পাকিস্তানের নতুন মিডগেট সাবমেরিন : ভারতের জন্য আতঙ্ক!
মিডগেট সাবমেরিন - সংগৃহীত
পাকিস্তানের সাবমেরিন বাহিনীতে বড় ধরনের আধুনিকায়ন হচ্ছে। গত ৫ বছরে পাকিস্তান তার সাবমেরিন বাহিনীকে আধুনিকায়ন করার জন্য চীন ও তুরস্কের সাথে দুটি বড় সাবমেরিন চুক্তি করেছে।
পাকিস্তান ২০১৫ সালে আটটি হাঙর (টাইপ ০৪২ ইয়ুন-ক্লাস) সাবমেরিন কেনা অনুমোদন করে। এতে পাকিস্তানের কাছে চীনা প্রযুক্তি হস্তান্তরের অংশ হিসেবে করাচি শিপইয়ার্ডে সেগুলো নির্মাণের ব্যবস্থা রাখা হয়।
এরপর ২০১৬ সালে পাকিস্তান তুরস্কভিত্তিক অস্ত্র নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান এসটিএমের সাথে ৩৫০ মিলিয়ন ডলারের আগস্তা ৯০বি সাবমেরিন আধুনিকায়ন প্রকল্প করে। মজার ব্যাপার হলো, পাকিস্তান এই প্রথমবারের মতো কোনো সাবমেরিন প্রকল্পে প্রধান ঠিকাদার হিসেবে কোনো তুর্কি কোম্পানিকে নির্বাচিত করল। এই প্রকল্পের আওতায় এসটিএম পাকিস্তান নৌবাহিনীকে নক্সা ও প্রকৌশল পরিষেবা প্রদান করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
চীন ও তুরস্কের সাথে সাবমেরিন চুক্তি পাকিস্তান নৌবাহিনীর জন্য বড় ধরনের গেম চেঞ্জার হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এছাড়া পাকিস্তান এখন তার নৌবাহিনীর জন্য নতুন মিডগেট সাবমেরিন নির্মাণ করার দিকে নজর দিয়েছে।
পাকিস্তানের স্পেশাল সার্ভিস গ্রুপ (নেভি) গোপন ও প্রকাশ্য অপারেশনে কসমস এমজি১১০ মিডগেট ব্যবহার করছে। এসব সাবমেরিন ১৯৯০-এর দশকের প্রথম দিক থেকে ব্যবহার করা হচ্ছে এবং এগুলোর সার্ভিস আয়ু শেষের পথে।
এসব পুরনো সাবমেরিন প্রতিস্থাপনের জন্য পাকিস্তান নতুন মিডগেট সাবমেরিন নির্মাণেল প্রস্তাব করেছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ইয়ার বুক ২০১৫-১৬ অনুযায়ী পাকিস্তান ২০১৭-১৮ সময়কালে মিডগেট সাবমেরিন নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নেয়। এগুলো দেশীয়ভাবে নক্সা করা হবে, উৎপাদন করা হবে বলেও ধরা হয়।
উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক এক স্যাটেলাইট চিত্রে পাকিস্তান তার পরিকল্পনা অনুযায়ী একটি নতুন মিডগেট সাবমেরিন তৈরী করেছে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে।
২০১৬ সাল থেকে সাবমেরিনটি আংশিকভাবে ঢেকে রাখা হচ্ছিল। আর ২০১৯ সাল থেকে সাবমেরিনটি পুরোপুরি দেখা যাচ্ছে। এতে বোঝা যাচ্ছে, নির্মাণকাজ প্রায় শেষ এবং সাগরে ট্রায়াল শুরু হতে পারে।
এই নতুন মিডগেট সাবমেরিনের আরব সাগর ও যুদ্ধে সম্ভাব্য কী ভূমিকা পালন করতে পারে, তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়ে গেছে।
স্যাটেলাইট থেকে দেখা ছবিতে মিডগেট সাবমেরিনটির দৈর্ঘ প্রায় ৫৫ ফুট (১৬.৭ মিটার), এর বিম প্রায ৮ ফুট (২.৪৩ মিটার)। বর্তমানে এর অবস্থান কোথায়, তা জানা যাচ্ছে না।
একেবারে আটসাটো করে নির্মাণ করায় সাবমেরিনটি সহজেই পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ করা যাবে। আকারের কারণে একে সড়কপথেও পরিবহন করা যাবে।
পাকিস্তান ও তুরস্কের মধ্যকার বর্তমান পর্যায়ের সহযোগিতার আলোকে এই সম্ভাবনা নাকচ করে দেয়া যায় না যে এই মিডগেট সাবমেরিনটি নির্মাণে তুরস্ক সহায়তা করেছিল।
মিডগেট সাবমেরিনের ভূমিকা
পাকিস্তান অনেক বছর ধরে মিডগেট সাবমেরিন ব্যবহার করছে। নতুনটি কেবল তাদের দেশীয় সক্ষমতাই প্রকাশ করছে। তাছাড়া তারা যে পানির নিচের যুদ্ধেও সক্ষমতা গড়ে তুলছে, সেটাও প্রকাশ পাচ্ছে।
ধারণা করা হচ্ছে, ভারতের সাথে যেকোনো সঙ্ঘাতের ক্ষেত্রে মিডগেট সাবমেরিন আক্রমণাত্মক ভূমিকা পালন করবে।
ভারতের সাথে ১৯৭১ সালের যুদ্ধের পর থেকেই পাকিস্তান নৌবাহিনীর জন্য অন্যতম চ্যালেঞ্জ হরো করাচির সমুদ্রসীমা রক্ষা করা। সাগরবাহিত আক্রমণ থেকে করাচি বন্দরকে রক্ষার কাজে মিডগেট সাবমেরিন শূন্যতা পূরণ করতে পারে। এছাড়া ফ্রগমেন অপারেশন, মাইন স্থাপন ইত্যাদি কাজেও অংশ নিতে পারে।
আবার আগস্তা ৯০বি সাবমেরিন মধ্যমেয়াদি আধুনিকায়ন শেষে চলতি বছরই নৌবাহিনীতে যোগ দিবে। আর হাঙর সাবমেরিনের প্রথম চারটি পাওয়া যাবে ২০২৩ সালে। এতে করে ভারত মহাসাগরে পাকিস্তানের সক্ষমতা অনেকাংশে বেড়ে যাবে।
সংক্ষেপে বলা যায়, পাকিস্তান সাবমেরিন বাহিনীতে আধুনিকায়ন আরব সাগরে ভারতের নিরাপত্তার জন্য প্রকৃত নিরাপত্তা হুমকি সৃষ্টি করবে। ভারতের সাবেমিরিনবিরোধী যুদ্ধ (এএসডব্লিউ) সক্ষমতা সৃষ্টির প্রস্তুতির প্রেক্ষাপটে পাকিস্তানের নতুন মিডগেট সাবমেরিন আরব সাগরে ভারতের সামুদ্রিক অপারেশনকে চ্যালেঞ্জ করতে পারে।
অধিকন্তু, পাকিস্তান তার মিডগেট সাবমেরিনকে ভারতের পশ্চিম উপকূলে, বিশেষ করে গুজরাটের স্যার ক্রিক এলাকা ও মুম্বাইয়েত গোপন অভিযান সম্প্রসারণে ব্যবহার করতে পারে।
তাই আরব সাগরে পাকিস্তানের অ্যান্টি-অ্যাকসেস সক্ষমতা ভণ্ডুল করে দেয়া এবং এই অঞ্চলে ভারতের সামুদ্রিক নিরাপত্তার স্বার্থ সুরক্ষিত রাখার জন্য সাবসারফেস ডিকেটশন ও ট্র্যাক সক্ষমতা বাড়ানো ভারতের জন্য খুবই দরকারি বিষয়।
দি ডিপ্লোম্যাট