এত অসহায় অবস্থায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা
করুণ অবস্থা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের - সংগৃহীত
করোনার এ সঙ্কটকালে মাসের নিয়মিত বেতনভাতা না পেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক হাজার শিক্ষক-কর্মচারী। শিক্ষকদের কেউ কেউ গত মার্চ মাসের আংশিক বেতন পেলেও এপ্রিলের বেতন দেয়া হবে না এমন আগাম ঘোষণাও দিয়েছে অনেক প্রতিষ্ঠান। বিকল্প আয়ের অন্য কোনো সংস্থান না থাকায় অনেক শিক্ষক-কর্মচারী পড়েছেন বিপাকে। পরিবার-পরিজন নিয়ে তারা এখন চোখে মুখে অন্ধকার দেখছেন। দেশের এ সঙ্কটের মুহূর্তে আংশিক বেতনে যারা চাকরি করবেন না তাদেরকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগপত্রও জমা দিতে চাপ দেয়া হচ্ছে। আবার অনেক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শিক্ষক-কর্মচারীদের বাধ্যতামূলক চাকরিচ্যুতির হুমকি দেয়ারও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে (ইউজিসি) ইতোমধ্যে এ ধরনের আটটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে বলেও সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। তবে অভিযুক্ত এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকপক্ষের সাথে উদ্ভূত সমস্যা নিয়ে আলোচনা চলছে বিধায় এখনি তাদের নাম প্রকাশ করছে না ইউজিসি।
ইউজিসি’র সূত্র জানায়, আর্থিকভাবে সচ্ছল; কিন্তু তারপরেও কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় করোনা সঙ্কটের এই সুযোগ নিয়ে শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মাসের নিয়মিত বেতনভাতাও দিচ্ছে না। মার্চ মাসের আংশিক বেতন দিলেও চলতি এপ্রিল মাসের বেতন তারা দিতে পারবেন না এ কথা শিক্ষকদের আগেই জানিয়ে দিয়েছেন। যারা বেতনের জন্য বেশি চাপ দিচ্ছেন তাদের কাছ থেকে কৌশলে অগ্রিম ইস্তফাপত্র নিয়ে রাখছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। আবার কিছু শিক্ষক-কর্মচারীকে আগের বেতনের চেয়ে অর্ধেক বেতন প্রস্তাব করে চাকরি নিয়মিত করারও প্রস্তাব দেয়া হচ্ছে।
সূত্র জানায়, ইউজিসি’র কাছে শিক্ষকদের বেতনভাতা দিচ্ছে না এমন আটটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা পড়েছে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে নারায়ণগঞ্জে ক্যাম্পাস রয়েছে এমন একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শিক্ষকদের কাছ থেকে অগ্রিম ইস্তফাপত্র (রিজাইন) নিয়ে রাখারও অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া রাজধানীর শুক্রাবাদে অবস্থিত ক্যাম্পাস রয়েছে এমন একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মার্চ মাসের আংশিক বেতন দিলেও এপ্রিলের বেতন না দেয়ার ঘোষণার অভিযোগ রয়েছে। বনানীতে ক্যাম্পাস রয়েছে এমন দু’টি বিশ্ববিদ্যালয় ইতোমধ্যে শিক্ষকদের জন্য ‘নো ক্লাসÑ নো পে’ ঘোষণা দিয়েছে। পরিস্থিতির উন্নতি না হলে আগামী সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত যদি ক্যাম্পাস বন্ধ রাখতে হয়ে তাহলে এ সময়ে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতনভাতা নিয়মিত দিতে পারবেন না বলে অঘোষিতভাবে আগাম জানিয়ে দেয়া হয়েছে।
উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা এম এইচ মোবারক গতকাল নয়া দিগন্তকে জানান, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের তালিকাভুক্ত ও অনুমোদনপ্রাপ্ত বাংলাদেশে মোট বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ১০৫টি। দেশের বর্তমান করোনা পরিস্থিতি দিনকে দিন খারাপের দিকেই যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে বেশি সঙ্কটে রয়েছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীরা। বিকল্প কোনো আয়ের পথ না থাকায় তারা পড়েছেন বিপাকে। তিনি আরো জানান, দেশের এই অবস্থায় সরকারের পক্ষ থেকে যদি কোনো আর্থিক প্রণোদনার ব্যবস্থা না নেয়া হয় তবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের লাখ লাখ শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী মানবেতর জীবন কাটানো ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না।
এ দিকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির সভাপতি শেখ কবির হোসেন নয়া দিগন্তকে জানান, দেশের এই ক্রান্তিকালে গুটিকয়েক বিশ্ববিদ্যালয়ের হয়তো আর্থিক সামর্থ্য বা সচ্ছলতা আছে, তারা হয়তো বেতন দিতে পারে। তবে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের বেতনভাতা দেয়ার আর্থিক সচ্ছলতা নেই। বিশেষ করে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো, যাদের প্রতিষ্ঠার কেবল কয়েক বছর হয়েছে, এসব বিশ্ববিদ্যালয় খুবই সঙ্কটে রয়েছে। এ ছাড়াও অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের মাসিক বাড়িভাড়াও দিতে সমস্যা হচ্ছে। তাই অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাসের পুরো বেতন দেয়া সম্ভব হয়নি। তবে বেতন কাটার কথা যেটা বলা হচ্ছে, এটা সঠিক নয়। পরিস্থিতি বিবেচনা করেই বর্তমান সঙ্কটের এ সময়টাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরিরত সবার সাথে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে যতটুকু বেতন দেয়া সম্ভব, সেটি সমন্বয় করে চালিয়ে নেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।
ইউজিসি’র পরিচালক ড. মো: ফখরুল ইসলাম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতনভাতা না দেয়ার বিষয়ে আসা অভিযোগের বিষয়ে জানান, আমাদের কাছে যে রিপোর্ট আছে তাতে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতনভাতা না দেয়ার অবস্থায় কোনো বিশ্ববিদ্যালয় নেই। কমপক্ষে আগামী এক বছর শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনভাতা দেয়ার মতো আর্থিক সঙ্গতি প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়েরই আছে। দেশের সঙ্কটময় মুহূর্তে কেন তারা বেতনভাতা আটকে দিচ্ছেন এটা বোধগম্য নয়। কেননা ইউজিসি’র কাছে প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানের আর্থিক যে বিবরণী জমা রয়েছে সেখানে কোনো প্রতিষ্ঠানকেই দুর্বল মনে করার কোনো সুযোগ নেই। তারপরও আমরা সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকপক্ষ ও পরিচালনা পরিষদের সাথে আলোচনা করছি। ইউজিসি আইনের মধ্যে থেকে অবশ্যই সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে, যাতে কোনো প্রতিষ্ঠান তাদের শিক্ষক-কর্মকর্তা বা কর্মচারীর এক মাসের বেতনও কর্তন বা বকেয়া না রাখে।