চীনের নতুন উদ্বেগ উপসর্গহীন আক্রান্তদের নিয়ে
চীনের নতুন উদ্বেগ উপসর্গহীন আক্রান্তদের নিয়ে - সংগৃহীত
দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে বলে বারবার দাবি করছে চীন সরকার। মারণ ভাইরাস মোকাবিলায় এই সাফল্যকে ‘কৌশলগত জয়’ বলে উল্লেখও করেছেন প্রেসিডেন্ট জি জিনপিং। কিন্তু এরই মধ্যে চীনের চিন্তা বাড়িয়েছে উপসর্গহীন করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। ন্যাশনাল হেলথ কমিশন জানিয়েছে, শুক্রবার এই ধরনের ২৫টি ঘটনা সামনে এসেছে। সবমিলিয়ে এখন দেশে উপসর্গহীন করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৯৮১। এদের মধ্যে ৬৩১ জন হুবেই প্রদেশ এবং তার রাজধানী উহানের বাসিন্দা। কিন্তু, গত ২৭ দিনে হুবেইতে নতুন কোনো করোনা আক্রান্তের খোঁজ মেলেনি। কিন্তু, উপসর্গহীন আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুত বেড়ে চলায় উদ্বিগ্ন স্থানীয় প্রশাসন। এদিকে, শুক্রবার ন্যাশনাল হেলথ কমিশন জানিয়েছে, গোটা দেশে মাত্র ছ’জন নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। তবে কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি। এখন পর্যন্ত চীনে মোট করোনা পজিটিভ রোগীর সংখ্যা ৮২ হাজার ৮৭৪। প্রাণ হারিয়েছেন ৪ হাজার ৬৩৩ জন।
এদিকে, কোনো ব্যক্তিকে মারণ ভাইরাস কাবু করতে পারবে কি না, তা নিশ্চিত করতে এক বিশেষ ধরনের অ্যান্টিবডি টেস্টের কিট তৈরি করছেন গবেষকরা। ‘ল্যাটারাল ফ্লো ইমিউনোএসে’ (এলএফএ) প্রক্রিয়ায় কাজ করবে ওই কিট। গবেষকদের দাবি, অনেকে করোনা আক্রান্ত হলেও উপসর্গ না থাকায়, তা বাইরে থেকে বোঝা যাচ্ছে না। সেক্ষেত্রে এই কিট অত্যন্ত কার্যকরী হবে। অন্যান্য পরীক্ষায় নেগেটিভ রিপোর্ট এলেও এই প্রক্রিয়া দ্রুত ও যথাযথ ফল পাওয়া যাবে। যা করোনা মোকাবিলায় অত্যন্ত কার্যকরী হতে পারে।
গোটা বিশ্বে করোনায় মৃতের সংখ্যা প্রতিদিন বেড়েই চলেছে। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, শুক্রবার পর্যন্ত ৩৩ লাখ ৩৬ হাজার ৬৪৬ জন প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে ২ লাখ ৩৫ হাজার ২৪৪ জনের। মার্কিন মুলুকেও মৃত্যুমিছিল অব্যাহত। গত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে ২ হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। সবমিলিয়ে মৃতের সংখ্যা প্রায় ৬৪ হাজারে পৌঁছতে চলেছে। আক্রান্তের সংখ্যা ১০ লাখ ৯৭ হাজার ছাড়িয়েছে। আমেরিকার মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা নিউ ইয়র্কের। শুক্রবার পর্যন্ত সেখানে প্রাণ হারিয়েছেন ২৩ হাজার ৭৮০ জন। পাশাপাশি, টেক্সাসেও আক্রান্তের সংখ্যা এক ধাক্কায় অনেকটাই বেড়েছে। মার্চ মাসে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পর এই প্রথম একদিনে টেক্সাসে ৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে। তা সত্ত্বেও আমেরিকার দ্বিতীয় বৃহত্তম এই প্রদেশের গভর্নর গ্রেগ অ্যাবট লকডাউন শিথিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
এদিকে, শুধু আমেরিকা নয়, বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্র লকডাউন শিথিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। খেলার মাঠ, চার্চ, মিউজিয়াম, চিড়িয়াখানা খোলার অনুমতি দিয়েছে জার্মান সরকার। তবে, রেস্তরাঁ, হোটেল খোলা হবে কি না, সেই ব্যাপারে আপাতত কোনো সিদ্ধান্ত নেননি চ্যান্সেলার অ্যাঞ্জেলা মার্কেল। শুক্রবার ১৬টি প্রদেশের গভর্নরদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন তিনি। সেখানেই লকডাউন শিথিল করার ব্যাপারে একাধিক সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, জার্মানিতে মোট ১ লাখ ৬২ হাজার মানুষ করোনার শিকার হয়েছিলেন। প্রাণ হারিয়েছে ৬ হাজার ৪৬৭ জন।
মালয়েশিয়াও সোমবার থেকে একাধিক আর্থিক ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শেষ কয়েক সপ্তাহ দেশে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বেশ খানিকটা কমেছে। তারপরই লকডাউন ধীরে ধীরে শিথিল করার ব্যাপারে সায় দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মহিউদ্দিন ইয়াসিন। তার কথায়, ‘লকডাউনের ফলে প্রায় দেশীয় অর্থনীতিতে ১৪.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ক্ষতি হয়েছে। এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে রেস্তরাঁসহ একাধিক ব্যবসা শুরু করার অনুমতি দেয়া হয়েছে। কিন্তু, প্রত্যেককে সমস্ত স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলতে হবে।’
জাপান অবশ্য দেশে জরুরি অবস্থার মেয়াদ এক মাস বাড়িয়েছে। করোনা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে টাস্ক ফোর্স গঠন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে। কমিটি রিপোর্ট দিয়ে জানিয়েছে, সংক্রমণের মাত্রা কিছুটা কমেছে। কিন্তু, এখনই বিধিনিষেধ তুলে নিলে এক ধাক্কায় আক্রান্তের সংখ্যা অনেকটাই বেড়ে যাবে। তাই পরিস্থিতিতে নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে জরুরি অবস্থা জারি রাখা দরকার। যদিও, বহু মানুষ সরকারি বিধিনিষেধ মানছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে।
অন্যদিকে, দক্ষিণ কোরিয়ায় নতুন করে ৯ জনের আক্রান্ত হওয়ার খবর মিলেছে। সবমিলিয়ে সেদেশে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১০ হাজার ৭৭৪। মৃত্যু হয়েছে ২৪৮ জনের। দক্ষিণ কোরিয়া যেভাবে মারণ ভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করেছে, এদিন তার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন জাতিসঙ্ঘের প্রধান আন্তোনিও গুতেইরেস। তিনি বলেন, আমি আশা করব বিশ্বের অন্যান্য দেশ কোরিয়াকে অনুসরণ করে করোনা মোকাবিলায় সাফল্য পাবে।
এদিকে, পাকিস্তানের ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির স্পিকার আসাদ কোয়াসেরও করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। মারণ ভাইরাস সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে ইমরান খান প্রশাসন। শুক্রবারও সেখানে ৯৯০ জনের করোনা পজিটিভ ধরা পড়েছে। শেষ ২৪ ঘণ্টায় ২৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। সবমিলিয়ে দেশে মৃতের সংখ্যা ৩৮৫-তে পৌঁছে গেল। সেই সঙ্গে আক্রান্ত প্রায় ১৭ হাজারের বেশি মানুষ।
রাশিয়াতেও আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। শুক্রবারও প্রায় ৮ হাজার মানুষ নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন। সার্বিকভাবে আক্রান্তের সংখ্য ১ লাখ ১৪ হাজার ৪৩১-এ পৌঁছেছে। মৃত্যু হয়েছে ১ হাজার ১৬৯ জনের। সিঙ্গাপুরেও প্রতিদিন শত শত মানুষ মারণ করোনার শিকার হচ্ছেন। এক দিনে সেখানে ৯৩২ জন নতুন করে আক্রান্ত হয়েছে। এদের মধ্যে বিদেশি শ্রমিকদের সংখ্যাই বেশি তাই তাদের ঘরে থাকার মেয়াদ বৃদ্ধি করেছে প্রশাসন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে খবর, দেশে আক্রান্তের সংখ্য ১৭ হাজার ছাড়িয়েছে।
সূত্র : বর্তমান