নিউ ইয়র্কে এক বাংলাদেশী চিকিৎসক সপরিবারে করোনায় আক্রান্ত হয়েও যেভাবে চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন
ডা. কাজী আশরাফ মোস্তফা - সংগৃহীত
বিদেশের মাটিতে হাজারো বাংলাদেশী বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেশের নাম উজ্জল করে চলেছেন। যাদের কথা প্রায়শ অজানাই থেকে যায়। তেমনই একজন নিউইয়র্ক প্রবাসী ডা. কাজী আশরাফ মোস্তফা। করোনায় আক্রান্তদের সেবা দিতে গিয়ে স্ত্রী ও এক মেয়েসহ তিনিও আক্রান্ত হন করোনায়।
নিউইয়র্কে প্রবাসী এই যোদ্ধা বর্তমানে করোনার ডেঞ্জার জোন হিসেবে পরিচিত নিউইয়র্কের ব্রুকলিন ওয়ান হসপিটাল সেন্টারের কোভিড-১৯ ইউনিটে করোনা আক্রান্ত রোগীদের সেবা দিচ্ছেন তিনি। প্রতিদিন ১৪ থেকে ১৫ ঘন্টা সেবা দিচ্ছেন তারা। নেই কোনো সাপ্তাহিক ছুটি।
নিরাপত্তার স্বার্থে নার্স ও ডাক্তারদের পরিবারের সদস্যরা অন্যত্র বসবাস করার নিয়ম। কিন্তু বিশেষ পরিস্থিতির কারণে ডা. আশরাফকে থাকতে হচ্ছে পরিবারের সাথেই। এতে তিনি নিজে, তার স্ত্রী ও এক মেয়ের দেহে করোনা উপসর্গ দেখা দেয়। যদিও বর্তমানে তারা সকলেই এখন সুস্থ হয়ে উঠেছেন।
নিজের শরীরে করোনার উপসর্গ ও গৃহিত পদক্ষেপ সম্পর্কে ডা.আশরাফ মোস্তফা বলেন, ডায়রিয়া, জ্বর ও শরীর ব্যথা হয়েছিল। উপসর্গগুলো তিন সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। স্ত্রীর বেলায় মারাত্মক স্কিন ডিজিস বা চর্ম রোগ দেখা দিয়েছিলো। এ সময় তিনি প্রচুর পরিমাণে আদা, লেবুর শরবত আর গরম পানি পান করেছেন। সাথে ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলেছেন।
তিনি জানান, আগে অধিকাংশ করোনা রোগী প্রচন্ড জ্বর নিয়ে এলেও এখন নতুন আসা অনেকেই কেবল ভেতর থেকে শীত শীত অনুভব করছেন বলে জানাচ্ছেন। তবে পরীক্ষা করে দেখা যাচ্ছে বাইরে কোনো জ্বরের আলামত নেই। অন্যান্য উপসর্গের মধ্যে- আক্রান্তরা গন্ধহীন অনুভব করছেন, খাবারে রুচি পাচ্ছেন না, সেই সাথে মারাত্মক কফসহ বুকে প্রচণ্ড চাপ অনুভূত হচ্ছে।
ডা. আশরাফ জানালেন, কর্মরত ডাক্তার ও নার্সরা এতটাই উচ্চ মাত্রার ঝুঁকিতে আছে যে, এ পর্যন্ত তার তিনজন সহকর্মী মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। যার মধ্যে দুজনের ভেন্টিলেটরে নেয়ার মতো অবস্থা হয়েছিল।
কোভিড-১৯ আক্রান্তে অনেকের ফুসফুস এতটাই আক্রান্ত হয় যে আর্টিফিশিয়াল ভেন্টিলেইশন বা কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাস দিতে হয়। এমন রোগীদের ৯০ ভাগই আর বেঁচে উঠতে পারেন না বলে জানান ডা. আশরাফ।
কোভিড-১৯ ইউনিটে কাজ করতে গিয়ে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে করোনার উপসর্গ যেমন ভিন্ন ভিন্ন তেমনি সৃষ্ট সংক্রমণও ভিন্ন। মাল্টি অরগ্যান ফেইলিউর হচ্ছে। অর্থাৎ কারো ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে ফুসফুস কাজ করছে না, কখনো কিডনিতে আক্রান্ত হচ্ছে, আবার কিছু ক্ষেত্রে ভাইরাসটি অনেক রোগীর ব্রেইন স্ট্রোকেরও কারণ হচ্ছে। এসব ক্ষেত্রে ডাক্তাররা অসহায় অনুভব করছেন। করোনা ইউনিটে কাজ করার আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো প্রচণ্ড স্ট্রেস বা চাপের মধ্যে থাকতে হয়।
করোনার উপসর্গ থাকলে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ, লবণ মিশ্রিত হালকা গরম পানি পান, ডায়রিয়া হলে জিংক টেবলেট, শরীরের ইলেক্ট্রোলাইট যাতে লস না হয় সেজন্য প্রচুর পরিমাণ লেবুর শরবত খাওয়ার দরকার বলে মনে করেন এই চিকিৎসক।
ডা. কাজী আশরাফ সিলেটের জকিগঞ্জের সন্তান। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে আসার আগে রংপুর মেডিকেল কলেজ থেকে শিক্ষা জীবন শেষ করেন। দেশে থাকাকালীন সিলেট উইমেন্স মেডিকেল কলেজ ও সিলেট ইবনে সিনা হাসপাতালে কিছুদিন দায়িত্ব পালন করেন।