জোসেফাইনকে কেন তালাক দিয়েছিলেন নেপোলিয়ন?
জোসেফাইনকে কেন তালাক দিয়েছিলেন নেপোলিয়ন? - সংগৃহীত
নেপোলিয়ন ছিলেন একজন বলদর্পী মানুষ। শৌর্যবীর্য বিবেচনায় তার সাথে শুধু তুলনা চলে মহাবীর আলেক্সান্ডারের কিংবা জুলিয়াস সিজারের। এমনটি কি ভাবা যায়, তার মতো একজন শক্তিধর মানুষ একদম গতানুগতিক নীরসভাবে দক্ষিণ আটলান্টিকের এক পরিত্যক্ত দ্বীপে পাকস্থলীর ক্যান্সারে মারা গেছেন। বরং ওয়াটারলুর যুদ্ধেই তার মৃত্যু হওয়াটা ছিল স্বাভাবিক। কিংবা তিনি খুন হতে পারতেন কোনো ঈর্ষাপরায়ণ বিদ্রোহীর হাতে। শত্রুর কাছে আত্মসমর্পণের চেয়ে শত্রুর তলোয়ারের নিচে জীবন দেয়াই ছিল তার জন্য স্বাভাবিক। কিন্তু আমরা শুনছি, কার্যত দেড় দশকের মতো সময় বীরদর্পে ইউরোপ শাসন করে যাওয়া নেপোলিয়ন একটি পুরোপুরি সিক্ত আধা-সেঁকা অন্ধকার এক ঘরে নির্বাসিত অবস্থায় ধীরে ধীরে নিস্তেজ বিবর্ণ হয়ে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে গেছেন। এরপর একসময় মারা গেছেন। অন্তত নেপোলিয়নের বেলায় এমনটি অভাবনীয়, সেই সাথে অকল্পনীয়।
আমরা ইতিহাসের মামুলি কোনো চরিত্র নিয়ে কথা বলছি না। বলছি তুখোড় সামরিক ব্যক্তিত্ব, স্বৈরশাসক, প্রশাসক ও আইনপ্রণেতা নেপোলিয়নের কথা। ফরাসি বিপ্লবের শেষপর্যায়ে তিনি ছিলেন একজন সামরিক ও রাজনৈতিক নেতা। প্রথম নেপোলিয়ন হিসেবে তিনি ফ্রান্সের সম্রাট ছিলেন ১৮০৪ সাল থেকে ১৮১৫ সাল পর্যন্ত। তার আইনি সংস্কার ‘নেপোলিয়নিক কোড’ বিশ্বব্যাপী দেওয়ানি আইনব্যবস্থায় ব্যাপক প্রভাব ফেলে। কিন্তু তিনি তার চেয়েও বিখ্যাত ছিলেন সেই সব যুদ্ধের জন্য, যেগুলো তিনি লড়েছিলেন কয়েকটি জোটের বিরুদ্ধে। এগুলো ইতিহাসে পরিচিত নেপোলিয়নের যুদ্ধ নামে। এসব যুদ্ধের মাধ্যমে নেপোলিয়ন ইউরোপের বেশির ভাগ অঞ্চলে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এক ধরনের হেজেমনি তথা কর্তৃত্বপরায়ণতা।
নেপোলিয়নের জন্ম ভূমধ্যসাগরের দ্বীপ কর্সিকায়। দ্বীপটির বর্তমান অবস্থান পশ্চিম ইতালিতে, ফ্রান্সের মূল ভূখণ্ডের দক্ষিণ-পূর্বে, ইতালির সার্বভৌম দ্বীপ সার্দিনিয়ার উত্তরে। নেপোলিয়ন অভিজাত ঘরের সন্তান। নেপোলিয়নের বাবা-মায়ের আট সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয়। তার বাবা কার্লো বোনাপার্ট ছিলেন একজন অ্যাটর্নি। ১৭৭৭ সালে তাকে ফ্রান্সের ষোড়শ লুইয়ের কোর্টে কর্সিকার প্রতিনিধি ঘোষণা করা হয়। মা লেটিজিয়ার প্রভাবই বেশি ছিল নেপোলিয়নের ওপর। নেপোলিয়নের বড় ভাই জুসেফ। ছোট তিন ভাই যথাক্রমে লুসিন, লুই ও জেরোম। আর ছোট তিন বোন এলিসা, পলিন ও কেরোলিন। জোসেফের আগে তার এক ভাই ও এক বোনের জন্ম হয়েছিল। এরা মারা যান ছোটবেলায়।
নেপোলিয়নের প্রথম দিকের জীবন কাটে সামরিক কর্মকাণ্ডে এবং তার বিধ্বস্ত পরিবারের দেখাশোনার পেছনে। তার পরও তিনি সময় করে নিয়েছিলেন এক বুর্জোয়া তরুণী ডিজেরি ক্যারিকে ভালোবাসার। ক্যারির পরিবারের সিল্কের ব্যবসায় ছিল মার্সিলিসে। ক্যারির পরিবার ছিল এই বিয়ের বিরুদ্ধে। ফলে তাদের বিয়ে হয়নি। কয়েক বছর পর তার বিয়ে হয় নেপোলিয়নের এক মার্শালের সাথে, এবং জীবনাবসান ঘটে সুইডেনের রানী হিসেবে। এ দিকে নেপোলিয়ন জেনারেল হওয়ার পর ১৭৯৬ সালে বিয়ে করেন সুন্দরী জোসেফাইন ডি বিউহারনাইসকে। তখন জোসেফাইনের বয়স ২৬। কিন্তু তার গর্ভে কোনো পুত্রসন্তান হয়নি। নেপোলিয়ন প্রবলভাবে উত্তরাধিকার হিসেবে পুত্রসন্তান কামনা করেছিলেন। এ কারণে ১৮০৯ সালে জোসেফইনকে তালাক দেন। এবং ১৮১০ সালে বিয়ে করেন স্বর্ণকেশী তরুণী অস্ট্রিয়ার সম্রাটকন্যা মারিয়া লুইসাকে।
নেপোলিয়নের ছিল এক পুত্র : দ্বিতীয় নেপোলিয়ন। তার জন্ম ১৮১১ সালে। মাত্র ২১ বছর বয়সে যক্ষ্মা রোগে তিনি মারা যান ১৮৩২ সালে। নেপোলিয়নের বৈধ কোনো কন্যা ছিল না। তবে তার প্রথম স্ত্রী জোসেফাইনের প্রথম স্বামীর ঘরের এক বৈপিত্রেয় কন্যা ছিল। তার নাম হরটেনসি। নেপোলিয়নের কিছু অবৈধ সন্তানও ছিল। এর মধ্যে দুই অবৈধ সন্তানের কথা তিনি স্বীকার করেছেন।