক্ষিত হওয়া উপসর্গ। জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ও কাশি, জ্বর, শ্বাসের সমস্যা, পেশির ব্যথা, গলায় ব্যথা, ডায়েরিয়া, মাথা ব্যথা ও ক্লান্তিবোধরে সঙ্গে কারণহীন ঘ্রাণশক্তি ও স্বাদের হ্রাসপ্রাপ্তির কথা উল্লেখ করেছে।
এর বহু উপসর্গই বিভিন্ন আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সংস্থার উপসর্গ তালিকায় রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, কোভিড-১৯-এর সবচেয়ে পরিচিত উপসর্গ হল জ্বর, শুকনো কাশি, এবং ক্লান্তিবোধ। কোনো কোনো রোগীর ব্যথা, নাক বন্ধ হওয়া, গলায় ব্যথা ও ডায়েরিয়া হতে পারে। এগুলো সামান্য উপসর্গ এবং ক্রমে শুরু হয়।
মানুষের ঘ্রাণশক্তি নষ্ট হয় কেন?
খুব ঠান্ডা লাগলে নাক বন্ধ হয়ে যায়। মেয়ো ক্লিনিক বলছে “ঠান্ডায় নাক বন্ধ হয়ে গেলে আংশিক অস্থায়ী ঘ্রাণশক্তি হ্রাস সাধারণ ব্যাপার। ৬০ বছর বয়সের পর ঘ্রাণশক্তি কমে আসা অস্বাভাবিক নয়।”
ঘ্রাণশক্তি স্বাদেরই একটি অংশ, ফলে খাদ্যে অরুচির সঙ্গে এর যোগ রয়েছে। সে কারণেই ঠান্ডা লাগলে আমরা খাবারে স্বাদ পাই না।
২০১৭ সালে নেদারল্যান্ডসের গবেষকদের জার্নাল অফ কেমিক্যাল সেন্সেস-এ লেখা হয়েছিল, ঘ্রাণশক্তি হ্রাস ৩ থেকে ২০ শতাংশ জনগণের মধ্যে দেখা দিতে পারে। এর সঙ্গে বয়সবৃদ্ধি, কর্নিক নাকের রোগ, মাথায় ব্যাপক ট্রমা, ঊর্ধ্বশ্বাসনালী সংক্রমণ ইত্যাদি বহু রকমের বিষয় রয়েছে।
পার্কিনসনস, অ্যালঝেইমার্সের মত অন্যান্য রোগেও এই উপসর্গ দেখা যায়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তা স্থায়ী রূপ নেয়।
সূত্র : ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস