মৃত্যুর আগে নেপোলিয়নের কী হয়েছিল?

গোলাপ মুনীর | Apr 28, 2020 05:27 pm
মৃত্যুর আগে নেপোলিয়নের কী হয়েছিল?

মৃত্যুর আগে নেপোলিয়নের কী হয়েছিল? - সংগৃহীত

 

১৮২০ সালের শরৎকাল। নেপোলিয়নের স্বাস্থ্য ভলো যাচ্ছে না। পেটে প্রচণ্ড ব্যথা। শরীর দুর্বল। সাথে বমি বমি ভাব। মনে হলো, তিনি ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকেই এগিয়ে যাচ্ছেন। নেপোলিয়নের চিকিৎসকেরা যখন হাডসন লাউই’র কাছে এ কথা জানান তখন হাডসন তা উড়িয়ে দিয়ে বলেন, এসব ইংরেজদের অপপ্রচার। দু’জন চিকিৎক অবশ্য বলেছিলেন, নেপোলিয়ন হেপাটাইটিসে আক্রান্ত, সেই সাথে আছে আমাশয়। হাডসন সে কথাও কানে তোলেননি।

এর আগে ১৮১৯ সালে নেপোলিয়নের বিশ্বস্ত অনুসারী চিপরিয়ানি কর্সিকান অসুস্থ হয়ে মারা যান। একইভাবে মারা যান লংউড হাউসের আরো দুই ভৃত্য। পরিস্থিতি ছিল রহস্যজনক। দ্রুত এই তিনজনের অসুস্থ হয়ে পড়া ও মারা যাওয়ায় মনে করা হয় তাদের ওপরও বিষ প্রয়োগ করা হয়েছিল। নেপোলিয়ন আভাস দিয়েছিলেন, তিনিও এমনটি সন্দেহ করছেন। এবং তিনি আশঙ্কা করছেন, তিনি হতে পারেন এদের টার্গেট। ১৮২১ সালে নেপোলিয়নের স্বাস্থ্যের আরো অবনতি ঘটে। এবং মাসজুড়ে প্রচণ্ড পেটব্যথায় ভুগে ৫ এপ্রিল মারা যান। লাশের ময়নাতদন্ত করেন ডাক্তার অ্যান্টোমার্কি ও আরো পাঁচ ইংরেজ ডাক্তার। তাদের বক্তব্য হচ্ছে, তার মৃত্যু পাকস্থলীর ক্যান্সারে। তার বাবাও ১৭৮৫ কালে একই রোগে মারা যান। তখন কিছু দ্বান্দ্বিক পর্যবেক্ষণ প্রকাশ করা হয়। বিশেষ করে তার লিভারের আকার ও অবস্থা নিয়ে বিতর্ক ওঠে। একজন ইংরেজ ডাক্তার বললেন, তার মৃত্যু হেপাটাইটিস-সহ পেটের অসুখে। কিন্তু ময়নাতদন্ত রিপোর্টের অংশবিশেষ হাডসন লাউই মুছে ফেলেন। নেপোলিয়নের শরীরে তুলনামূলক কম লোম ও তার নারীদের মতো নরম দেহের বিষয়টিও রিপোর্টে উল্লিখিত হয়।
মৃত্যুর পরদিন ইংলিশ গ্যারিসন পূর্ণ সামরিক মর্যাদায় লংউডের অদূরে একটি কবরে নেপোলিয়নকে সমাহিত করে। তাকে রাখা হয় চারটি কফিনে। একটি মেহগনি কাঠের কফিনে রাখা হয় তার লাশ।

এ কফিনটি রাখা হয় আরেকটি মেহগনির কফিনে। এ দু’টি কফিন রাখা হয় আরেকটি সিসার কফিনে। এরপর এই তিনটি কফিন পুরে দেয়া হয় অন্য আরেকটি সিসার কফিনে। এমনকি কবর থেকেও যেন পালাতে না পারে। কবরে পাশে কোনো হেডস্টোন স্থাপন করা হয়নি। কারণ তার পরিবার চায়নি তিনি শুধু নেপোলিয়ন বোনাপার্ট নামে পরিচিত হোন। আর লাউই রাজি হননি তার হেডস্টোনে ‘এম্পারার নেপোলিয়ন’ কথা লেখা থাকুক। এর ১৯ বছর পর ১৮৪০ সালে নেপোলিয়নের কবর খোলা হলো। এ সময় সেখানে ছিলেন এমন কয়েকজন, যারা তার সাথে নির্বাসনে ছিলেন। দেখা গেল, তার দেহ অবিশ্বাস্যভাবে সংরক্ষিত। কফিনের খিলগুলো আবার বন্ধ করে দেয়া হলো। নেপোলিয়নের লাশ ফিরিয়ে নেয়া হলো প্যারিসে। সেখানে তার লাশ রাখা হলো গির্জার সুরম্য এক গম্বুজের নিচে। সেটি আজ পরিচিত ‘নেপোলিয়ন টম্ব’ নামে। তার লাশ আজো সেখানেই আছে। সেটি আজ পর্যটকদের এক আকর্ষণে পরিণত।

মৃত্যুর কারণ কোন রোগ?
কিছু কর্তৃপক্ষ এটি মেনে নিয়েছে যে, নেপোলিয়ন ক্যান্সারে মারা গেছেন। ২০০৩ সালে ফ্রান্সের কিছু জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত লেখায় নানা সমীক্ষার কথা উল্লেখ করে এ কথা বলা হয়। তবে সবাই তা মেনে নেয়নি। তার মতো আর কোনো ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বের মেডিক্যাল রিপোর্ট এতটা খতিয়ে দেখা হয়নি। বলা হয়, নেপোলিয়ন নানা জটিলতায় ভুগছিলেন। যুদ্ধে পরাজয়ের কারণে তিনি শিকার হয়েছিলেন হেমোরয়েডসের। পাঁচড়া ছাড়াও তার ছিল দীর্ঘমেয়াদি চর্মরোগ নিউরোডারমিটিটিস, রেগে যাওয়ার রোগ, মাইগ্রেন ও প্রস্রাবের জ্বালা সৃষ্টিকারী রোগ ডাইসুরিয়া। ১৯৬৬ সালে একটি মেডিক্যাল জার্নালে প্রকাশিত এক লেখায় উল্লেখ করা হয়, এসব রোগের জের হিসেবে তিনি প্যারাসাইটিক রোগ সিসটোসোমিয়াসিসে ভুগছিলেন। ১৭৯৮ সালে মিসর অভিযানের সময় তার এ রোগ দেখা দেয়। এসব রোগের পর বিষ প্রয়োগের তত্ত্ব তো আছেই।

 


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us