ধান কর্তন রঙ্গ : কাঁচাই কাটছেন এমপি; সেজেগুজে নারী এমপির পোজ
ধান কর্তন রঙ্গ - সংগৃহীত
ধান ক্ষেতে নেমে কৃষকের কাঁচা ধান কাটছেন সরকারদলীয় এক এমপি। রাস্তার পাশে কোটি টাকার গাড়ি এবং পুলিশ প্রটোকল রেখে জুতাসহ ক্ষেতে নামেন এক প্রতিমন্ত্রী। দামি শাড়িসহ সেজেগুজে ধান কাটছেন আরেক মহিলা এমপি। চোখে দামি সানগ্লাস লাগিয়ে ধানক্ষেতে কৃষকের পাশে দাঁড়িয়ে পোজ দিচ্ছেন সাবেক ওই মহিলা এমপি। ফেসবুক ও ইউটিউবসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এরকম ভিডিও এবং ছবি বেশ ভাইরাল হচ্ছে। এসব ছবি ও ভিডিওতে নানা তীর্যক মন্তব্য করছেন নেটিজেনরা। বাদ যাচ্ছেন না ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরাও। তারা এটিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহ্বানকে তাচ্ছিল্য এবং গরিব কৃষকের সাথে তামাশা বলে অভিহিত করছেন।
করোনায় পরিবহন এবং শ্রমিক সঙ্কটে ধানকাটা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন সারা দেশের ধান চাষিরা। ধান কাটতে এসব চাষিদের পাশে থাকার জন্য দলীয় নেতাকর্মীদের আহবান জানান আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর এমন আহ্বানে সাড়া দিয়ে সারাদেশে কৃষকদের সাথে মাঠে নামেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। বিভিন্ন এলাকায় কৃষকের ধান কেটে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে প্রশংসা কুড়ায় ছাত্রলীগ। বিপদগ্রস্ত কৃষকের ধানকাটায় সারা দেশের জন্য হটলাইন চালু করে কৃষক লীগ। এসব উদ্যোগ কিছুটা হলেও কৃষকদের স্বস্তি দেয়।
এ দিকে করোনায় কৃষকদের পুঁজি করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতা-মন্ত্রী-এমপিরা। রীতিমতো ফটোসেশনের প্রতিযোগিতা চলছে তাদের মধ্যে। ফটোসেশনের এসব ফটো এবং ভিডিও বিভিন্ন সামাজিকমাধ্যমে তারাই শেয়ার করছেন নিজ সমর্থকদের দিয়ে। যা নিয়ে বিতর্কের এখন শেষ নেই। তবে, এভাবে কৃষকের ধান কেটে দেয়ার ফটোসেশন করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছেন টাঙ্গাইল-২ (গোপালপুর-ভূঞাপুর) আসনের সংসদ সদস্য তানভীর হাসান মনির। ভিডিওতে তিনি যে জমির ধান কেটেছেন, তা ছিল অনেকটাই কাঁচাধান। ধানের পাতা ও গোছা ছিল সবুজ রঙের।
এমপির সঙ্গে থাকা গোপালপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম তালুকদার সুরুজও কয়েক গোছা ধান কেটে ফটোসেশন করেন। আর তাদের সঙ্গী কয়েক তরুণ ধান কাটার সেই দৃশ্য মোবাইল ফোনে ভিডিওবন্দী করেন। এক তরুণকে ওই ভিডিওতে ধারাভাষ্য দিতেও শোনা যায়।
এ কারণে ধান কাটার ওই ছবি এবং ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পরই শুরু হয়ে যায় সমালোচনার ঝড়। অসংখ্য মানুষ ধান কাটার এই ঘটনাকে তামাশা এবং কৃষকদের সঙ্গে প্রহসন বলে অভিহত করেন। আর এই ভিডিও নিয়ে হাসি-ঠাট্টা ও ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ তো আছেই।
এ দিকে ব্যাপক সমালোচনার মুখে এমপি তানভীর হাসান মনির আত্মপক্ষ সমর্থন করে বলেন, তিনি মূলত পাকা ধানই কেটেছেন। কিন্তু কিছু মানুষ বিষয়টি নিয়ে গুজব ছড়িয়েছে। এটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও গুজব।
পুলিশ প্রটোকল নিয়ে রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় পাশের ধান ক্ষেতে জুতাসহ নেমে পড়েন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক। পরে কাঁদার মধ্যে জুতা হাতে নিয়ে কয়েক গোছা ধান কাটেন তিনি। তার এ ধান কাটার দৃশ্য ভিডিও করেন তারই এক কর্মী। এর আগে রিকশা চালিয়ে এলাকায় আরেকবার তিনি আলোচনায় আসেন।
একইভাবে চোখে সানগ্লাস আর দামি শাড়ি পড়ে সেজেগুজে ধান কাটার পোজ দেন সরকারদলীয় মহিলা এমপি হোসনে আরা। সরকার দলীয় সাবেক এক মহিলা এমপিকেও পুলিশ পাহারায় ধানক্ষেতে পোজ দিতে দেখা যায়। এসব নিয়ে ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিকমাধ্যমে এখন সমালোচনার ঝড় বইছে। সমালোচনা চলছে দলের বিভিন্ন ফোরামেও। বিষয়টিকে কৃষকদের সাথে তামাশা বলে অভিহিত করছেন খোদ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। তাদের মতে, দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য তাদের এই চেষ্টা, যারা পোজ না দিয়ে মন থেকে কৃষকের পাশে দাঁড়িয়েছেন তাদের সেই সুনামকে ম্লান করে দিয়েছে।