কতটুকু অসুস্থতায় সিয়াম পালনে ছাড়?
কতটুকু অসুস্থতায় সিয়াম পালনে ছাড়? - সংগৃহীত
আজ মাহে রমজানের সপ্তম দিবস। পবিত্র মাসের প্রথম জুমাবার হওয়ায় আজকের দিনটির গুরুত্ব ও মূল্য আরো বেশি। জুমার দিন উম্মতে মুহাম্মাদির জন্য সাপ্তাহিক ঈদের দিন। সক্ষম প্রত্যেক নর-নারীর জন্য এ মাসের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত রোজা রাখা ফরজ। যারা অক্ষম তাদের অবকাশ দেয়া হয়েছে রোজা না রাখার। তবে সক্ষমতা ফিরে আসার পর ছাড় যাওয়া রোজাগুলো আদায় করতে হবে। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি এ মাস প্রত্যক্ষ করবে, তাকে এতে রোজা রাখতে হবে। আর যে ব্যক্তি অসুস্থ হয়, কিংবা সফরে থাকে সে অন্যান্য দিন থেকে এ সংখ্যা পূরণ করবে। (সূরা বাকারা, আয়াত ১৮৫)
এখানে রমজান মাসে রোজা না রাখার দু’টি কারণ উল্লেখ করা হয়েছেÑ অসুস্থতা ও সফর। অসুস্থ ব্যক্তির যদি রোজা রাখতে খুব কষ্ট হয়, কিংবা রোজা রাখার কারণে তার রোগের মাত্রা বেড়ে মারাত্মক পর্যায়ে চলে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে, তা হলে তার রোজা না রাখার অনুমতি আছে। কেননা মানুষের ওপর তাদের সাধ্যের বাইরে দায় চাপানো আল্লাহর নিয়মের খেলাপ। মানুষের সাধ্য অনুযায়ী তাদের ওপর কর্তব্য আরোপ করা হয়। কুরআন মজিদের সূরা বাকারার ২৮৬ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছেÑ আল্লাহ কোনো প্রাণীর ওপর তার সাধ্যের বাইরে দায়িত্ব আরোপ করেন না।
সুতরাং রুগ্ণ ব্যক্তির কষ্ট বা রোগ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কার ক্ষেত্রে রমজান মাসে রোজা না রাখার অবকাশ রয়েছে। তবে এ অবকাশ সাময়িকÑ স্থায়ীভাবে দায়মুক্তি নয়। যখন সুস্থতা ফিরে আসবে বা আশঙ্কা কেটে যাবে, তখন বাদ যাওয়া দিনগুলোর রোজা অবশ্যই আদায় করতে হবে।
কিন্তু অসুস্থ মারাত্মক কি না বা রোজা রাখার কারণে রোগ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে কি না তা নির্ণয় করার দু’টি মানদণ্ড রয়েছে। প্রথমত, ব্যক্তির ভারসাম্যপূর্ণ মনোবৃত্তি। আলসেমি, উদাসীনতা ও গুরুত্বহীনতা যার চরিত্রে নেই, মাহে রমজানে সিয়াম পালনের আবশ্যিকতা ও অপরিহার্যতা সম্পর্কে যার পূর্ণ সচেতনতা রয়েছে, পাশাপাশি অতি উৎসাহ ও অতিরঞ্জন যার মধ্যে নেই, এমন ব্যক্তি নিজেই উপলব্ধি করতে পারেন সিয়াম পালন তার জন্য কষ্টকর কি না। আবার রোজা না রাখা তার জন্য শিথিলতার পর্যায়ে পড়ে কি না। একজন মুমিনের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য শৈথিল্য ও আতিশয্যের মাঝামাঝি অবস্থা বা ভারসাম্য।
কষ্ট ও সক্ষমতার মাত্রা নির্ণয় করবে একজন ভারসাম্যপূর্ণ মুমিনের বিবেক। এ জন্য প্রথম প্রয়োজন দ্বীনি ইলম। শরিয়তের বিধিনিষেধ যার কাছে পরিষ্কার, অবস্থা ও পরিবেশের ভিন্নতার কারণে আদেশ ও নির্দেশ পালনের রীতি ও পদ্ধতির ব্যাপকতা যিনি ভালোভাবে অবগত, তার পক্ষেই প্রয়োজনের সময়ে সঠিক বিষয় উপলব্ধি করা সম্ভব।
দ্বিতীয় প্রয়োজন নৈতিকতা ও চরিত্র গঠনের দীক্ষা। যোগ্য ওস্তাদের কাছে দীক্ষা গ্রহণের মাধ্যমেই গঠিত হয় সুন্দর চরিত্র। রাসূলে পাক সা: ইরশাদ করেছেন আমি শিক্ষক হিসেবে প্রেরিত হয়েছি। তার দীক্ষায় ও লালনে গড়ে উঠেছিল সবচেয়ে নির্মল চরিত্রের একটি জনগোষ্ঠী যারা সাহাবায়ে কেরাম হিসেবে পরিচিত।
অসুস্থতা ও অক্ষমতা নির্ণয়ের দ্বিতীয় মানদণ্ড চিকিৎসা ও শরীরবিদ্যায় বিশেজ্ঞদের অভিমত। যিনি দীর্ঘ সময়ের পানাহার সংযমের শারীরিক প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে সবিস্তার জ্ঞান রাখেন, দেহযন্ত্রের গতিপ্রকৃতি ও প্রক্রিয়া ভালোভাবে অবহিত, তার পরামর্শ ও অভিমতের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। তবে আল্লাহর হুকুম মেনে চলার বাধ্যবাধকতা ও অপরিহার্যতা সম্পর্কে অবহিত থাকতে হবে চিকিৎসককে। তাহলেই তার অভিমতের গুরুত্ব থাকবে। এ জন্য ফিকাহর কিতাবগুলোতে ঈমানদার চিকিৎসকের অভিমত বিবেচনার কথা বলা হয়েছে। অসুস্থ ব্যক্তিদের তালিকায় রয়েছে দুই শ্রেণীর নারী। গর্ভবতী ও দুধ দানকারিণী মা। রোজা রাখার কারণে মায়ের বা গর্ভের শিশুর ক্ষতির আশঙ্কা থাকলে রোজা না রাখার অনুমতি রয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রেও যোগ্য ঈমানদার চিকিৎসকের অভিমত বিবেচনায় রাখতে হবে। তেমনি দীর্ঘ সময় পানাহার বর্জনের কারণে দুগ্ধপোষ্য শিশুর খাদ্য ঘাটতির আশঙ্কা থাকলে এবং বিকল্প খাদ্যের ব্যবস্থা না থাকলে সেই মায়ের জন্য রোজা না রাখার অনুমতি রয়েছে।